Sylhet Today 24 PRINT

‘সর্পদেবীর’ আপত্তি, তিনদিনেও সৎকার হয়নি শিক্ষিকার মৃতদেহ

তপন কুমার দাস, বড়লেখা  |  ০৯ আগস্ট, ২০১৮

মৌলভীবাজারের বড়লেখায় বিষধর সাপের দংশনে মারা যাওয়ার ৩ দিন পরও সৎকার করা হয়নি শিক্ষিকা শিবানী রানী দাসের (২৫) লাশ। চিকিৎসকের মৃত ঘোষণার পরও শিবানীকে বাঁচিয়ে তোলার আশ্বাস দিয়ে যাচ্ছে ওঝারা।

ওঝাদের একদল সটকে পড়ে তো আরেক দল তাঁকে বাঁচাতে ঝাড়ফুঁক শুরু করছে। আর এনিয়ে এলাকায় তোলপাড় শুরু হয়েছে।

এদিকে মঙ্গলবার (০৭ আগস্ট) বিকেল থেকে শান্তনা বিশ্বাস নামের এক নারী নিজেকে সর্পদেবী মনসা (হিন্দু পুরঅন মতে সাপের দেবী) দাবি করে লাশের সৎকার না করিয়ে নদীতে ভাসিয়ে দিতে ওই পরিবারকে ভয়ভীতি দেখানোর অভিযোগ উঠে। ভয়ে শিবানী দাসের পরিবার লাশ নদীতে ভাসিয়ে দেবে না সৎকার (মৃতদেহ দাহ) করবে তা নিয়ে সিদ্ধান্তহীনতায় রয়েছেন।

বুধবার (০৮ আগস্ট) রাত ৭টার দিকে থানা পুলিশের একটি দল ঘটনাস্থলে গিয়ে নিহতের লাশের সুরতাহল প্রতিবেদন তৈরি করেছে।

বুধবার সরেজমিনে ওই বাড়িতে গিয়ে দেখা গেছে, সাপেকাটা ওই শিক্ষিকার বাড়ির সামনে গাড়ির দীর্ঘ লাইন। দূর-দূরান্ত থেকে শত-শত উৎসুক জনতা ভিড় করছেন ওই বাড়িতে। ভীড় সামাল দিতে রীতিমত হিমশিম খাচ্ছেন নিহতের স্বজনরা। তবে নিহতের লাশ আগের মতই বাড়ির উঠানে রয়েছে। সময় বাড়ার সাথে সাথে লাশ ফুলে উঠতে শুরু করেছে। সোমবার রাতে ঝাড়ফুঁক শুরু করা ওঝা বালাগঞ্জের উস্তার আলী ইতিমধ্যে বিদায় নিয়েছেন।

নিহত শিবানী রানী দাসের কাকাতো ভাই চন্দন কুমার দাস বুধবার (০৮ আগস্ট) সন্ধ্যায়  বলেন, ‘শান্তনা বিশ্বাস নিজেকে বিষহরী (সর্পদেবী মনসা) পরিচয় দিয়ে আমার বোনকে বাঁচানোর আশ্বাস দেন। পরে বলেছেন আর বাঁচানো যাবে না। তিনি কলার ভেলায় করে নদীতে লাশ ভাসিয়ে দিতে বলেছেন। তা নাহলে আমাদের পরিবারের বড় ধরনের ক্ষতি হবে বলেও জানিয়েছেন তিনি। এজন্য আমরা ভয়ে আছি। লাশ ভাসিয়ে দেব না সৎকার করব এটা নিয়ে। তবে বিষহরী আমাদের অনুমতি দিলে আমরা লাশ সৎকারের ব্যবস্থা করব।’

ওই বাড়িতে কথা হয় কথিত সর্পদেবী মনসা শান্তনা বিশ্বাসের সঙ্গে। তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘তাঁকে (শিবানীকে) আর বাঁচানো সম্ভব নয়। বাঁচাতে আমরা সবধরণের চেষ্টা করেছি। আমি স্বপ্নে দেখেছি ওকে নদীতে ভাসিয়ে দিতে হবে। তাই ভাসিয়ে দেওয়ার জন্য বলেছিলাম।’

ভয়ভীতির বিষয়ে তিনি বলেন, ‘ভয়ভীতি আমি দেখাইনি। এ অভিযোগ সঠিক নয়।’

লাশের সুরতহাল প্রস্তুতকারী বড়লেখা থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) মো. মাজহারুল ইসলাম বুধবার রাত সাড়ে ৯টায় মুঠোফোনে বলেন, ‘মেয়েটিকে সাপে কেটেছে। ডাক্তার বাঁচাতে পারেনি। কিন্তু স্বজনরা মন সান্তনা দিতে ওঝাকে দিয়ে তিন দিন ধরে ঝাড়ফুঁক করাচ্ছেন। নিহতের পরিবার ময়নাতদন্ত ছাড়া লাশ সৎকারের জন্য যথাযথ কর্তৃপক্ষ বরাবরে আবেদন করেছেন।’

এ ব্যাপারে বড়লেখা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মুহাম্মদ সুহেল মাহমুদ বলেন, ‘ঘটনাটি শুনেছি। চিকিৎসকের মৃত ঘোষিত ব্যক্তিকে ঝাড়ফুঁকে জীবিত করার নজির নেই। পরিবারের লোকজন আমার কাছে এসেছিলেন। আমি তাদের ধর্মীয় রীতি অনুযায়ী সৎকার করতে বলেছি।’

প্রসঙ্গত, গত রবিবার (০৫ আগস্ট) দিবাগত রাত আনুমানিক ১১টার দিকে নিজ বাড়িতে বিষধর সাপের কামড়ে আহত হন শিবানী রানী দাস। ওই রাতে আহত অবস্থায় শিবানীকে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পর দিন সোমবার সকাল ৮টার দিকে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। শিবানী রানী দাস উপজেলার দাসেরবাজার ইউনিয়নের সুনামপুর গ্রামের মনোরঞ্জন দাসের মেয়ে। তিনি স্থানীয় একটি বেসরকারি স্কুলের শিক্ষিকা ছিলেন।

টুডে মিডিয়া গ্রুপ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
[email protected] ☎ ৮৮ ০১৭ ১৪৩৪ ৯৩৯৩
৭/ডি-১ (৭ম তলা), ব্লু ওয়াটার শপিং সিটি,
জিন্দাবাজার, সিলেট - ৩১০০, বাংলাদেশ।
Developed By - IT Lab Solutions Ltd.