Sylhet Today 24 PRINT

সিলেটের সীমান্ত দিয়ে জমজমাট গরু চোরাচালান

নিজস্ব প্রতিবেদক |  ১৯ আগস্ট, ২০১৮

সিলেটের অন্যতম পর্যটন এলাকা গোয়াইনঘাট উপজেলার বিছনাকান্দি। প্রতিদিন এইস্থানে ভিড় করেন অসংখ্য পর্যটক। তবে মাসখানেক ধরে বিছনাকান্দিতে বেড়ে গেছে গরুর আনাগোনা। মনে হবে যেন বিছনাকান্দিতে ঘুরে বেড়াচ্ছে গরুরা। তীব্র গরমে গা ভেজাচ্ছে ঝর্ণার জলে।

আদতে গরুগুলো অবৈধভাবে নিয়ে আসা হচ্ছে সীমান্তের ওপারে ভারত থেকে। ঈদুল আযহা উপলক্ষে কোরবানির জন্য বিছনাকান্দিতে দিয়ে প্রতিদিন দেশে আসছে অসংখ্য গরু। সীমান্ত পেরোনোর পর কিছুটা নৌপথ ও কিছুটা সড়কপথ ভ্রমণ শেষে শহরে প্রবেশ করেছে গরুগুলো। কেবল বিছনাকান্দি দিয়েই প্রতিদিন প্রায় পাঁচশ গরু অবৈধভাবে দেশে আসছে বলে স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে।

কাস্টমস ও ভ্যাট কমিশনারেট, সিলেট কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে- ভারত বৈধভাবে বাংলাদেশে গরু রপ্তানি করে না। তবু প্রতিবছর ঈদুল আযহার মৌসুমে সিলেটের সীমান্তগুলো দিয়ে ভারত থেকে আসে অসংখ্য গরু। এসব গরু আমদানি বন্ধ করতে না পেরে গতবছর সিলেটের বিভিন্ন সীমান্তে চারটি করিডোর খোলা হয়েছে। এসব করিডোর নিয়ে আনা গরু মাত্র ৫শ’ টাকা রাজস্ব প্রদানের মাধ্যমে দেশে প্রবেশের বৈধতা প্রদান করা হয়। তবে চোরাকারবারিরা এই পাঁচশ’ টাকা ফাঁকি দেওয়ার জন্য করিডোর দিয়ে না এনে অন্যান্য সীমান্ত নিয়ে অবৈধভাবে দেশে গরু নিয়ে আসছে। এই চোরাচালানে সীমান্ত রক্ষী বাহিনী (বিজিবি)-এর স্থানীয় দায়িত্বশীলরা জড়িত থাকার অভিযোগ ওঠেছে।

স্থানীয় প্রশাসন আর রাজস্ব বিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন, বিজিবির প্রশ্রয়ে বন্ধ করা যাচ্ছে না এই গরু চোরাচালান। তবে বিজিবির কর্মকর্তা গরু চোরাচালানের বিষয়টি অস্বীকার করে জানিয়েছেন, সরকারকে নির্ধারিত রাজস্ব দিয়ে বৈধভাবেই আসছে গরু।

এদিকে, প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের সিলেট কার্যালয়ের উপ পরিচালক মো. গিয়াস উদ্দিন আহমদের দাবি, সিলেটে কোরবানির চাহিদা পূরণের মতো যথেষ্ট গবাদিপশু রয়েছে। ফলে গরু আমদানির প্রয়োজন নেই। আমদানি করলে স্থানীয় খামারিরাই ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। সিলেট বিভাগে এই ঈদে প্রায় ৫ লাখ গবাদিপশু কোরবানি দেওয়া হবে বলে ধারণা তাঁর।

গত বুধবার বিছনাকান্দিতে গিয়ে দেখা যায়, সীমান্তের ওপারের ভারতীয় টিলা থেকে দলবেঁধে নেমে আসছে গরু। টিলা থেকে নেমে ঝর্ণার জলে সাঁতরে গরু প্রবেশ করছে বাংলাদেশে। ওপারের টিলার উপর থেকে কয়েকজন এদিকে ছেড়ে দিচ্ছেন গরুগুলিকে। এপারে আসার পর আরও কয়েকজন গুণে গুণে গরুগুলি ইঞ্জিন নৌকায় তুলছে। তারপর গরু নিয়ে আসা হচ্ছে সিলেটের দিকে। আশপাশেই বিজিবিই সদস্যরা টহল দিলেও এ ব্যাপারে কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই তাদের।

