Sylhet Today 24 PRINT

কমলগঞ্জে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন, নিষেধাজ্ঞা মানছে না কেউ

কমলগঞ্জ প্রতিনিধি |  ২৫ নভেম্বর, ২০১৮

মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার আলীনগর ইউনিয়নের পাহাড়ি সুনছড়ার বালুঘাট থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করে বিক্রি করছে একটি চক্র। ফলে সরকার হারাচ্ছে প্রচুর পরিমাণের রাজস্ব। এলাকাবাসীর অভিযোগের ভিত্তিতে প্রশাসনিকভাবে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনে আপত্তি দিলেও মানছে না কোন নিষেধাজ্ঞা। সম্প্রতি সুনছড়া বালু ঘাট এলাকা ঘুরে এ তথ্য জানা যায়।

সরেজমিন খোঁজ নিয়ে জানা যায়, আলীনগর ইউনিয়নের চিৎলিয়া গ্রামের আব্দুর রহিম (৫৫), তার ছেলে শামছুদ্দীন (২৫) ও যোগিবিল গ্রামের হামিদ মিয়া (৩৫) প্রতিদিনই এ ছড়া থেকে লোক লাগিয়ে বালু উত্তোলন করেন। উত্তোলিত বালু স্তূপ করে রাখার পর ঠেলাগাড়ি (হাতা গাড়ি), ট্রলি ও ট্রাকযোগে বিভিন্ন স্থানে বিক্রি করেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এলাকাবাসী জানান, হামিদ মিয়ার বাড়ি সুনছড়ার তীরবর্তী বলে তিনি তার বালু শ্রমিক দিয়ে ভোর রাত থেকে সহজেই বালু উত্তোলন করে বাড়ির উঠানের এক কোণে স্তূপ করে রাখেন। পরে প্রতিদিন এক ট্রাক, কয়েক ঠেলা ও কয়েক ট্রলি বালু বিক্রি করেন।

অন্যদিকে চিৎলিয়া গ্রামের আব্দুর রহিম ও তার ছেলে শামছুদ্দীন সুনছড়ার উপর স্থাপিত একটি কালভার্ট এলাকা ও তৎসংলগ্ন এলাকা থেকে অতিরিক্ত বালু শ্রমিক লাগিয়ে প্রচুর পরিমাণে বালু উত্তোলন প্রথমে ছড়ার তীরে স্তূপ করে রাখেন। পরে এ স্তূপ থেকে বালু বিভিন্ন স্থানে বিক্রি করেন। থানার সাথে যোগাযোগ রক্ষা করে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করেন বলে ভয়ে এলাকাবাসী কেউ আপত্তি দেয় না। প্রতিদিন ৮ থেকে ১০ ট্রাক বালু বিক্রি করছেন আব্দুর রহিম ও তার ছেলে শামছুদ্দীন।

জানা যায়, কালভার্টের নিচ থেকে আব্দুর রহিমের অবৈধভাবে বালু উত্তোলনে আপত্তি দেওয়া ছড়া তীরবর্তী আব্দুল মন্নানের ছেলে আনকার আলীকে (২৫) রহিমের লোকজন মারধর করে মাথা ফাটিয়েছিল। সরেজমিন আহত আনকার আলী তার মাথা দেখিয়ে এ অভিযোগও করেন। এ নিয়ে ইউনিয়ন পরিষদে বিচারও হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, কালভার্ট এলাকা দিয়ে ছড়ার পূর্ব তীরে অবৈধভাবে ট্রাক প্রবেশ তারা ইউপি সদস্যের সহায়তায় রাস্তার উপর একটি খুঁটি গেড়েছেন। গত বছর সুনছড়ার বালুঘাট ইজারা হয়েছিল ৮ লাখ টাকায়। এ বছর কোন ইজারা হয়নি। তবে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনকারীরা প্রতিদিন এক ট্রাক বালু বিক্রি করছে ১৬০০ টাকা থেকে ১৭০০ টাকায়। ১ ট্রলি বালু বিক্রি করা হচ্ছে ৫০০ টাকা থেকে ৬০০ টাকায়। আর এক ঠেলা বালু বিক্রি করা হয় ২০০ টাকায়।

কমলগঞ্জ উপজেলা ভূমি অফিসের তহশিলদার বিদ্যা সিনহা বলেন, এলাকাবাসীর অভিযোগের ভিত্তিতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার নির্দেশে তিনি সম্প্রতি তদন্ত এসেছেন।

তিনি আরও বলেন, আশেপাশের এলাকার মানুষজন নিজেদের ঘরের কাজে, রাস্তা, স্কুল ও মসজিদের কাজে ঠেলা গাড়ি দিয়ে কিছু বালু নিয়ে যাচ্ছে। তবে চিৎলিয়া গ্রামের আব্দুর রহিম, তার ছেলে শামছুদ্দীন ও যোগিবিল গ্রামের হামিদ মিয়া নিয়মিত অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করে বিক্রি করছেন। মঙ্গলবার (২০ নভেম্বর) এক অভিযানে এসে বালু উত্তোলনের কিছু সামগ্রী জব্দ করা হয়েছিল।

যোগিবিল গ্রামের হামিদ মিয়ার বাড়িতে গেলে সেখানে বালু রাখার ও বালু পরিবহনে ব্যবহৃত ঠেলা গাড়ি, ট্রলি ও ট্রাকের চাকার দাগও পাওয়া যায়। তবে হামিদ মিয়া বলেন, তিনি নিজের প্রয়োজনে কিছু বালু উত্তোলন করে ব্যবহার করেছেন মাত্র।

অভিযুক্ত আব্দুর রহিম বলেন, তিনি নিয়মিত থানায় যোগাযোগ রক্ষা করে এ ছড়া থেকে বালু উত্তোলন করছেন।

বালুঘাট ইজারা দিলে উপজেলা ভূমি অফিস দিবে। এখানে থানার কোন এখতিয়ার নেই বললে তিনি বলেন, ভূমি অফিস থেকে কোন ইজারা নেননি। তবে নাম প্রকাশ না করে তিনি আরও বলেন, সরকার দলীয় অনেক নেতার সাথে যোগাযোগ রক্ষা করেই তিনি বালু উত্তোলন করছেন।

অবৈধভাবে বালু উত্তোলনকারী আব্দুর রহিমের বক্তব্য সম্পর্কে কমলগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আরিফুর রহমান বলেন, বালুঘাট ইজারা থানা পুলিশের এখতিয়ারভুক্ত নয়। এর দায় দায়িত্ব উপজেলা ভূমি অফিসের। নিজেকে রক্ষা করতেই আব্দুর রহিম মনগড়া কথা বলেছে।

কমলগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আশেকুল হক সুনছড়া থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করে বিক্রির অভিযোগের সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, সরেজমিন তদন্ত করা হয়েছে। দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলেও তিনি জানান।

টুডে মিডিয়া গ্রুপ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
[email protected] ☎ ৮৮ ০১৭ ১৪৩৪ ৯৩৯৩
৭/ডি-১ (৭ম তলা), ব্লু ওয়াটার শপিং সিটি,
জিন্দাবাজার, সিলেট - ৩১০০, বাংলাদেশ।
Developed By - IT Lab Solutions Ltd.