Sylhet Today 24 PRINT

সিলেটে উপজেলা নির্বাচনে আগ্রহ নেই ভোটারদের

শাকিলা ববি |  ০৪ মার্চ, ২০১৯

আর মাত্র ১৪দিন পরেই সিলেটের উপজেলাগুলো নির্বাচন। অথচ কোথাও নেই তেমন কোনো নির্বাচনী আমেজ। এই নির্বাচন নিয়ে ভোটারদের তেমন কোনো আগ্রহই নেই। প্রার্থীদের অনেকেও দায়সারা প্রচারণা চালাচ্ছেন।

রোববার দিনভর সিলেটের বিভিন্ন উপজেলা ঘুরে, প্রার্থী ও ভোটারদের সাথে কথা বলে এ চিত্র পাওয়া গেছে। আগামী ১৮ মার্চ সিলেটের ১২টি উপজেলা পরিষদে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।

সিলেট সদর উপজেলার সীমানা শুরু নগরীর পাশ্ববর্তী আখালিয়া থেকে। রোববার আখালিয়া পেরিয়ে টুকেরবাজার তেমুখি এলাকায় দেখা যায় কয়েকজন প্রার্থীর সামান্য কিছু পোস্টার ঝুলানো। সিলেট-সুনামগঞ্জ আঞ্চলিক সড়কের তেমুখি পয়েন্টে একজন প্রার্থীর জন্য ভোট চেয়ে মাইকিং করা হচ্ছে। কয়েকটি পয়েন্টে প্রার্থীদের কিছু ব্যানার ঝুলে আছে। বাদাঘাট, বাওরকান্দি, বাইশটিলা এলাকার রাস্তায় ২ থেকে ৩ লাইন পোস্টার বাতাসে দোলছে। এই হলো সিলেট সদর উপজেলার নির্বাচনী আমেজ।

অথচ নির্বাচনের বাকি আর মাত্র ১৪ দিন। পঞ্চম উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে এবারই প্রথম চেয়ারম্যান পদে দলীয় প্রতীকে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে হচ্ছে। সাধারণত নির্বাচন আসলেই প্রার্থীদের প্রচার প্রচারণা, ব্যানার, পোস্টারে ছেয়ে যায় নির্বাচনী এলাকা। আর ভোটরাদের মদ্য দেখা দেয় ব্যাপক আগ্রহ-উদ্দীপনা। এলাকার চায়ের দোকানগুলো জমজমাট থাকে নির্বাচনী আলোচনায়। মাইকিংয়ের আওয়াজ আর ভোটাদের বাড়ি প্রার্থীদের পদচারনায় মূখর হয়ে উঠে।

অথচ এবার এসবের একেবারে বিপরীত চিত্র। সদর উপজেলার বেশ কয়েকজন ভোটারদের সাথে আলাপকালে জানা গেছে, কবে নির্বাচন এই তথ্যই তাঁরা জানেন না। জানার আগ্রহও নেই তাদের।

সদর উপজেলার বেশ কয়েকটি গ্রামের ভোটারদের সাথে কথা বলে জানা যায়, গত জাতীয় নির্বাচনের একপেশে ফলাফল, উপজেলা নির্বাচনে বিএনপিসহ বিরোদী জোট অংশ না নেওয়া, সুষ্ঠু নির্বাচন নিয়ে শঙ্কা, ভোট কেন্দ্রে গিয়ে ভোট দিতে না পারার শঙ্কাসহ নানা কারণে এবার উপজেলা নির্বাচন নিয়ে তাদের তেমন কোনো আগ্রহ নেই।

এদিকে ভোটাদের নির্বাচনে আগ্রহ কমে যাওয়ার বিপাকে পড়েছেন প্রার্থীরাও। কি পরিমান ভোটার ভোট কেন্দ্রে হাজির হবেন এই নিয়েও শঙ্কায় তাঁরা। ফলে আগের নির্বাচনগুলোর মতো এই নির্বাচনে প্রচার প্রচারণার জমজমাট ভাবও লক্ষ্য করা যাচ্ছে না।