স্থানীয়রা জানান, এভাবে করিডোরের বাইরে বিভিন্ন সীমান্ত দিয়ে নিয়ে আসা গরুর একটা ছোট অংশ বিজিবি আটক করে নিয়ে যায় নিকটবর্তী করিডোরে। সেখানে ৫০০ টাকা রাজস্ব প্রদান করে সেগুলোকে বৈধ করিয়ে নেওয়া হয়। তবে প্রতিদিন নিয়ে আসা গরুর বড় অংশই কোনো রাজস্ব না দিয়ে অবৈধভাবে দেশে নিয়ে আসা হয়।

গোয়াইনঘাটের বিছনাকান্দি দিয়েই সবচেয়ে বেশি গরু চোরাচালান হচ্ছে বলে জানা গেছে। এছাড়া একই উপজেলার পাংথুমাই, জাফলং, বিয়ানীবাজারের শ্যাওলা, সুনামগঞ্জের বড়ছড়াসহ কয়েকটি সীমান্ত দিয়ে অবৈধপথে আসছে গরু।

জানা যায়, গত বছর থেকে সিলেট ভোলাগঞ্জের মাঝেরগাও, হবিগঞ্জের বাল্লা ও সুনামগঞ্জের ছাতকে গরু আমদানির জন্য করিডোর উন্মুক্ত করে রাজস্ব বিভাগ।

করিডোরের চাইতে অবৈধপথেই বেশি গরু আসছে বলে জানিয়েছেন কাস্টমস ও ভ্যাট কমিশনারেট, সিলেটের কমিশনার শফিকুল ইসলাম। করিডোরের বাইরে বিভিন্ন সীমান্ত দিয়ে অবৈধভাবেই বেশি গরু আসছে। কিন্তু সীমান্ত দেখভালের দায়িত্ব তো আমাদের নয়। তাই আমরা এগুলো ঠেকাতে পারছি না।

তিনি বলেন, অনেক সময় অবৈধভাবে প্রবেশ করা গরু বিজিবি আটক করে আমাদের স্থানীয় অফিসে নিয়ে যায়। কাস্টমস কর্মকর্তা নির্ধারিত অংকের জরিমানা আদায় করে গরুর গায়ে একটি সিল মেরে বৈধতা প্রদান করেন।

শফিকুল ইসলাম বলেন, করিডোরগুলোর মধ্যে কোম্পানিগঞ্জের মাঝেরগাও দিয়ে সবচেয়ে বেশি গরু আসে। এই করিডোর দিয়ে প্রতিদিন গড়ে ৪/৫শ’ গরু আসে বলে জানান তিনি।

করিডোরের বাইরে বিভিন্ন সীমান্ত দিয়ে অবৈধভাবে গরু প্রবেশের কথা স্বীকার করেছেন গোয়াইনঘাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বিশ্বজিৎ পালও। এব্যাপারে অসহায়ত্ব প্রকাশ করে তিনি বলেন, বিছনাকান্দিসহ কয়েকটি সীমান্ত দিয়ে গরু আসছে। এগুলো বন্ধে আমি অনেক চেষ্টা করেছি। বিজিবিকেও বলেছি। কিন্তু কোনো কাজ হচ্ছে না।
‘আপনি বরং এ ব্যাপারে বিজিবির সাথে আলাপ করুন’, পরামর্শ তাঁর।

এ ব্যাপারে বিজিবি ৪৮ ব্যাটেলিয়নের অধিনায়ক লে. কর্নেল মহসেনুল হক কবির বলেন, করিডোর দিয়ে নির্ধারিত রাজস্ব প্রদান করেই গরু বাংলাদেশে আসছে। করিডোরের বাইরে কোনো সীমান্ত দিয়ে গরু আসছে না। সীমান্তে বিজিবির কড়া নজরদারি রয়েছে। অবৈধভাবে কোনো গরু নিয়ে আসলে বিজিবি তা আটক করে নিকটবর্তী রাজস্ব কার্যালয়ে হস্তান্তর করে।

টুডে মিডিয়া গ্রুপ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
[email protected] ☎ ৮৮ ০১৭ ১৪৩৪ ৯৩৯৩
৭/ডি-১ (৭ম তলা), ব্লু ওয়াটার শপিং সিটি,
জিন্দাবাজার, সিলেট - ৩১০০, বাংলাদেশ।
Developed By - IT Lab Solutions Ltd.