Sylhet Today 24 PRINT

সিলেটের চার সীমান্ত দিয়ে আসছে ইয়াবা

নিজস্ব প্রতিবেদক |  ২৩ নভেম্বর, ২০১৮

গত ১১ নভেম্বর সিলেটের জকিগঞ্জ সীমান্তের সেনাপতি চক নামক স্থান থেকে ৬১ হাজার ৪শ’ পিছ ইয়াবা ট্যাবলেট আটক করে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)। ওই সীমান্তের মানিকপুর বর্ডার অভজারভেশন পোস্ট (বিওপি)-এর বিজিবি সদস্যরা ভোরে এই ইয়াবাগুলো উদ্ধার করে। যার আনুমানিক মূল্য প্রায় ১ কোটি ৮৪ লাখ টাকা।
একই দিনে হবিগঞ্জের চুনারুঘাটে ১৪শ’ পিস ইয়াবাসহ এক মাদক ব্যবসায়ীকে আটক করে র‌্যাব।

কেবল ১১ নভেম্বরই সাম্প্রতিক সময়ে সিলেটের ঘনঘনই ধরা পড়ছে বড় বড় ইয়াবার চালান। আটক হচ্ছে মাদক ব্যবসায়ীরা।

গত বুধবার (২১ নভেম্বর) ভোরে নগরের পারাইরচক লালমাটিয়া এলাকায় র‌্যাবের সাথে কথিত বন্দুক যুদ্ধে নিহত হন আব্দুস শহীদ নামের এক ব্যক্তি। তিনি সিলেটের শীর্ষ ইয়াবা ব্যবসায়ী বলে জানিয়েছে র‌্যাব।

আইনশৃঙ্খলা ও সীমান্ত রক্ষীবাহিনীর তথ্য মতে, এখন সিলেট বিভাগের চারটি সীমান্ত দিয়ে ইয়াবা আসছে দেশে। সিলেটের জকিগঞ্জ ছাড়াও সুনামগঞ্জের মধ্যনগর ও টেকেরঘাট এবং হবিগঞ্জের বাল্লা সীমান্ত দিয়ে ভারত থেকে বাংলাদেশশে ইয়াবা আসছে বলে জানিয়েছেন তারা।

বাংলাদেশে ইয়াবা প্রবেশের প্রধানতম রুট হিসেবে কক্সবাজারের টেকনাফ সীমান্ত থেকে ধরা হতো। ওই সীমান্ত দিয়ে মায়ানমার থেকে আসতো মরণনেশা ইয়াবা। তবে সাম্প্রতি সময়ে ওই সীমান্তে কড়াকড়ি আরোপের ফলে টেকনাফ দিয়ে কমেছে ইয়াবার পাচার। এরপরিবর্তে সিলেটের চার সীমান্তকেই বেছে নিয়েছে মাদক পাচারকারীরা।
সিলেট বিভাগের চার সীমান্তের মধ্যে জকিগঞ্জ দিয়েই সবেচেয়ে বেশি ইয়াবা আসছে বলে জানিয়েছেন আইনশ্খৃলা ও সীমান্ত রক্ষীবাহিনীর সদস্যরা। গত বছর থেকেই এসব সীমান্ত দিয়ে দেশে ইয়াবা আসা শুরু হয়। তবে চলতি বছরে তা ব্যাপক আকার ধারণ করেছে।

বিজিবির ১৯ ব্যাটেলিয়ান থেকে প্রাপ্ত তথ্য মতে,  ২০১৭ সালের জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত এই সীমান্তে বিজিবির হাতে আটক হয় ৫২১ পিস ইয়াবা। এরপর জুলাই থেকে ডিসেম্বও পর্যন্ত আটক হয় ১৫ হাজার ৪৬৫ পিস ইয়াবা। আর চলতি বছরের ২১ নভেম্বর পর্যন্ত কেবল বিজিবিই এক লাখের চেয়েও বেশি পিছ ইয়াবা আটক করেছে। চোরাচালানে জড়িত সন্দেহে আটক করা হয়েছে অন্তত ২০ জনকে।

সিলেটের জকিগঞ্জ উপজেলার সঙ্গে ভারতের প্রায় ৫৪ কিলোমিটারের সীমান্ত এলাকা। ভারতীয় অংশে পুরো সীমান্তেই কাঁটাতারের বেড়া রয়েছে। অন্যদিকে বাংলাদেশ অংশে তেমন কোনো সুরক্ষা বেড়াই নেই। এই দীর্ঘ সীমান্ত এলাকায় দুই দেশকে বিভক্ত করেছে কুশিয়ারা আর সুরমা নদী। এই সীমান্ত পাহারা দেয় বিজিবির প্রায় ১৫টি বিওপি। নদীর তীর ধরে একটি বেড়িবাঁধ রয়েছে বাংলাদেশ অংশে। মূলত সেই বাঁধ ধরেই টহল দেন বিজিবি সদস্যরা। কিন্তু বেশ কয়েক বছর ধরে সেই বাঁধের বিভিন্ন অংশ ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় যানবাহন ব্যবহার সম্ভব হয় না। হেঁটেই বিজিবি সদস্যদের টহল দিতে হয়। এই সুযোগ নেয় চোরাকারবারীরা।

ইয়াবা আসার আগে এই সীমান্ত দিয়ে ফেন্সিডিল, হিরোইন ও গরু চোরাচালানের অভিযোগ ছিলো।