ভোটারদের আগ্রহ কমে যাওয়া নিয়ে একেক প্রার্থী একেকধরণের মত দিয়েছেন। তবে প্রতিদন্দ্বী প্রার্থী মাঠে না থাকা, বিএনপির নির্বাচনে অংশ না নেওয়া ও যোগ্য প্রার্থীকে প্রতীক না দেওয়ার কালণেই এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে বলে মনে করছেন বেশিরভাগ প্রার্থী।

সিলেট আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, মনোনয়নপত্র যাচাই বাছাই ও প্রত্যাহার শেষে সিলেটের ১২ উপজেলায় নির্বাচনে প্রতিদন্দ্বিতার জন্য প্রতীক বরাদ্দ পেয়েছেন ৫৯ চেয়ারম্যান প্রার্থী। এসব প্রার্থীদের মধ্যে চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগের ১২ জন, মহাজোট শরীক জাতীয় পার্টির ৪ জন, ইসলামী ঐক্যজোটের (আইওজে) প্রার্থী ৬ জন এবং ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি-বাংলাদেশের (ন্যাপ-ভাসানী) এক প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতায় রয়েছেন। এছাড়া নির্বাচন কমিশনে জমা দেওয়া মনোনয়নপত্রে চেয়ারম্যান পদে নিজেদের ‘স্বতন্ত্র প্রার্থী’ হিসেবে উল্লেখ করেছেন ৩৬ জন। সিলেট জেলার ১২ উপজেলার চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান ৩টি পদে মোট ২০১ প্রার্থী মনোনয়ন জমা দিয়েছিলেন। এর মধ্যে উপজেলা চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতার জন্য মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছিলেন ৬৭ জন।

টুকের বাজার এলাকার ভোটার সবজি ব্যবসায়ী সুজন মিয়া বলেন, ‘ভোটের কোনো হাওয়া নাই এলাকায়। প্রার্থীদেরও তেমন নড়াচড়া নাই। তেমুখি পয়েন্টে কয়েকটা পোস্টার ঝুলানো আছে দেখছি তবে নির্বাচন কবে জানি না।’

সামাউরাকান্দি এলাকার গৃহিনী শামছুন্নাহার বেগম কবে নির্বাচন প্রশ্ন করে বলেন, আবারও নির্বাচন আইলোনি। কোনো মাইকিং তো শুনলাম না। বাড়িতও কেউ আইল না ভোট চাওয়ার লাইগ্গা। তিনি বলেন, এখন পাশ করতে জনগনের ভোট লাগে না। আগের নির্বাচনেও ভোট দিতে পারছি না। সেন্টারে গিয়া দেখি আমার ভোট দেওয়া হই গেছে।

বাওরকান্দি এলাকার চায়ের দোকানি শিপন মিয়া। তিনি বলেন, ‘এবার ভোট দেওয়াত না, ভোট দেখতে যাইমু। কে কারে কতটা ভোট দিল তা দেখমু। গত নির্বাচনেও হাটির সবাই মিল্লা ভোট দিতে কেন্দ্রে গেছিলাম। গিয়া দেখি একজনে ওই আমারার সবার ভোট দিলাইছে।’

শিপন মিয়ার পাশে বসা আরেকজন যুবক কথায় যোগ করলেন, ‘আরে আপ্তাবত একলাই ৮০০ ভোট দিছে। সেও ইবার নির্বাচনে দাঁড়াইছে। সেদিন আছিল ভোট চাওয়ার লাইগ্গা তারে কইয়া দিছি, গত নির্বাচনের মত ই নির্বাচনেও তুমি সব ভোট দিলাইও।’

ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলার চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী শাহ মুজিবুর রহমান জকন বলেন, ‘বিভিন্ন পদে প্রার্থী বেশি থাকলে নির্বাচনী আমেজ বেশি থাকে। যেমন আমার এলাকায় ৭জন চেয়ারম্যান প্রার্থী আছেন। প্রতীক পাওয়ার পর থেকে প্রতিদিনই মিটিং, মিছিল, গনসংযোগ করছি। আমার মত সবাই সবার প্রচারণায় ব্যস্থ।’

