Sylhet Today 24 PRINT

একদিকে শৃঙ্খলা, অন্যদিকে নৈরাজ্য

নিজস্ব প্রতিবেদক |  ০৪ আগস্ট, ২০১৮

সিলেট নগরীর জিন্দাবাজার মোড়ে অবস্থান নিয়ে আছে স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা। প্রতিটি মোটরসাইকেলের লাইসেন্স পরীক্ষা করছে তারা। লাইসেন্স ঠিক থাকলে চালককে চকলেট উপহার দিচ্ছে। হেলমেট না থাকলে আগামী দিন থেকে হেলমেট ব্যবহারের অনুরোধ করছে। আর রিকশাগুলো চলছে সারিবদ্ধ লাইন ধরে। ট্রেনের বগির মতো একটার পেছনে আরেকটা। ওয়ানওয়ে এই সড়কে বিপরীত দিক থেকে কোনো বাহনই আসতে দিচ্ছে না শিক্ষার্থীরা।

জিন্দাবাজার-চৌহাট্টা সড়কে যখন এই বিরল শৃঙ্খলা তখন বিপরীত চিত্র নগরীর উপশহর-সোবানীঘাট সড়কে। এই সড়কে নৈরাজ্য চালাচ্ছে পরিবহন শ্রমিকরা। উপশহর মোড়ে লাঠিসোটা হাতে অবস্থান নিয়েছে পরিবহন শ্রমিকরা। মূলত এরা বাসের চালক ও সহকারী। রিকশা আর মোটরসাইকেল ছাড়া সব ধরণের যান চলাচলেই বাধা দিচ্ছে তারা। অটোরিকশা, মাইক্রোবাস এমনকি প্রাইভেটকারও সড়কে চলাচল করতে দেওয়া হচ্ছে না। হঠাৎ কোনো অটোরিকশা দেখলেই লাঠি হাতে দৌড়ে তেড়ে যাচ্ছে শ্রামকরা। ফলে রিকশাছাড়া আর কোনো যানবাহনই নেই সড়কে।

কেবল এই সড়ক নয়, শনিবার সকাল থেকে সিলেট নগরীর বেশিরভাগ সড়কই পরিবহন শ্রমিকদের দখলে। তাদের নৈরাজ্যের কারণে সড়কে নেই কোনো যানবাহন। ফলে চরম দূর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে যাত্রীদের।

নিরাপদ সড়কের দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের প্রেক্ষিতে শুক্রবারের মতো শনিবারও সিলেটের দুটি বাস টার্মিনাল থেকে ছেড়ে যায়নি কোনো বাস। আন্তঃজেলা ও দূরপাল্লার কোনো বাসই চলাচল করেনি।

শ্রমিক নেতারা নিররাপত্তাজনিত কারণে বাস চলাচল বন্ধ রাখার কথা জানালেও কয়েকজন শ্রমিক জানিয়েছেন, সড়ক নিরাপত্তা আইনের খসড়ায় দুর্ঘটনাকবলিত গাড়ি চালকের মৃত্যুদন্ডের বিধান রাখার প্রতিবাদে অঘোষিত ধর্মঘট পালন করা হচ্ছে। এই আইন শিথিল করার দাবি তাদের।

শনিবার দুপুরে সিলেটের কদমতলী এলাকার কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনালে গিয়ে দেখা যায়, টার্মিনাল থেকে কোনো বাস ছেড়ে যাচ্ছে না। বাস শ্রমিকরা সড়কেই অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ প্রদর্শন করছেন। এসময় পরিবহন শ্রমিকদের যান চলাচলে বাধা দিতে দেখা যায়। যাত্রীরা গাড়ি চলাচলে বাধা দেয়ার প্রতিবাদ করলে তাদের ওপরও চড়াও হন শ্রমিকরা। এ সময় কয়েকজন যাত্রীকে তারা মারধরও করেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

এদিকে, টার্মিনালে এসে গাড়ি না পেয়ে দুর্ভোগে পড়েছেন যাত্রীরা। টার্মিনালের পাশেই সিলেট রেলওয়ে স্টেশনে এসময় যাত্রীদের উপচেপড়া ভিড় লক্ষ্য করা যায়। তবে ট্রেনের টিকিট সঙ্কটের কারণে তাদের অনেককেই ফিরে আসতে হয়।

