Sylhet Today 24 PRINT

ভাগাড়ে ময়লা ফেলতে বাঁধা, শহরজুড়ে আবর্জনার স্তূপ

শ্রীমঙ্গল প্রতিনিধি |  ০৩ অক্টোবর, ২০১৮

মৌলভীবাজার জেলার শ্রীমঙ্গল পৌরসভায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সামনে ময়লার ভাগাড়ে ময়লা ফেলতে রোববার সন্ধ্যা থেকে বাঁধা দিচ্ছে আন্দোলনরত শিক্ষার্থী ও স্থানীয় এলাকাবাসী। ফলে পৌর এলাকার ড্রেন ও বাসাবাড়ির বাসিন্দাদের নিত্যদিনের স্তুপকৃত ময়লা গত চার দিন ধরে ভাগাড়ে ফেলতে পারেনি পৌরসভা কর্তৃপক্ষ।

এ অবস্থায় বাসাবাড়ির ময়লা নিয়ে বিপাকে পড়েছেন পৌরসভার নাগরিকরা।

সোমবার ও মঙ্গলবার শহরের চৌমুহনা, উদয়ন উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়, শ্রীমঙ্গল থানা জামে মসজিদের সামনে, স্টেশন রোড, হবিগঞ্জ রোড, পুরান বাজার, নতুনবাজার, মাছবাজারসহ বিভিন্ন আবাসিক এলাকায় ময়লা-আবর্জনার স্তূপ পড়ে থাকতে দেখা গেছে। আর এসব ময়লা থেকে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে।

শ্রীমঙ্গলের ব্যবসায়ী মো. সিদ্দিক বলেন, গত তিন দিন ধরে বাজারের ময়লা আবর্জনা পৌর কর্তৃপক্ষের গাড়ি নিয়ে না যাওয়ার কারণে বাজারের সামনে ময়লার স্তূপ জমে গিয়েছে। ময়লার দুর্গন্ধে বাজারে ক্রেতা উপস্থিতি কম। সম্মিলিতভাবে সবাই বসে এ ব্যাপারে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া উচিত।

আন্দোলনকারীরা কলেজ সড়কের ময়লার ভাগাড়ের প্রবেশপথে বাঁশের খুঁটি ও লম্বা বাঁশ দিয়ে বেড়া দিয়েছে। স্থানীয় এলাকাবাসী ও আন্দেলনকারীরা দিনে ও রাতে সেখানে পাহারা বসিয়েছেন। যাতে পৌরসভার ময়লা ফেলার গাড়ী সেখানে না নিয়ে যেতে পারে।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, ময়লার ভাগাড়ের প্রবেশপথে বাঁশের খুঁটি ও লম্বা বাঁশ দিয়ে বেড়া দেয়া। বেড়ার গায়ে বাঁশের উপর ব্যানার টানিয়ে লেখা হয়েছে, ‘১লা অক্টোবর ২০১৮ থেকে শ্রীমঙ্গল সরকারি কলেজ, দি বাডস রেসিডেন্সিয়াল মডেল স্কুল এন্ড কলেজ ও মাদ্রাসার সম্মুখে ময়লার ভাগাড়ে পৌরসভার ময়লা ফেলা বন্ধ করুন।'
 
পরিস্থিতি সামাল দিতে শ্রীমঙ্গল পৌরসভার মেয়র মো. মহসিন মিয়া কলেজ রোডস্থ নিজস্ব ট্রেঞ্চিং গ্রাউন্ডে পৌরসভার গার্বেজ ফেলার জায়গাটি উন্মুক্ত করার জন্য সহায়তা চেয়ে ১ অক্টোবর শ্রীমঙ্গল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) বরাবর একটি চিঠি দিয়েছেন।

এতে উল্লেখ করা হয়েছে, ‘৩০ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যা ৭টায় পৌরসভার গার্বেজ ট্রাক চালক দেবেন্দ্র সিং গাড়ি নিয়ে গার্বেজ ফেলার জন্য গেলে অজ্ঞাত পরিচয়ে কিছু লোক গার্বেজ ফেলতে বাধা প্রদান করেন। এমতাবস্থায় গার্বেজ ফেলা বন্ধ হয়ে যায়। পৌরসভার ট্রাক চালক ও অফিস সহকারী থানায় গিয়ে অফিসার ইনচার্জকে বিষয়টি অবহিত করেন। বর্তমানে শহরে গার্বেজ ফেলা বন্ধ রয়েছে এবং গার্বেজের দুর্গন্ধে পরিস্থিতি অসহনীয় হয়ে উঠেছে। অচিরেই শহরে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতিসহ জনস্বাস্থ্যে ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখীন হবে’।

চিঠিতে মেয়র আরও উল্লেখ করেন, ২৩ সেপ্টেম্বর  জেলা প্রশাসকসহ সংশ্লিষ্ট সকল সরকারি কর্মকর্তাকে বিষয়টি লিখিতভাবে অবগত করা হয়। আসন্ন হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের শারদীয় দুর্গাপূজা সন্নিকটে। তাই জরুরী ভিত্তিতে এর সমাধান প্রয়োজন। যদি গার্বেজ ফেলার কোন সমাধান না হয় শহরে এর বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হবে।

