Sylhet Today 24 PRINT

দেওছড়ায় এখনও দেখা মেলেনি অতিথি পাখির

প্রনীত রঞ্জন দেবনাথ, কমলগঞ্জ |  ১২ জানুয়ারী, ২০১৯

পানি শুকিয়ে যাওয়ায় দেওয়াছড়ায় নেই পাখির কোলাহল

মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার শমশেরনগর ও পতনঊষার ইউনিয়নের সংযোগস্থল দেওছড়া জলাশয়। পাহাড়ি এলাকা থেকে উৎপত্তি হয়ে ছড়াটি লাঘাটা নদীতে পতিত হয়েছে। শুষ্ক মৌসুমে এই জলাশয়টি পানি কমে যায়। নিম্নাঞ্চলে লাঘাটা নদীতে বোরো আবাদের জন্য পানি সংরক্ষণ করা হলে পুরো দেওছড়া জলাধারটি টইটুম্বর হয়ে উঠে। ফলে হাজার হাজার অতিথি পাখির বিচরণ দেখা মেলে। শীত মৌসুমে যুগ যুগ ধরে এখানে পাখি এসে সাময়িক সময়ে আবাস গড়ে তুলে। আবার শীত শেষ হওয়ার সাথে সাথে পাখিরাও বিদায় নিতো। কিন্তু এবার পানি না থাকায় শীত মৌসুম শেষের দিকে চলে আসলেও এখনো দেখা মিলেনি অতিথি পাখির।

শনিবার (১২ জানুয়ারি) সকালে দেওছড়ার কেছুলুটি এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, ছড়া ও জলাধার শুকিয়ে গেছে। অন্যান্য বছরের এই সময়ে অতিথি পক্ষীর কিচিরমিচির শব্দ শুনা গেলেও এবার পাখির কোন সাড়াশব্দ নেই। বিভিন্ন স্থান থেকে পাখিরা এসে হাওর থেকে খাদ্য সংগ্রহ ও অবাধে বিচরণ করে। ছড়া ও জলাধারকে কেন্দ্র করে এখানে নানা জলজ উদ্ভিদ, কলমি জাতীয় ঝোপজঙ্গল ও পলি জমে ভরাট ও সংকোচন হতে চলেছে। এখানে রয়েছে প্রাকৃতিক মাছের আবাসস্থল। তবে পানি সংকটে মাছ, জলজ উদ্ভিদ ও পাখির আবাসস্থল বিলুপ্ত হতে চলেছে। মাছ ধরা, জলাশয় ইজারা, মানুষের হাল্লা চিৎকার, আনাগোনা ও মৌসুম পরিবর্তনের কারণে মৌলভীবাজারের হাইল হাওর, হাকালুকি হাওর থেকে অতিথি পাখির বিচরণ কমে গেছে। অব্যাহত হারে মাছ ধরা, জলাশয় ইজারা নেওয়া, হাল্লা চিৎকার, ব্যাপক আনাগোনা, পাখি শিকারের চেষ্টা ও সম্প্রতি সময়ে আবহাওয়া পরিবর্তন এসব মিলিয়ে কমে গেছে অতিথি পাখির বিচরণ। দেশীয় বিভিন্ন প্রজাতির পাখির সাথে বিদেশী প্রজাতির পাখির কোলাহলপূর্ণ পরিবেশ তৈরি হয়। এসব পাখির মধ্যে অধিকাংশই পাতি সরালি। পতনঊষার ও শমশেরনগর ইউনিয়নের ধূপাটিলা ও কেছুলুটি গ্রামের সংযোগস্থলে পাহাড়ি ছড়া ও ছোট ছোট জলাশয়ে খাবার ও নিরাপদ বিচরণস্থল থাকায় হাজার হাজার পাখি আবাসভূমি গড়ে। এই জলাশয়ে নানা জাতের উদ্ভিদ ও প্রাণির আবাস। এখানে পাতি সরালি, বক, পানকৌড়ি সহ কয়েকটি প্রজাতির পাখি দেখা যায়। ঘাস, লতাগুল্ম, মাছ সহ নানা জাতের জলজ উদ্ভিদ পাখির খাবার যোগাতে সহায়তা করে। ফলে যুগ যুগ ধরে এখানে পাখি আসে আর যায়। তবে বোরো আবাধের জন্য লাঘাটা নদীতে পানি সংরক্ষণ শুরু হয়নি। ফলে একদিকে বিঘ্নিত হচ্ছে চাষাবাদ অন্যদিকে হারিয়ে যাচ্ছে প্রাকৃতিক ভাবে গড়ে উঠা অতিথি পাখির আবাসস্থল।

পরিবেশ সাংবাদিক ফোরাম, মৌলভীবাজার এর সাধারণ সম্পাদক নুরুল মোহাইমীন মিল্টন বলেন, দেওছড়া জলাশয় অতিথি পাখিদের একটি নিরাপদ আবাসস্থল। তবে শিকারিদের অপতৎপরতা, ছড়া ও জলাশয় ভরাট এবং পরিবেশ বিপর্যয় জনিত কারণে দিন দিন তা সংকুচিত হয়ে আসছে। সরকারি উদ্যোগে ছড়া ও জলাশয় সংস্কারের মধ্য দিয়ে অতিথি পাখিদের নিরাপদ আবাসস্থল গড়ে তোলা সম্ভব।

স্থানীয়দের মতে বোরো আবাদের জন্য পানি সংরক্ষণের উদ্যোগ নেওয়া হলে এ সময়ের মধ্যেও অতিথি পাখি এসে ভিড় জমাবে। মুহিবুর রহমান নামে এক বাসিন্দা জানান, শীত মৌসুমে অতিথি পাখির কিচিরমিচির শব্দে তাদের ঘুম ভাঙতো। এবছর এখনও পাখিদের দেখা মেলেনি। তার একটাই কারণ ছড়া ও জলাশয়ে পানি নেই। তিনি জানান, সুদীর্ঘকাল থেকে এখানে শীত মৌসুমে অতিথি পাখির দল এসে আবাস গড়ে। আবার শীত বিদায় নেয়ার সাথে সাথে তারাও বিদায় নেয়।

বণ্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগ, সিলেট এর সহকারী বিভাগীয় বন সংরক্ষক আনিসুর রহমান বলেন, এ ব্যাপারে সরেজমিন পরিদর্শন করে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।

টুডে মিডিয়া গ্রুপ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
[email protected] ☎ ৮৮ ০১৭ ১৪৩৪ ৯৩৯৩
৭/ডি-১ (৭ম তলা), ব্লু ওয়াটার শপিং সিটি,
জিন্দাবাজার, সিলেট - ৩১০০, বাংলাদেশ।
Developed By - IT Lab Solutions Ltd.