Sylhet Today 24 PRINT

বন্যায় মৌলভীবাজারে ক্ষয়ক্ষতি হাজার কোটি টাকা ছাড়াতে পারে

মৌলভীবাজার প্রতিনিধি |  ২৪ জুন, ২০১৮

মৌলভীবাজারে প্লাবিত এলাকা থেকে নেমে গেছে পানি। পানি নামার সাথে দৃশ্যমান হচ্ছে ক্ষয়ক্ষতি। সরকারী ভাবে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ হিসেব করতে আরো ৪/৫ দিন লাগবে বলে জানিয়েছে জেলা প্রশাসকের কার্যালয় তবে জেলাব্যাপি বন্যাকবলিত এলাকায় ঘুরে জানা গেছে এই ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে।

জেলা প্রশাসকের তথ্য মতে বন্যায় ৫৪ হাজার পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সে অনুপাতে ধারনা করা হচ্ছে জেলার ৫ হাজার ঘরবাড়ি ক্ষেত্র বিশেষে আংশিক বা পূর্ণাঙ্গ নষ্ট হয়ে গেছে। এখনো সঠিক হিসেব করা যায়নি এবং আরো ৪/৫ দিন সময় লাগবে বলে জানিয়েছেন মৌলভীবাজার জেলা প্রশাসক তোফায়েল ইসলাম।

শুধু কমলগঞ্জ উপজেলায় ১ হাজার ঘর বাড়ী আংশিক এবং পুরোপুরি নষ্ট হয়ে গেছে বলে জানিয়েছেন কমলগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাহমদুল হক।

রাজনগর উপজেলার ভোলানগরে সরজমিনে দেখা যায়, কয়েকটি বাড়ি সম্পূর্ণ নষ্ট হয়ে গেছে। ভিটের মাটি সরে গিয়ে গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। বুঝার উপায় নেই এখানে কোন বসত ভিটে ছিল। একই অবস্থা ভোলানগরের প্রতিটা বাড়ীতে।

এই গ্রামের ফুল মিয়া জানান, আমার বাড়ির অস্তিত্ব নেই, উঠোন এখন পুকুর হয়ে গেছে। পাকা ল্যাট্রিনের ট্যাংকির নিচ পর্যন্ত পানির স্রোতে উঠে গেছে।

আশেপাশে কয়েকটি বাড়ী ঘুরে দেখা যায় প্রতিটা অবস্থা প্রায় একই। কারো দেওয়াল পরে গেছে কারো বাউন্ডারি দেওয়াল মিশে গেছে মাটির সাথে। জেলা ব্যাপী মনু ও ধলাই নদীর ২৫ টি ভাঙনের আশেপাশে যাদের বসত ভিটে ছিল তাদের সবার একই অবস্থা।


এ দিকে এলজিডি ও সওজ সূত্র জানিয়েছে, পানির তীব্র স্রোতে অন্তত ৫ শ’ কিলোমিটার সড়ক সম্পূর্ণ ও আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। শুধু মৌলভীবাজার পৌরসভার অধীনের রাস্তার ২ শ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে জানিয়েছেন পৌর মেয়র ফজলুর রহমান।

বন্যায় জেলায় সাড়ে ৪ হাজার হেক্টর আউশ ধানসহ নষ্ট হয়েছে এবং বিভিন্ন সবজি এবং ফলজ বাগান। ফসলের ক্ষতি কৃষকদের পথে বসিয়ে দিয়েছে। যদিও জেলা প্রশাসক জানিয়েছেন কৃষকদের নতুন করে চাষে সাহায্য করা হবে তবে কৃষকরা বলছেন অন্যকথা। তারা বলছেন, এখন আর নতুন করে আউশ চাষের মৌসুম নেই।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ পরিচালক মো. শাহাজান জানিয়েছেন এখনো পুরোপুরি হিসেব করা যায়নি তবে কৃষির জমির ক্ষয়ক্ষতি পঞ্চাশ কোটি টাকার উপরে হবে।

জেলা মৎস্য বিভাগ এখনো হিসেব করতে পারেনি তবে মাছ চাষিদের সাথে আলাপ করে জানা গেছে জেলা ব্যাপী কোটি টাকার মাছ বন্যার পানিতে ভেসে গেছে।

রাজনগরের কামারচাক ইউনিয়নের মাছচাষি সোহেল আহমদ জানান, তিনি ৫ লক্ষ টাকার মাছ চাষ করেছিলেন কিন্তু বন্যা তা ভাসিয়ে নিয়ে থাকে রাস্তায় বসিয়ে দিয়েছে। তিনি জানেন না কি করে এই ক্ষতি কাটিয়ে উঠবেন।

কমলগঞ্জ উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. শাহাদাত হোসেন বলেন, বন্যার কারণে এ উপজেলার দেড় সহস্রাধিক খামারির ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। পাহাড়ি ঢলে সরকারি ও বেসরকারি প্রদর্শনী খামারসহ মোট ১ হাজার ৫৫০টি পুকুর প্লাবিত হয়।

বিপর্যয় নেমে এসেছে প্রোল্টি খাতেও, জেলা ব্যাপী কয়েক কোটি টাকার পোল্ট্রি মোরগের খামার নষ্ট হয়ে গেছে।

অন্যদিকে সাম্প্রতিক বন্যায় মৌলভীবাজারের ৪ টি খাদ্য গুদামে পানি ঢুকে অন্তত ২ কোটি টাকার চাল এবং গম ভিজে নষ্ট হয়েছে বলে জানিয়েছে খাদ্য বিভাগ।

এদিকে স্মরণকালে মৌলভীবাজারের ব্যবসায়ীদের এত বড় ক্ষতি সম্মুখীন হতে হয়ে হয়নি, ঈদের আগে থেকেই শহরের বাণিজ্যিক এলাকা সাইফুর রহমান রোডে যানচলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয় শহর প্রতিরক্ষা বাধ হুমকিতে পরায় এবং সপ্তাহব্যাপী দোকানপাট বন্ধ থাকে সেই সাথে ঈদের রাতে পৌর এলাকার বড়হাটে বাধ ভেঙে পানি ঢুকে বিভিন্ন সিমেন্টের গুদামসহ ব্যবসায়ীদের মূল্যবান মালামাল ভিজে নষ্ট হয়ে যায়।

মৌলভীবাজার চেম্বার্স এন্ড কমার্সের সাবেক সভাপতি ডা. এম.এ আহাদ জানিয়েছেন শুধু বিক্রি বাবদ ব্যবসায়ীদের কয়েক কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। মালামাল যা ভিজে নষ্ট হয়েছে সে হিসেব এখনো করা সম্ভব হয়নি।

টুডে মিডিয়া গ্রুপ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
[email protected] ☎ ৮৮ ০১৭ ১৪৩৪ ৯৩৯৩
৭/ডি-১ (৭ম তলা), ব্লু ওয়াটার শপিং সিটি,
জিন্দাবাজার, সিলেট - ৩১০০, বাংলাদেশ।
Developed By - IT Lab Solutions Ltd.