Sylhet Today 24 PRINT

মূল সমাজ থেকে পিছিয়ে আদিবাসীরা

রিপন দে |  ০৯ আগস্ট, ২০১৮

পান দিয়ে অতিথেয়তা বৃহত্তর সিলেটের একটি ঐতিহ্য। আর সে পানটি যদি হয় খাসিয়া তাহলেতো কথাই নেই। কারণ খাসিয়া পানের যে কোন বিকল্প নেই। অথচ যাদের ঘামে পরিশ্রমে এই আপ্যায়ন সেই আদিবাসী খাসিয়া সম্প্রদায়ের জীবন জীবিকার করুন ইতিহাস অনেকেরই অজানা।

তাদের নেই নিজস্ব বসবাস যোগ্য ভূমি। অন্যের ইজারাকৃত ভূমিতে সুস্বাদু সেই পান চাষ করে জীবিকা নির্বাহ করতে হয়। উঁচু পাহাড়ের উপরে বসবাসকারী অধিকাংশ খাসিয়া পুঞ্জির নেই নিজস্ব রাস্তাঘাট, স্কুল, স্বাস্থ্যসহ নিরাপত্তা।

ইজারাকৃত চা বাগানের মধ্যদিয়ে প্রতিদিন যাতায়াত করতে হয়। এনিয়ে বিভিন্ন সময়ে সংঘাত, সংঘর্ষ, হত্যাকাণ্ডসহ দিন কাটে আতংকে।

দেশে ৭৫ টি আদিবাসী নৃ-গোষ্ঠীর জনসংখ্যার শতকরা ১.১৩ ভাগ বসবাস করে। এর মধ্যে মৌলভীবাজার জেলায় ৬৫ পুঞ্জিতে প্রায় পঁচিশ হাজার আদিবাসী খাসিয়া ও লোক বংশ পরম্পরায় বসবাস করে আসছে।

তাদের জীবিকা নির্বাহের একমাত্র উৎস পান চাষ। এছাড়া সিলেটে ১৩টি, সুনামগঞ্জে ১টি ও হবিগঞ্জে ২টি পানপুঞ্জি রয়েছে। যুগযুগ ধরে এসব জমিতে বসবাস করে পান চাষ কওে স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে বিদেশে রপ্তানি করে আসলেও ভূমির উপর তাদের অধিকার প্রতিষ্ঠিত হয়নি।

বিশুদ্ধপানি, স্যানিটেশন, শিক্ষা, স্বাস্থ্যসহ যাতায়াত ব্যবস্থা সবকিছুতেই এ জনগোষ্ঠীর জীবন মানের উন্নয়ন ঘটছে না। আদিবাসী ভিন্ন ভিন্ন গোষ্ঠীর আছে আলাদা আলাদা মাতৃভাষা এবং সংস্কৃতি। তবে সঠিক উদ্যোগের অভাবে কালের গর্ভে বিপন্নের পথে এই সব নৃগোষ্ঠীর মাতৃভাষা।

স্বাধীনতার ৪৬ বছর পার হলেও তারা এখনো অবহেলিত। দেশে ৭৫ টি নৃ-গোষ্ঠী থাকলেও সরকারের হিসেবে তা মাত্র ২৯ টি।

নৃগোষ্ঠী গবেষক সিলেট শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা বিভাগের প্রধান প্রফেসর ড. মো. আশরাফুল করিম জানান, সরকার বলে ২৯ টি এবং আদিবাসী ফোরাম বলে ৪৫ টি  তবে আমি গবেষণায় প্রমাণ করেছি ৭৫ টির বেশী আদিবাসী গোষ্ঠী বাংলাদেশে আছে শুধু সিলেটেই আছে ৫০ টির অধিক।

ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলন থেকে মুক্তিযুদ্ধ সহ বাঙালির অধিকার রক্ষার প্রতিটি সংগ্রামে তাদের আছে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা। দেশের সংস্কৃতি সমৃদ্ধির পাশাপাশি অর্থনৈতিক ভাবে ভূমিকা রাখছে কঠোর পরিশ্রমী এই সব জাতিগোষ্ঠী। বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনে তাদের আছে বিরাট ভূমিকা।