এ ব্যাপারে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর সিলেট বিভাগের অতিরিক্ত পরিচালক জাহিদ হোসেন মোল্লা বলেন, সিলেটের কয়েকটি সীমান্ত দিয়ে ইযাবা আসা ইদানীং বেড়ে গেছে। এরমধ্যে জকিগঞ্জ দিয়েই সবচেয়ে বেশি আসছে। এ ব্যাপারে আমরা বারবার বিজিবি ও র‌্যাবের সাথে বৈঠক করে তাদের নজরদারি ও অভিযান বৃদ্ধির অনুরোধ করেছি। তারাও অনেকটা তৎপর হয়েছেন। ফলে ইদানীং সিলেট থেকে ইয়াবার অনেক বড় বড় চালান ধরা পড়ছে।

তিনি বলেন, বিভিন্ন বাহিনীর কড়াকড়ির কারণে টেকনাফ দিয়ে ইয়াবা আসা কমে যাওয়ায়ঢ সিলেটের সীমান্তগুলোকেই নতুন রুট হিসেবে বেছে নিয়েছে মাদক ব্যবসায়ীরা।

তবে সিলেটের সীমান্ত দিয়ে আসা ইয়াবা মায়ানমার থেকে ভারত হয়ে বাংলাদেশে আসছে না ভারতেই বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী রাজ্যগুলোতে উৎপাদিত হচ্ছে এ নিয়ে সন্দিহান আইনশৃঙ্খলা ও সীমান্তরক্ষী বাহিনী।

তাদের কারো মতে, মায়নমার থেকে ইয়াবা প্রবেশ করে ভারতের মিজোরাম রাজ্যে সেখান থেকে আসাম ও মেঘালয় সীমান্ত দিয়ে প্রবেশ করে বাংলাদেশে। আরেক পক্ষের দাবি, জকিগঞ্জ ও বাল্লা সীমান্তের ওপারে ভারতেই গড়ে উঠেছে ছোট ছোট কিছু ইয়াবা কারখানা। সেখানে উৎপাদিন ইয়াবা আসে বাংলাদেশে।

বিজিবির ১৯ ব্যাটেলিয়ানের অধিনায়ক লে: কর্ণেল সাইদ হোসেন বলেন, অনেকদিন ধরেই জকিগঞ্জসহ সিলেটের কয়েকটি সীমান্ত দিয়ে ইয়াবা আসা বেড়ে যাওয়ার খবর পাচ্ছিলাম। আমরা ওই সীমান্তে নজরদারিও বৃদ্ধি করেছি। কিন্তু ছোট ছোট কয়েকটি চালান ধরা পড়লেও বড় চালান ধরতে পারছিলাম না। অবশেষে গত ১১ নভেম্বর আমরা একটি বড় চালান ধরতে সমর্থ হই।

সাইদ হোসেন বলেন, সিলেটের সীমান্ত দিয়ে ইয়াবার চোরাচালান রোধে বিজিবি ও বিএসএফ যৌথভাবে কাজ করছে। ইতিমধ্যে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর সাথে কয়েকবার বৈঠক করেছে বিএসএফ। এছাড়া স্থানীয়দেও মাঝে সচেতনতা তৈরিতে জকিগঞ্জে ইয়াবাবিরোধী লিফলেট বিতরণ করা হয়েছে বলেও জানান লে: কর্ণেল সাইদ হোসেন।

আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সূত্রে জানা যায়, সিলেট ও ভারত দুই সীমান্ত এলাকায়ই রয়েছে বেশকিছু ইয়াবা ব্যবসায়ী। এরমধ্যে জকিগঞ্জ এলাকার অনেক জনপ্রতিনিধি ও প্রভাবশালী ব্যক্তিবর্গও জড়িত রয়েছেন।

তারা জানান, সিলেট অঞ্চলের খুচরা বিক্রেতাদের চাহিদার ভিত্তিতে অর্ডার দেন প্রভাবশালী বিক্রেতারা। ভারতে থাকা ব্যবসায়ীদের কাছে টাকা পাঠানো হয় হুন্ডির মাধ্যমে। টাকা হাতে পেয়েই রাতের আঁধারে কাঁটাতারের উপর দিয়ে ইয়াবা পার করে দেন ভারতীয় ব্যবসায়ীরা। আগেই সেখানে অবস্থান নেয়া পাচার কাজে ব্যবহৃত লোকজন তা বাংলাদেশে নিয়ে আসে।

এ ব্যাপারে র‌্যাব-৯ এর কোম্পানী কমান্ডার এএসপি মো. মনিরুজ্জামান বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে জকিগঞ্জকেই ইয়াবা পাচারের রুট হিসেবে বেছে নিয়েছে মাদক ব্যবসায়ীরা। এ ব্যাপারে র‌্যাব জিরো টলারেন্স নীতি অবলম্বন করেছে। ফলে গত কয়েকমাসে ইয়াবার বেশ কয়েকটি বড় চালান ধরা পড়েছে। মাদক ব্যবসায়ীরাও আটক হয়েছে। ইয়াবা পাচারের গডফাদারদের খোঁজে বের করতে আমরা তৎপর রয়েছি। আশা করছি শীঘ্রই তাদের আটক করতে সক্ষম হবো।

টুডে মিডিয়া গ্রুপ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
[email protected] ☎ ৮৮ ০১৭ ১৪৩৪ ৯৩৯৩
৭/ডি-১ (৭ম তলা), ব্লু ওয়াটার শপিং সিটি,
জিন্দাবাজার, সিলেট - ৩১০০, বাংলাদেশ।
Developed By - IT Lab Solutions Ltd.