Sylhet Today 24 PRINT

গ্যাসের নির্ধারিত মূল্য দিচ্ছে না লাফার্জ, লোকসানে জালালাবাদ গ্যাস

সিলেটটুডে ডেস্ক |  ০৯ জুলাই, ২০১৮

গ্যাস সংকটের কারণে দেশের অনেক শিল্প-কারখানাই উৎপাদন চালিয়ে যেতে পারছে না। অথচ গ্যাস পেয়েও সরকার নির্ধারিত মূল্যহার অনুযায়ী বিল পরিশোধ করছে না ফ্রান্সভিত্তিক বহুজাতিক সিমেন্ট কোম্পানি লাফার্জহোলসিম বাংলাদেশ লিমিটেড। প্রতিষ্ঠানটির কাছে ক্যাপটিভ খাতে গ্যাস বিক্রি করে গত তিন বছরে ১০ কোটি টাকার উপরে লোকসান গুনেছে জালালাবাদ গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন সিস্টেম লিমিটেড (জেজিটিডিএসএল)।

ক্যাপটিভ খাতে গ্যাস সরবরাহে ২০০৩ সালে জালালাবাদ গ্যাস ও লাফার্জহোলসিমের মধ্যে ২০ বছর মেয়াদি একটি চুক্তি হয়। চুক্তিতে প্রতি ঘনমিটার গ্যাসের দাম সরকার নির্ধারিত মূল্যহার অনুযায়ী প্রদান করার কথা বলা হয়। সেই সঙ্গে প্রতি হাজার ঘনফুট গ্যাসের জন্য ২ দশমিক ৮ মার্কিন ডলার ‘হায়েস্ট স্লাব’ নির্ধারণ করা হয়। ২০১৫ সালে গ্যাসের নতুন মূল্যহার ঘোষণার আগ পর্যন্ত সরকার নির্ধারিত মূল্যহার অনুযায়ীই গ্যাস বিল পরিশোধ করে আসছিল লাফার্জহোলসিম। কিন্তু ২০১৫ সালের সেপ্টেম্বরে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি) ঘোষিত নতুন মূল্যহারে ক্যাপটিভ খাতে ব্যবহূত প্রতি ইউনিট গ্যাসের দাম চুক্তিতে উল্লেখিত ‘হায়েস্ট স্লাব’-কে ছাড়িয়ে গেলে পরের মাসে নতুন মূল্যহারে বিল প্রদান নিয়ে লাফার্জহোলসিমের সঙ্গে জালালাবাদ গ্যাসের বিরোধ দেখা দেয়।

এ অবস্থায় প্রথমে নিজেরা আলোচনার মাধ্যমে এ বিরোধ মেটানোর চেষ্টা করে জালালাবাদ গ্যাস। কিন্তু এভাবে বিল আদায়ে ব্যর্থ হয়ে পরে পেট্রোবাংলার মাধ্যমেও পাওনা আদায়ের চেষ্টা করে গ্যাস বিতরণ কোম্পানিটি। কিন্তু এতেও কোনো অগ্রগতি হয়নি। বিষয়টি এখন বাংলাদেশ ও ফরাসি সরকার পর্যন্ত গড়িয়েছে। ফরাসি রাষ্ট্রদূতের হস্তক্ষেপের কারণে এ বিষয়ে কোনো পদক্ষেপ নিতে পারছে না পেট্রোবাংলা। জ্বালানি বিভাগ থেকে এ বিষয়ে তাদের একবার চাপ দেয়া হলেও ঢাকাস্থ ফরাসি রাষ্ট্রদূত সময় চাওয়ার কারণে দ্বিতীয়বার আর কোনো পদক্ষেপ নেয়া হয়নি। বিষয়টি এখন দুই দেশের সরকারের অভ্যন্তরীণ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারাই দেখছেন।

জেজিটিডিএসএলের মহাব্যবস্থাপক শাহিনুল ইসলাম এ বিষয়ে বলেন, লাফার্জের কাছে গ্যাস বিক্রি করে আমাদের প্রতি মাসে ৪০ থেকে ৫০ লাখ টাকা লোকসান হচ্ছে। এ নিয়ে পেট্রোবাংলা ও জ্বালানি বিভাগের হস্তক্ষেপ চাওয়া হয়েছে। বর্তমানে বিষয়টি আইন মন্ত্রণালয়ে রয়েছে। আইন মন্ত্রণালয় থেকে ভেটিং হয়ে আসার পর এ বিষয়ে পরবর্তী ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানান তিনি।