সিলেটের পরিবহন মালিকরা জানান, সড়কে বাস ভাঙচুর ও চালকদের নিরাপত্তার কথা ভেবে বাস চলাচল দিনে বন্ধ রাখা হয়েছে। ছাত্ররা দিনে যতো দিন আন্দোলন করবে ততোদিন নিরাপত্তার জন্য বাস চলাচল বন্ধ থাকবে। তবে রাতে বাস চলাচল করবে।

এ ব্যাপারে সিলেট বিভাগীয় পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি সেলিম আহমদ ফলিক বলেন, শ্রমিক ও গাড়ির নিরাপত্তার কারণে পরিবহন বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। তবে কোথাও হালকা যান চলাচলে বাধা না দেয়ার জন্য বলা হয়েছে। কেউ হালকা যানবাহন চলাচলে বাধা দিলে তাদের ব্যাপারে খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

শ্রমিক নেতা এমনটি দাবি করলেও শনিবার নগরীর উপশহর ছাড়াও চন্ডিপুল, হুমায়ুন রশীদ চত্বর, কদমতলী, সোবহানীঘাট, টিলাগড়, আম্বরখানা, মদিনা মার্কেট, কুমারগাও, আলমপুরসহ বিভিন্ন এলাকায় শ্রমিকরা অবস্থান নিয়ে ছোট যানবাহন চলাচলে বাধা দিতে দেখা যায়।

এদিকে, ঢাকার বিমানবন্দর সড়কে দুই বাসের রেষারেষিতে দুই কলেজ শিক্ষার্থী নিহতের ঘটনায় জড়িতদের শাস্তি ও নিরাপদ সড়কের দাবিতে শনিবার সকাল থেকে বিক্ষোভে নামে সিলেটের শিক্ষার্থীরা।

শুক্রবার বিকেলে সিলেটের জেলা প্রশাসক নগরীর সব কলেজ ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান ও ম্যানেজিং কমিটির সদস্যদের নিয়ে বৈঠক কওে শিক্ষার্থীদের ক্লাসে ফেরানোর নির্দেশনা দিলেও তা উপেক্ষা করেই শনিবার রাস্তায় নামে শিক্ষার্থীরা।

শনিবার সকালে সিলেট কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের সামনে নগরীর কয়েকটি স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ শুরু করে। নিরাপদ সড়কের দাবিতে বিভিন্ন প্ল্যাকার্ড হাতে শহীদ মিনারের সামনে মানববন্ধন করে তারা। একই সময়ে নগরীর পাঠানটুলা এলাকায় অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করে রাগীব রাবেয়া মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থীরা।
দুপুর থেকে জিন্দাবাজার-চৌহাট্টা সড়কে যানবাহন ও চলকের কাগজপত্র পরীক্ষা ও সড়কে শৃঙ্কলা ফেরানোর কাজ শুরু করে শিক্ষার্থীরা।

আন্দোলনকারী শিক্ষার্থী নাবিল এইচ বলেন, আমরা শান্তিপূর্ণভাবে আমাদের আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছি। কেবল আশ্বাস নয়, দাবিগুলো বাস্তবায়ন না হওয়া পর্যন্ত আমাদের আন্দোলন চলবে।

এ ব্যাপারে সিলেটের জেলা প্রশাসক নুমেরী জামান বলেন, আমাদের কিছু সমস্যা ছিলো। শিক্ষার্থীরা তা চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে। সরকার তাদের দাবিগুলোও মেনে নিয়েছে। এবার তাদের ক্লাসে ফিরে যাওয়া উচিত।

পরিবহন শ্রমিকদের কর্মসূচী প্রসঙ্গে তিনি বলেন, তারা নৈরাজ্য চালাচ্ছে। তাদের সাথে আলোচনা চলছে। আশা করি দ্রুতই সমাধানে পৌঁছতে পারবো।

টুডে মিডিয়া গ্রুপ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
[email protected] ☎ ৮৮ ০১৭ ১৪৩৪ ৯৩৯৩
৭/ডি-১ (৭ম তলা), ব্লু ওয়াটার শপিং সিটি,
জিন্দাবাজার, সিলেট - ৩১০০, বাংলাদেশ।
Developed By - IT Lab Solutions Ltd.