Sylhet Today 24 PRINT

টাকার অভাবে চিকিৎসা হচ্ছে না সেই খাদিজার

রিপন দে |  ০৯ মার্চ, ২০১৯

২০১৬ সালের ৩ অক্টোবর সিলেটের মুরারিচাঁদ (এমসি) কলেজ ক্যাম্পাসে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগ নেতা বদরুল আলমের চাপাতির কোপে মারাত্মকভাবে আহত হওয়া খাদিজা টাকার অভাবে চিকিৎসা করাতে পারছেন না। এমনকি অর্থাভাবে চিকিৎসা করাতে না পেরে হারাতে বসেছেন বা হাতের স্বাভাবিক কর্মক্ষমতা।

শুক্রবার (৮ মার্চ) সিলেটটুডে টোয়েন্টিফোরের প্রতিবেদকের সাথে আলাপচারিতায় এসব কথা জানান মৃত্যুকে জয় করে আসা সিলেট মহিলা কলেজের ছাত্রী খাজিদা বেগম নার্গিস।

তিনি এই প্রতিবেদককে জানান, "আমি এখন তেমনটা ভাল নেই। আমি ততদিনই ভালো ছিলাম যতদিন পর্যন্ত আমি ফ্রি চিকিৎসা পেতাম, আর মিডিয়া আমার খোজ খবর রাখতো ও তাদের পত্র পত্রিকায় আমার খবর ছাপা হতো।"

তিনি জানান, "বর্তমানে আমি টাকার অভাবে চিকিৎসা করাতে পারছি না। আমার বাম হাতের অবস্থা এতটাই নাজুক সপ্তাহে রুটিন চেকআপের জন্য যে তিন দিন থেরাপি নিতে যাওয়ার কথা সেটাও ঠিকমতো করাতে পারছি না। কিছুদিন আগে অনেক কষ্ট করে দেড় লক্ষ টাকা জমিয়ে তা দিয়ে বাম হাতের একটি অপারেশন করিয়েছি। কিন্তু তাতেও হাত ভাল হয়নি। আমি আমার হাতের আঙ্গুল সোজা করতে পারছি না। এখন আমার উন্নত চিকিৎসার জন্য ন্যূনতম ৫ লক্ষ টাকা প্রয়োজন। যা আমার সৌদি আরব প্রবাসী বাবার পক্ষে সম্ভব হচ্ছেনা। কারণ আমার বাবা সেখান থেকে যে টাকা বাড়িতে পাঠায় সে টাকা দিয়ে আমরা আমাদের এতো বড় পরবার সামলাতেই হিমশিম খাই। তারপর আমার চিকিৎসা।"

সিলেটটুডে টোয়েন্টিফোরের সাথে আলাপকালে মানসিক ভাবে ভেঙে পরা খাদিজা বলেন, "প্রায় ২০ জনের যৌথ পরিবারের খরচ চালানোর পর আমার চিকিৎসার খরচ চালিয়ে যাওয়া আব্বুর পক্ষে সম্ভব হচ্ছেনা।" তাই টাকার অভাবে শারীরিক ভাবে এখন আর সুস্থ জীবনে ফিরতে পারছেনা না বলেও জানান খাদিজা।

সিলেট সরকারি মহিলা কলেজে থেকে স্নাতক ফাইনাল পরীক্ষা দিয়ে ফলাফলের অপেক্ষা করা খাদিজা বলেন,  "আমি এখনো সব সময় ভয়ে ভয়ে থাকি। যেখানেই যাই মনে ভয়ের কাজ করে। যদিও চলাফেরা করতে এখনো একটু কষ্ট হয়। তাও খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে হাঁটার চেষ্টা করি।"

এসময় নিজের বাঁ হাত দেখিয়ে খাদিজা বলেন,  "আমার বাঁ হাতের আঙ্গুলগুলোকে স্বাভাবিকভাবে সোজা করতে পারি না। এমনকি বাম হাত দিয়ে কোনো কাজও করতে পারি না। এছাড়াও মাথায় ব্যথা লেগেই থাকে। প্রায়ই স্মৃতিবিভ্রাট ঘটে।"

খাদিজা বলেন, "শুরুতে আমার চিকিৎসায় সরকারসহ সবাই পাশে দাঁড়ালেও, চিকিৎসার ব্যয় দিলেও এখন আর কেউ খোঁজ করছে না। তাই এখন আমার পুরোপুরি সুস্থ হয়ে উঠা এখনও অনিশ্চিতই রয়ে গেছে।