তাদের কৃষ্টি, আচার- আচরণ মুগ্ধ করে পর্যটকসহ স্থানীয়দের। কিন্তু সরকারের উদাসীনতায় দিনে দিনে হারিয়ে যাচ্ছে তাদের নিজস্ব সংস্কৃতি ও মাতৃভাষা। নিজ দেশ থেকেও তারা পরবাসী। পার্বত্য চট্টগ্রাম ছাড়া অন্য কোথাও তাদের নেই ভূমির অধিকার। সারা দেশে প্রায় ৩০ লক্ষ আদিবাসীর জনগোষ্ঠীর বসবাস কিন্তু তারা অবহেলিত বিভিন্ন পাহাড়ে বসবাস করার কারণে যোগাযোগ ব্যবস্থা একেবারে নাজেহাল ।

গর্ভবতীসহ যে কোন রোগীকে জরুরী অবস্থায় সমতলে নিয়ে আসা যায়গা বিশেষে ঘণ্টার কাজ। যোগাযোগ ব্যবস্থা ভাল না থাকায় মিলছেনা অর্থনৈতিক মুক্তি। পিছিয়ে আছেন শিক্ষা থেকে।

আদিবাসীদের ঝুঁকিপূর্ণ যোগাযোগ ব্যবস্থা নিয়ে জাগো নিউজকে আদিবাসী বিষয়ক সংসদীয় (ককাস) কমিটির টেকনোক্র্যাট মেম্বার ড. মেসবাহ কামাল বলেন, যোগাযোগ ভাল খুব খারাপ, মৌলভীবাজারের নাহার পুঞ্জি গিয়ে আমার যে অভিজ্ঞতা হয়েছে তাতে বলা যায় খুব ঝুঁকিপূর্ণ।  এত খারাপ যে একজন গর্ভবতী মহিলাকে বিপদকালীন মুহূর্তে নিয়ে যায় প্রায় অসম্ভব। তবে এ অবস্থা বদলানোর জন্য আমারা কাজ করছি।

আদিবাসীদের নিজস্ব সংস্কৃতি ও ভাষা খুব সমৃদ্ধ, দেশের অন্য অঞ্চলে সরকার এ ব্যাপারে কিছুটা ভূমিকা নিলেও সিলেটের ব্যাপারে উদাসীন। বাংলাদেশের সংস্কৃতিতে তাদের অবদান থাকলে  সরকারের সহযোগিতা না পাওয়ায় বিপন্ন প্রায় তাদের মাতৃভাষা । আদিবাসী জনগোষ্ঠীর ভাষা এখনি সংরক্ষণ না করলে তা বাংলাদেশ থেকে হারিয়ে যাবে।

তারা বিভিন্ন ভাবে বহুদিন ধরে তা রক্ষার জন্য আন্দোলন করে আসছেন। আদিবাসীরা । আদিবাসী  নারী ফ্লোরা বাবলী তালাং জানান, আমাদের নিজস্ব ভাষা আছে আমরা আমাদের অস্তিত্ব রক্ষার্থে বারবার সরকারের কাছে দাবী জানিয়ে আসছি আমার মাতৃভাষা রক্ষার। কিন্তু সরকার আমাদের ব্যাপারে উদাসীন।

সিলেট আদিবাসী ফোরামের সাধারণ সম্পাদক শ্রীমঙ্গলের লাউয়াছড়া খাসিয়া পুঞ্জির মন্ত্রী (হেডম্যান) ফিলা পত্নী জানিয়েছেন, আমাদের নিজেরদের সংস্কৃতি রক্ষায় সবাই উদাসীন। আমরা সরকারী পৃষ্ঠপোষকতার দাবী জানিয়ে আসছি বারবার।

আদিবাসী বিষয়ক সংসদীয় (ককাস) কমিটির সদস্য কাজী রোজী এম,পি জাগো নিউজকে বলেন, আমরা এদের ব্যাপারে খুব সচেতন ভাবে কাজ করছি। আমরা ককাস অনেক সফল ভাবে এগিয়ে যাচ্ছি এবং ইতি মধ্যে আমাদের তা দৃশ্যমান হচ্ছে। আসা করছি খুব দ্রুত তাদের সব সমস্যার সমাধান হবে।

টুডে মিডিয়া গ্রুপ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
[email protected] ☎ ৮৮ ০১৭ ১৪৩৪ ৯৩৯৩
৭/ডি-১ (৭ম তলা), ব্লু ওয়াটার শপিং সিটি,
জিন্দাবাজার, সিলেট - ৩১০০, বাংলাদেশ।
Developed By - IT Lab Solutions Ltd.