এ চিঠির অনুলিপি স্থানীয় সংসদ সদস্য, স্থানীয় সরকার সিনিয়র সচিব, সচিব, সিলেট বিভাগীয় কমিশনার, জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার, উপজেলা চেয়ারম্যান ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর দেয়া হয়েছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পৌরসভার এক কর্মকর্তা জানান, ‘অবস্থা তো খারাপ। রোববার রাত থেকে মঙ্গলবার পর্যন্ত কলেজ সড়কের ময়লার ভাগাড়ে পৌরসভার ময়লা ফেলার গাড়ি আটকিয়ে ফেরত দিয়েছে। ময়লা ফেলা ঠেকাতে সন্ধ্যা থেকে রাতে স্থানীয় বাসিন্দা ও আন্দোলনকারীরা পালাক্রমে পাহাড়া বসিয়েছে। শহরের বাসিন্দাদের বাসাবাড়ি ও ময়লার ড্রেনে প্রতিদিন ১০/১৫ টন গার্বেজ এর স্তূপ তৈরি হচ্ছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে শ্রীমঙ্গল থানার ওসি কে এম নজরুল ইসলাম বলেন, বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করেছি। নির্দেশনা পেলে প্রয়োজনীয় পরবর্তী ব্যবস্থা নেয়া হবে।

শ্রীমঙ্গল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ইউএইচও ডা. জয়নাল আবেদীন টিটো বলেন, খোলা শহরে আবর্জনার মশা-মাছি সাধারণত জন্মস্থান থেকে দেড় কিলোমিটার পর্যন্ত দৌঁড়াতে পারে। এতে রোগ জীবাণু দেড় কিলোমিটার পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়তে পারে। খাদ্যনালীর প্রদাহ তার অন্যতম। এছাড়াও ডায়রিয়া, আমাশয়, জন্ডিস, টাইফয়েড ইত্যাদি রোগের ব্যাধি দ্রুত ছড়ায়।

এদিকে শহরজুড়ে ময়লা ছড়িয়ে পড়ায় সবচেয়ে দুর্ভোগে পড়েছেন পর্যটকরা ৷ দেশী-বিদেশী কয়েকজন পর্যটকের সাথে কথা বললে তারা ময়লার এ স্তূপ শহরের প্রাণকেন্দ্রে ফেলা দেখে বিস্ময় প্রকাশ করেন৷

এ ব্যাপারে শ্রীমঙ্গল পর্যটন সেবা সংস্থার সদস্য ও গ্রিন লিফ গেস্ট হাউজের স্বত্বাধিকারী এস কে দাশ সুমন বলেন, পর্যটন শহর শ্রীমঙ্গলের দুঃখ ভাঙ্গাচোরা রাস্তাঘাট, তার উপর আবার মরার উপর খাড়ার ঘা হিসেবে ময়লার স্তূপ যুক্ত হয়েছে। এতে স্থানীয়সহ বেড়াতে আসা দেশী-বিদেশী পর্যটকরা শহর সম্পর্কে বিরূপ ধারণা নিয়ে যাচ্ছেন।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে শ্রীমঙ্গল পৌরসভার মেয়র মহসীন মিয়া বলেন, বিকল্প স্থানে (শ্রীমঙ্গল জেটি রোডে ময়লা ভাগাড় স্থানান্তরিতের জন্য ডিসি খতিয়ানের জায়গা জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে পৌরসভাকে আ্যাকুয়ার করা) ময়লা ফেলতে শ্রীমঙ্গল ইউনিয়নবাসীর পক্ষ থেকে বাধা দেওয়া হয়েছে। আমি প্রশাসনের সাহায্য চেয়েছি, প্রশাসন থেকে সহায়তা পাইনি। ৪০ বছর ধরে এখানে বর্জ্য ফেলা হচ্ছে। হঠাৎ করে এ ইস্যুতে শিক্ষার্থীদেরকে উসকানি দেওয়া হয়েছে। প্রকাশ্যে পৌরসভাকে হুমকি দেওয়া হয়েছে। ইতিমধ্যে ময়লা ফেলার বিকল্প জায়গা না থাকার কারণে শহরে আবর্জনা জমে একটা বিদঘুটে পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। জনগুরুত্বপূর্ণ সার্বজনীন বিষয় সার্বজনীনভাবে সমাধানকল্পে সকল পক্ষের সহায়তা কামনা করেন তিনি।

উল্লেখ্য, এর আগে ৩০ সেপ্টেম্বর শ্রীমঙ্গল সরকারি কলেজ, দি বাডস রেসিডেন্সিয়াল মডেল স্কুল এন্ড কলেজ ও গাউসিয়া সুন্নিয়া দাখিল মাদরাসার সম্মুখ থেকে পৌরসভার দুর্বিষহ ময়লার ভাগার অন্যত্র সরানোর দাবিতে শহরে বিক্ষোভ মিছিল ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করা হয়। এতে ওই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর আন্দোলনরত শিক্ষার্থী, অভিভাবকসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষজন অংশ নেন।

টুডে মিডিয়া গ্রুপ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
[email protected] ☎ ৮৮ ০১৭ ১৪৩৪ ৯৩৯৩
৭/ডি-১ (৭ম তলা), ব্লু ওয়াটার শপিং সিটি,
জিন্দাবাজার, সিলেট - ৩১০০, বাংলাদেশ।
Developed By - IT Lab Solutions Ltd.