এসময় খাদিজার ছোট ভাই নুর আহমেদ এ প্রতিবেদকে বলেন, "আমাদের যৌথ পরিবারের ২০ জনের খরচ চালিয়ে এবং আমাদের লেখাপড়ার খরচ চালানোর পর আব্বুর পক্ষে আপুর চিকিৎসার এত খরচ চালানো সম্ভব হচ্ছেনা। সরকার যদি সাহায্য করে তবেই সে আবার সুস্থ ও স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারবে।"

এদিকে খানিজারও দুইচোখ ভরা স্বপ্ন সরকারসহ দেশের হৃদয়বান ব্যক্তিরা আবারো পাশে দাঁড়াবে তার শুরু হবে তার চিকিৎসা, সেও ফিরবে তার অন্যান্য বন্ধুদের মতো স্বাভাবিক জীবনে।

উল্লেখ্য, ২০১৬ সালের ৩ অক্টোবর বিকেলে সিলেট এমসি কলেজে হামলার শিকার হন সিলেট সরকারী মহিলা কলেজের স্নাতক শ্রেণীর ছাত্রী খাদিজা বেগম নার্গিস। খাদিজাকে কোপানোর দায়ে ঘটনাস্থল থেকে জনতা শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সহ-সম্পাদক বদরুল আলমকে গণপিটুনি দিয়ে পুলিশে সোপর্দ করে। বদরুলের চাপাতির আঘাতে খাদিজার মাথার খুলি ভেদ করে মস্তিষ্কও জখম হয়। খাদিজাকে কোপানোর একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশ পেলে দেশজুড়ে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়।

হামলার পর প্রথমে সিলেট ওসমানী হাসপাতালে ও পরে ঢাকায় স্কয়ার হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয় খাদিজাকে। সেখানে ৪ অক্টোবর বিকালে অস্ত্রোপচার করে লাইফ সাপোর্টে রাখা হয় তাকে। পরে ১৩ অক্টোবর তার লাইফ সাপোর্ট খোলার পর ‘মাসল চেইন’ কেটে যাওয়া তার ডান হাতে অস্ত্রোপচার করা হয়।

ঢাকার স্কয়ার হাসপাতালে তিন দফা অস্ত্রোপচারের পর শরীরের বাঁ পাশ স্বাভাবিক সাড়া না দেওয়ায় চিকিৎসার জন্য স্কয়ার থেকে সাভারের সিআরপিতে পাঠানো হয় খাদিজাকে। সিআরপিতে তিন মাসের চিকিৎসা শেষে গত ২৪ ফেব্রুয়ারি বাড়ি ফেরেন কলেজছাত্রী খাদিজা।

এদিকে, ঘটনার পরদিন খাদিজার চাচা আব্দুল কুদ্দুস বাদী হয়ে দণ্ডবিধির ৩০৭, ৩২৪ ও ৩২৬ ধারায় বদরুলকে একমাত্র আসামি করে শাহপরান থানায় মামলা করেন। ওইদিনই বদরুলকে বহিষ্কার করে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।

৫ অক্টোবর আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন বদরুল। ৮ নভেম্বর মামলার তদন্ত কর্মকর্তা নগরীর শাহপরান থানার এসআই হারুনুর রশীদ আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। পরে ১৫ নভেম্বর আদালত অভিযোগপত্র গ্রহণ করেন। ২৯ নভেম্বর আদালত বদরুলের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর নির্দেশ দেন।

২০১৭ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি আদালতে সাক্ষ্য প্রদান করেন খাদিজা। এর মাধ্যমে মামলার ৩৬ সাক্ষীর মধ্যে ৩৪ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ সম্পন্ন হয়। পরে একই বছরের ৮ মার্চ খাদিজা হত্যাচেষ্টা মামলায় ছাত্রলীগ নেতা বদরুল আলমকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড প্রদান করেন আদালত।

টুডে মিডিয়া গ্রুপ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
[email protected] ☎ ৮৮ ০১৭ ১৪৩৪ ৯৩৯৩
৭/ডি-১ (৭ম তলা), ব্লু ওয়াটার শপিং সিটি,
জিন্দাবাজার, সিলেট - ৩১০০, বাংলাদেশ।
Developed By - IT Lab Solutions Ltd.