গত বছর বিইআরসির সর্বশেষ আদেশে ক্যাপটিভে প্রতি ঘনমিটার গ্যাসের মূল্যহার ৯ টাকা ৬২ পয়সা নির্ধারণ করা হয়। এর আগে ২০১৫ সালের আদেশে এ খাতে ব্যবহৃত গ্যাসের দাম নির্ধারণ করা হয় ৮ টাকা ৩৬ পয়সা। কিন্তু লাফার্জহোলসিমের কাছ থেকে ২০১৫ সালের সেপ্টেম্বর থেকে নতুন মূল্যহারে বিল পাচ্ছে না জালালাবাদ গ্যাস। বহুজাতিক এ কোম্পানি নতুন মূল্যহার অনুযায়ী গ্যাস বিল দিতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে এবং তিন বছর ধরে প্রতি ইউনিটের দাম ৭ টাকা ৭৬ পয়সা হারে পরিশোধ করে আসছে। এতে ইউনিটপ্রতি ১ টাকা ৮৬ পয়সা লোকসান দিচ্ছে জালালাবাদ। এ সময়ে কোম্পানিটিকে যে পরিমাণ গ্যাস সরবরাহ করা হয়েছে, তার বিপরীতে জালালাবাদের লোকসান হয়েছে ১০ কোটি টাকার বেশি।

এ প্রসঙ্গে বিইআরসির চেয়ারম্যান মনোয়ার ইসলাম বলেন, এলএনজি যোগ হলে গ্যাসের মূল্যহারে আরো পরিবর্তন আসবে। গ্যাস এখন অত্যন্ত মূল্যবান খনিজ সম্পদ। এর মূল্যহার নিয়ে কোনো ‘নেগোসিয়েশন’ হবে না। লাফার্জকে অবশ্যই কমিশন নির্ধারিত মূল্যহারে গ্যাসের দাম দিতে হবে।

১৯৯৭ সালে ছাতক শহরের সুরমা নদীর উত্তর পাড় টেংগারগাঁও এলাকায় স্থাপিত হয় লাফার্জ সুরমা সিমেন্ট কারখানা। ২০১৫ সালে একীভূত হয় লাফার্জ সুরমা ও হোলসিম সিমেন্ট। দেশের বেসরকারি সিমেন্ট কারখানাগুলোর মধ্যে লাফার্জই একমাত্র স্বয়ংসম্পূর্ণ কারখানা। সিমেন্টের প্রধান কাঁচামাল ক্লিংকার উৎপাদন করে সেখান থেকে সিমেন্ট তৈরি করে থাকে প্রতিষ্ঠানটি। কোম্পানিটির নিজস্ব দুটি সিমেন্ট কারখানায় প্রতি বছর ১৪ থেকে ১৫ লাখ টন সিমেন্ট উৎপাদন করা হয়, যা দেশের মোট চাহিদার ৭ থেকে ৮ শতাংশ। উৎপাদন কার্যক্রম চালিয়ে নেয়ার জন্য বর্তমানে লাফার্জের গ্যাসের চাহিদা প্রতিদিন ১ দশমিক ৬ কোটি ঘনফুট। দীর্ঘমেয়াদি চুক্তির আওতায় এ গ্যাস সরবরাহ করছে জালালাবাদ গ্যাস।

যোগাযোগ করা হলে লাফার্জহোলসিমের উপব্যবস্থাপক (করপোরেট যোগাযোগ) নাফিজ ইমতিয়াজ করিম বলেন, ‘আমাদের সঙ্গে জালালাবাদ গ্যাস কোম্পানির ‘গ্যাস বিক্রি চুক্তি’ রয়েছে, যার মেয়াদ ২০২৫ সাল পর্যন্ত। আমরা জালালাবাদ গ্যাসকে দীর্ঘমেয়াদি ব্যবসায়িক অংশীদার মনে করি। চুক্তির কিছু শর্ত নিয়ে মতের অমিল আছে। পারস্পরিক আলোচনার মাধ্যমে এর সমাধান হবে বলে আমরা আশাবাদী।
সূত্র: বণিক বার্তা

টুডে মিডিয়া গ্রুপ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
[email protected] ☎ ৮৮ ০১৭ ১৪৩৪ ৯৩৯৩
৭/ডি-১ (৭ম তলা), ব্লু ওয়াটার শপিং সিটি,
জিন্দাবাজার, সিলেট - ৩১০০, বাংলাদেশ।
Developed By - IT Lab Solutions Ltd.