সিলেট সদর উপজেলার চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী আশফাক আহমদ বলেন, ‘আমরাত প্রচার প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছি। ভোটারদের আকৃষ্ট করার চেষ্টা করছি। তবে আমার মনে হচ্ছে প্রতিদন্দ্বি প্রার্থীরা মাঠে না থাকায় নির্বাচনে ভোটারদের আগ্রহ হারাচ্ছেন।’

সিলেট সদর উপজেলার চেয়ারম্যান পদে স্বতন্ত্র ব্যনারে আওয়ামী লীগের বিদ্রেহী প্রার্থী অ্যাডভোকেট নূরে আলম সিরাজী বলেন, ‘ভোটারদের নির্বাচনে আগ্রহ না থাকার কারণগুলোর মধ্যে সঠিক প্রার্থীর কাছে প্রতীক না যাওয়াটা হচ্ছে প্রধান কারণ। আমাদের নেত্রী প্রার্থীতা উন্মুক্ত করে দিয়েছেন। তাই আমি বিদ্রোহী না হয়ে বঙ্গবন্ধুর আর্দশ লালন করে জনগনের ইচ্ছার প্রতিফলন ঘটাতে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করছি। সারা বাংলাদেশে মনোনয়ন দিতে গিয়ে দু একটি জায়গায় ভুল প্রার্থীকে মনোনয়ন দেওয়াটা অস্বাভাবিক না। তাই এই সদর উপজেলার জনগনের চাওয়া পাওয়ার প্রতিফলন ঘটাতে, আস্থার প্রতীক হিসেবে নির্বাচন করছি। ভোটারদের আগ্রহ বাড়াতে আমি গনসংযোগকালে সকলকে বলছি বর্তমান সরকার স্বচ্ছ ও উৎসবমূখর পরিবেশে নির্বাচন করতে চায়।’

গোয়াইনঘাট উপজেলার চেয়ারম্যান পদে স্বতন্ত্র প্রার্থী বিএনপি নেতা শাহ আলম স্বপন বলেন, ‘বিএনপি নির্বাচনে না যাওয়ায় এই নির্বাচনে ভোটারদের আগ্রহ নেই। এখন নিজেদের জন্য নিজেরাই ভোটারদের উদ্ভূদ্ধ করছি। বিএনপি নির্বাচনে অংশ না নিলেও আমি একজন বিএনপি প্রার্থী। এই বিএনপি সমর্থন করার জন্য গত নির্বাচনে অনেক নির্যাতন নিপীড়ন সহ্য করতে হয়েছে। আমি মনে করি সারা বাংলাদেশের মধ্যে এই উপজেলাতে বেশি মামলা হামলা হয়েছে জাতীয় নির্বাচনে। এসব নির্যাতনের শিকার লোকগুলোর একটা আশ্রয়স্থল থাকা দরকার এবং সেজন্য আমি নির্বাচন করছি।’

এ ব্যাপারে জেলা রির্টানিং কর্মকর্তা অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক সন্দীপ কুমার সিংহ বলেন, ‘ভোটার কেন নির্বাচনের প্রতি আগ্রহ হারাচ্ছেন এ ব্যাপারটা বলা মুশকিল। আমরা নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে প্রার্থীদের আচরণবিধি লঙ্গন থেকে শুরু করে সবকিছু আমরা দেখছি। আশা করছি নির্বাচনের তারিখ সন্নিকটে আসার সাথে সাথে ভোটারদেরও আগ্রহ বাড়বে।’

টুডে মিডিয়া গ্রুপ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
[email protected] ☎ ৮৮ ০১৭ ১৪৩৪ ৯৩৯৩
৭/ডি-১ (৭ম তলা), ব্লু ওয়াটার শপিং সিটি,
জিন্দাবাজার, সিলেট - ৩১০০, বাংলাদেশ।
Developed By - IT Lab Solutions Ltd.