Sylhet Today 24 PRINT

বিচ্ছিন্ন মৌলভীবাজার, পানিবন্দি ৩ লাখ মানুষ

মৌলভীবাজার প্রতিনিধি |  ১৭ জুন, ২০১৮

উজান থেকে নেমে আসা পানি এবং টানা চার দিনের বৃষ্টিতে মৌলভীবাজারের মনু নদ এবং ধলাই নদীর প্রতিরক্ষা বাঁধ ভেঙে উপজেলা সংযোগ সড়ক প্লাবিত হওয়ায় কার্যত বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে মৌলভীবাজার। বিভাগীয় শহর সিলেটের সাথে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন। নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হওয়ায় ৩ লাখের উপর মানুষ পানি বন্দি অবস্থায় দিন কাটাচ্ছে।

গত রাতে মনু নদের বড়হাট এলাকার ভাঙন দিয়ে পৌর শহরে প্রবেশ করেছে পানি, ভাঙন এলাকা থেকে শহরের কুসুমবাগ পয়েন্ট পর্যন্ত পানির নিচে। শহরের চারটি ওয়ার্ড ও পার্শ্ববর্তী এলাকার পাঁচটি ইউনিয়নের মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। এসব এলাকায় ৪ থেকে ৫ ফুট পর্যন্ত পানি নিচে তলিয়ে গেছে। নাজুক অবস্থায় পড়েছেন শিশু ও বৃদ্ধরা। বাসা বাড়িতে পানি ঢুকে একাকার হয়ে গেছে। সারা শহরের ড্রেনে ঢুকে পড়েছে মনু নদের পানি। কিছু কিছু জায়গায় ড্রেনে জ্যাম লেগে পানি উপচে উঠছে স্থানীয়রা, পৌরসভা ড্রেনের পানি প্রবাহ সচল রাখতে কাজ করছেন।

জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে মৌলভীবাজার সরকারী কলেজ, মৌলভীবাজার সরকারী মহিলা কলেজ, প্রাইমারি টিচার্স ইনস্টিটিউট, পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট, টেকনিক্যাল স্কুল এন্ড কলেজ এই পাঁচটি স্থানকে আশ্রয় কেন্দ্র হিসেবে ঘোষনা করা হয়েছে।

রোববার দুপুরে জেলা প্রশাসকের সভাপতিত্বে দূর্যোগ ব্যবস্থাপনা সংক্রান্ত জেলা কমিটি'র বিশেষ সভা অনুষ্ঠিত হয়। এই সভা শেষে জানানো হয়, জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে এ পর্যন্ত ৪১ টি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে এবং ৫৩৯০ জনকে উদ্ধার করে আশ্রয়কেন্দ্রে নেয়া হয়েছে। মোট ৭৪টি সার্বক্ষণিক মেডিকেল টিম নিয়োগ করা হয়েছে।

জেলা প্রশাসক তোফায়েল ইসলাম জানিয়েছেন, শহরে পাঁচটি আশ্রয়কেন্দ্র চালু করা হয়েছে। সেখানে মানুষ আশ্রয় নিচ্ছেন। উপজেলাগুলোতে ত্রাণ বিতরণ করা হচ্ছে।

রাজনগরের কদমহাটায় সড়কে পানি উঠায় জেলার সাথে রাজনগর, জুড়ি, কুলাউড়া, বড়লেখা উপজেলা সাথে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন আছে।

অন্যদিকে কমলগঞ্জ উপজেলার সাথে সংযোগ সড়কের কয়েকটি যায়গায় পানি উঠায় যোগাযোগ বিচ্ছিন রয়েছে।

সদর উপজেলার পৌর এলাকায় পানি প্রবেশ করে পানিতে ডুবে যাওয়ায় সিলেটের সাথে যোগাযোগও বিচ্ছিন্ন।

পানি উন্নয়ন বোর্ড জানিয়েছে ধলাই নদীর পানি স্বাভাবিক অবস্থায় আছে এবং মনু নদের পানি গত কালের বিপদসীমারর ১৮০ সেন্টিমিটার থেকে কমে আজ ১৫৪ সেন্টিমিটারে পৌছেছে।

নদীর পানি কমলেও লোকালয়ে পানি বাড়ছে। জেলার কুলাউড়া, রাজনগর ও কমলগঞ্জ উপজেলার বন্যা পরিস্থিতি অবনতি হয়েছে । ঘরবাড়ি, দোকানপাট, স্কুল কলেজ ও গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় এখনও পানি রয়েছে। সব মিলিয়ে মৌলভীবাজারে প্রায় দেড়শত গ্রাম বন্যা কবলিত। সরজমিনে কুলাউড়ার হাজিপুর ইউনিয়নে গিয়ে দেখা যায় শুধু এই একটি মাত্র ইউনিয়নের ৪২ গ্রাম সম্পর্ন প্লাবিত হয়েছে।

জেলাব্যাপি গত ৪ দিনে ৫ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। এখন পর্যন্ত নিখোঁজ আছেন আরো ৩ জন। পানির স্রোতে পরে এদের মৃত্যু হয় বলে নিশ্চিত করেছে প্রশাসন।

জেলাব্যাপী সেনাবাহিনী বন্যার্তদের সহযোগিতায় কাজ করছে। এ দিকে ঘর বাড়ি ফেলে নিরাপদ আশ্রয়ে যাওয়া মানুষ জন আতংকে আছেন চোর ডাকাতের, রাজনগরসহ কয়েকটি এলাকায় চুরি অভিযোগ পাওয়া গেছে এ ব্যপারে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (কুলাউড়া সার্কেল) আবু ইউসুফ জানিয়েছেন, সেনাবাহিনীসহ সবার সাথে সমন্নয় করে কাজ করছেন পুলিশ, নিরাপত্তায় রয়েছে সতর্ক অবস্থায়।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী রনেন্দ্র শংকর চক্রবর্তী পার্থ জানিয়েছেনে, ধলাই নদী ও মনু নদের পানি দ্রুত কমছে, নদ নদীর পানি কমেলে লোকালয় থেকেও পানি নেমে যাবে।

টুডে মিডিয়া গ্রুপ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
[email protected] ☎ ৮৮ ০১৭ ১৪৩৪ ৯৩৯৩
৭/ডি-১ (৭ম তলা), ব্লু ওয়াটার শপিং সিটি,
জিন্দাবাজার, সিলেট - ৩১০০, বাংলাদেশ।
Developed By - IT Lab Solutions Ltd.