বিয়ানীবাজার প্রতিনিধি | ২৩ জানুয়ারী, ২০১৯
সিলেটের বিয়ানীবাজারে কুশিয়ারা নদীর ভাঙ্গনে তিন ইউনিয়নের বেশ কিছু এলাকায় ভাঙন দেখা দিয়েছে। নদী থেকে অপরিকল্পিত ভাবে বালু উত্তোলনে পানি কমার সঙ্গে সঙ্গে ভাঙনের তীব্রতা বেড়ে যাওয়ায় শঙ্কিত এলাকাবাসী। উপজেলার শেওলা ইউনিয়নের কাকরদিয়া ও তেরাদল এবং কুড়ারবাজার এলাকার আঙ্গারজুর গ্রামের সড়ক নদী ভাঙনে বিলীন হয়েছে। তেরাদল গ্রামের মসজিদও রয়েছে নদী ভাঙনের হুমকির মুখে।
এলাকাবাসীর অভিযোগ, নদী থেকে ড্রেজার দিয়ে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করায় ভাঙন দেখা দিয়েছে। গত কয়েক বছর থেকে কুশিয়ারা নদী থেকে বৈধ ও অবৈধ পন্থায় অপরিকল্পিত ভাবে বালু উত্তোলন করায় উপজেলার দুবাগ, শেওলা ও কুড়ারবাজার ইউনিয়নের প্রায় ২০টি গ্রামে ভাঙন দেখা দেয়। শীতকালে নদীর পানি শুকিয়ে গেলে এসব এলাকায় ভাঙনের মাত্রা বৃদ্ধি পায়। ইতোমধ্যে ভাঙন কবলিত এলাকার রাস্তা, বসতবাড়ি, মসজিদ, সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, মাদ্রাসা, কবরস্থানসহ ফসলি জমি বিলীন হয়েছে। এলাকাবাসী ভাঙন রোধে কার্যকর কোনো পদক্ষেপ না নেওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায় শেওলা ইউনিয়নের কাকরদিয়া, তেরাদল এবং কুড়ারবাজার ইউনিয়নের আঙ্গারজুর এলাকায় নদীভাঙনে বিলীন হয়েছে গ্রামের চলাচলের একমাত্র রাস্তা। এলাকাবাসী বিভিন্ন বাড়ির আঙিনা দিয়ে চলাচল করছেন। কাকরদিয়া গ্রামের জামে মসজিদে ফাটল দেখা দিয়েছে। যেকোনো সময় মসজিদটি নদীতে বিলীন হওয়ার শঙ্কার রয়েছে।
স্থানীয়রা নদী ভাঙন রোধে প্রশাসনের কোনো উদ্যোগ না নেওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, গ্রাম টিকিয়ে রাখতে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিসহ প্রশাসনের দায়িত্বশীলদের ভাঙনরোধে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানানো হলেও কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। কুশিয়ারা নদীর ভাঙনের কবলে রয়েছে কুড়ারবাজার ইউনিয়নের আকাখাজানা, লাউঝারি, আঙুরা মোহাম্মদপুর, আঙুরা, গোবিন্দ্রশ্রী, দেউলগ্রাম ও গড়বন্দ গ্রামের বসতি, রাস্তা, কবরস্থান ও বাজার। নদীভাঙনে কুড়ার বাজার ও ফাঁড়ির বাজারের অর্ধেক নদীতে বিলীন হয়েছে।
নদী ভাঙনের ঝুঁকিতে রয়েছে কুড়ারবাজার উচ্চ বিদ্যালয়, পঞ্চখন্ড বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় এবং জামিয়া মাদানিয়া আঙুরা কওমি মাদ্রাসা ভবন। এছাড়াও শেওলা ইউনিয়নের বালিঙ্গা, দুবাগ ইউনিয়নের নয়াদুবাগ, দক্ষিণচরিয়া, মেওয়া এলাকার বসতবাড়ি ও রাস্তা হুমকির মুখে রয়েছে।
কাকরদিয়া গ্রামের ইকবাল হোসেন বলেন, ভাঙন কবলিত জায়গার কাছেই কয়েক মাস থেকে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। নদী থেকে ড্রেজার দিয়ে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করা হলেও কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না। তিনি জানান, ড্রেজার দিয়ে রাতের বেলাও অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করা হয়। এতে তীব্র শব্দের কারণে এলাকাবাসী অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছেন।
কুড়ার বাজার ইউনিয়নের চেয়ারম্যান এ.এফ.এম আবু তাহের বলেন, গ্রামগুলোতে প্রতিরক্ষা বাঁধ নির্মিত না হওয়ায় ঝুঁকি বেড়েছে। এরই মধ্যে কুশিয়ারা নদী-তীরবর্তী কুড়ারবাজার ইউনিয়নের প্রায় ২০ কিলোমিটার এলাকায় তীব্র ভাঙন দেখা দিয়েছে। অনেকে বসতি ছেড়ে অন্যত্র যাচ্ছেন।
বিয়ানীবাজার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কাজী আরিফুর রহমান বলেন, ‘নদী ভাঙন রোধ করতে এরই মধ্যে পানি উন্নয়ন বোর্ড সিলেটকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আশা করি দ্রুত সময়ের মধ্যে ভাঙন কবলিত এলাকায় ভাঙন রোধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
বালু উত্তোলনের বিষয়ে তিনি বলেন, নদীর চিহ্নিত বালুমহাল থেকে ইজারদাররা বালু উত্তোলন করছেন। যদি তারা নিয়ম না মেনে বালু উত্তোলন করেন তাহলে আমরা ব্যবস্থা নিতে পারি। এ ছাড়া কেউ অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করলে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। প্রয়োজনে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করব।’