Sylhet Today 24 PRINT

পুরনো কারাগারের জায়গায় হচ্ছে না উন্মুক্ত উদ্যান, নাগরিক সমাজের ক্ষোভ

শাহ শরীফ উদ্দিন |  ১৩ জানুয়ারী, ২০১৯

সিলেটের কেন্দ্রীয় কারাগার স্থানান্তর করে কারাগারের জায়গায় উন্মুক্ত উদ্যান গড়ে তোলার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন সদ্য বিদায়ী অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। উদ্যানহীন সিলেটে এই উদ্যানটি হবে নগরীর ফুসফুস- এমনটিও বলেছিলেন মুহিত।

প্রতিশ্রুতি মোতাবেক নগরীর অদূরের বাদাঘাটে নতুন কারাগারও নির্মাণ করেন মুহিত। শুক্রবার পুরনো কারাগার থেকে নতুন কারাগারে বন্দি স্থানান্তর করা হয়। তবে বন্দি গেলেও পুরনো কারাগারের জায়গায় বহুল প্রত্যাশিত উন্মুক্ত উদ্যান হচ্ছে না। এটি কারাগার হিসেবেই বহাল রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কর্তৃপক্ষ। এতে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন সিলেটের নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা।

তাঁরা বলছেন ব্রিটিশ উপনিবেশ আমলে জনবসতি কম থাকায় এখানে কারাগার করার যৌক্তিকতা থাকলেও এখন জনসংখ্যার হিসেবে এটি এখন ব্যবহার অনুপযোগী। ফলে সাবেক অর্থমন্ত্রী কারাগার স্থানান্তর ও পুরনো কারাগারের স্থলে উন্মুক্ত উদ্যান করার যে অঙ্গীকার দিয়েছিলেন তা ছিলো যৌক্তিক এবং সময় উপযোগী।

এ ব্যাপারে সিলেট জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি অ্যাডভোকেট এমাদউল্লাহ্ শহিদুল ইসলাম শাহীন বলেন, সাবেক অর্থমন্ত্রী উন্মুক্ত উদ্যান করার যে ঘোষণা দিয়েছিলেন তা ছিলো সিলেটবাসীর জন্য একটি সুখের সংবাদ। যখন এ কারাগার স্থাপন করা হয় তখন বন্দি কম ছিলো। কিন্তু ২২৯ বছর পর বন্দি আধিক্যের কারণে এটির পরিবেশ এখন চরম অস্বাস্থ্যকর।

তিনি বলেন, নতুন কারাগারে বন্দি স্থানান্তরের পর পুরনোটির জায়গায় উন্মুক্ত উদ্যান গড়ে তোলা হবে এটিই প্রত্যাশা নগরবাসীর। তবে এই জায়গায় কারাগারই থাকলে তা জনগণকে হতাশ করবে। জনগণ দীর্ঘদিন থেকে যে আশা করে আসছে তা ভঙ্গ করা হবে। কারাগার হিসেবে এটি ব্যবহার হবে এ খবরে আমরা অনেকটা আশাহত হয়েছি।

আইনজীবী সমিতির সাবেক এই সভাপতি আরও বলেন, অর্থমন্ত্রী বিভিন্ন সভায় এটাও বলেছিলেন এখানে কোন দালান থাকবে না। একদম খোলামেলা পরিবেশ থাকবে। কিন্তু বর্তমানে এর বিপরীত সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।

সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) সিলেটের সভাপতি ফারুক মাহমুদ চৌধুরী বলেন, কারাগার স্থানান্তর করে পুরনো এ কারাগারের স্থল হবে নগরবাসীর ফুসফুস। এখানে উন্মুক্ত উদ্যান হবে। জনসাধারণ হাঁটাচলা করবে এটি সাবেক অর্থমন্ত্রী ঘোষণা দিয়েছিলেন। কিন্তু বর্তমানে এ সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করে কারাগার-২ রাখার সিদ্ধান্ত হতাশ করেছে।

তিনি আরও বলেন, কারাগারের অনেক জায়গা, এখানে একটি মিউজিয়াম এবং উন্মুক্ত উদ্যান গড়ে তুলা হলে নগরবাসী উপকৃত হবে।

নাগরিক সমাজের পক্ষ থেকে এমন দাবি জানানো হলেও কর্তৃপক্ষ বলছে পুরনো এ কারাগারের স্থলে উন্মুক্ত উদ্যান নয় বরং এটি কারাগার-২ হিসেবে ব্যবহার করা হবে। সংস্কারের মাধ্যমে পুনরায় লোকবল নিয়োগ দিয়ে এটিকে ব্যবহার উপযোগী করা হবে।

পুরনো এ কারাগার সংস্কারে ইতোমধ্যে একটি প্রকল্পও প্রক্রিয়াধীন রয়েছে বলে জানিয়েছেন সিলেটের সিনিয়র জেল সুপার আব্দুল জলিল। তিনি বলেন, উন্মুক্ত উদ্যান গড়ার লক্ষ্যে সাবেক অর্থমন্ত্রী প্রধানমন্ত্রী বরাবর একটি ডিও লেটার লিখেছিলেন। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী এখানে কারাগার-২ হিসেবে ব্যবহারের সিদ্ধান্ত দিয়েছেন।

সিনিয়র এ জেল সুপার আরও বলেন, ফেনি, মাদারীপুর, কিশোরগঞ্জ, দিনাজপুর, সিলেটসহ দেশের ৫টি পুরনো কারাগার স্থানান্তর করা হয়েছে। সবগুলাই কারাগার-২ হিসেবে ব্যবহারের সিদ্ধান্ত দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। নতুন করে লোকবল নিয়োগ দিয়ে এটিকে পুনরায় ব্যবহার করা হবে বলে জানান তিনি।

এ ব্যাপারে সিলেটের জেলা প্রশাসক কাজী এমদাদুল ইসলাম বলেন, শহরে একটি উন্মুক্ত উদ্যান থাকা খুবই জরুরি। এ ব্যাপারে সিটি কর্পোরেশন থেকে উদ্যোগ গ্রহণ করা প্রয়োজন। তবে কারাগারের স্থলে উন্মুক্ত উদ্যান করার যে প্রস্তাব ছিলো তা বাতিল করা হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, আপাতত এটিকে কারাগার-২ হিসেবেই ব্যবহারের সিদ্ধান্ত নিয়েছে মন্ত্রণালয়।

টুডে মিডিয়া গ্রুপ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
[email protected] ☎ ৮৮ ০১৭ ১৪৩৪ ৯৩৯৩
৭/ডি-১ (৭ম তলা), ব্লু ওয়াটার শপিং সিটি,
জিন্দাবাজার, সিলেট - ৩১০০, বাংলাদেশ।
Developed By - IT Lab Solutions Ltd.