Sylhet Today 24 PRINT

কারখানার অপরিকল্পিত বর্জ্যে সংকটাপন্ন হবিগঞ্জের সুতাং নদী

সুতাং নদী পরিদর্শন করেছেন বাপা হবিগঞ্জ ও খোয়াই রিভার ওয়াটারকিপারের প্রতিনিধিদল

সিলেটটুডে ডেস্ক |  ১৪ মার্চ, ২০১৯

হবিগঞ্জের সংকটাপন্ন সুতাং নদী পরিদর্শন করেছেন বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) হবিগঞ্জ ও খোয়াই রিভার ওয়াটারকিপার এর প্রতিনিধিদল।

বৃহস্পতিবার (১৪ মার্চ) বেলা ১১টা থেকে সুতাং নদীর বিভিন্ন অংশ তারা ঘুরে দেখেন।

পরিদর্শনকালে প্রতিনিধিদল দেখতে পান কারখানার অপরিকল্পিত বর্জ্য নিষ্কাশনের কারণে সুতাং নদীর পানি কালো হয়ে গেছে এবং মারাত্মক দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। অসহনীয় দুর্গন্ধের ভেতর দিনাতিপাত করতে বাধ্য হচ্ছেন নদী সংলগ্ন এলাকার হাজার হাজার মানুষ। কয়েকটি ইউনিয়নের গ্রামের মানুষের জীবনযাত্রা দুর্বিসহ হয়ে পড়েছে। মারাত্মক স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে রয়েছেন ঐসব গ্রামের মানুষজন।

প্রতিনিধিদল সুতাং নদী পাড়ের মানুষের সঙ্গে কথা বলে জানতে পারেন। পরিবেশ ও জীববৈচিত্র বিধ্বংসী ও দূষণের বিরুদ্ধে ফুঁসে উঠেছেন এলাকার জনগণ। ক্রমাগত দূষণের ফলে সুতাং নদী পাড়ের গ্রামগুলোতে চরম পরিবেশ ও মানবিক বিপর্যয় নেমে এসেছে।

এর আগে একইদিন সকাল ১০টায় জেলা প্রশাসক বরাবরে হবিগঞ্জের খোয়াই নদী, পুরাতন খোয়াই, সুতাং, সোনাই নদীসহ অন্যান্য নদী সংরক্ষণের দাবিতে স্মারকলিপি দিয়েছেন বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) হবিগঞ্জ ও খোয়াই রিভার ওয়াটারকিপার।

জেলা প্রশাসনের পক্ষে স্মারকলিপি গ্রহণ করেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) ফজলুল হক পাভেল। স্মারকলিপি গ্রহণ করে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক জানান, পুরাতন খোয়াই নদীকে ঘিরে ইতিমধ্যেই পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। পুরাতন খোয়াই নদী পুনরুদ্ধার, সৌন্দর্যবর্ধন এর জন্য প্রকল্প করে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ে প্রেরণ করা হয়েছে। তিনি শিল্পবর্জ্য দূষণরোধসহ অন্যান্য নদী রক্ষায় যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাস দেন।

এসময় উপস্থিত ছিলেন বাপান হবিগঞ্জের সহ-সভাপতি এডভোকেট মনসুর উদ্দিন আহমেদ ইকবাল, তাহমিনা বেগম গিনি, সাধারণ সম্পাদক ও খোয়াই রিভার ওয়াটারকিপার তোফাজ্জল সোহেল, এডভোকেট বিজন বিহারী দাস, ডাঃ আলী আহসান চৌধুরী পিন্টু, আমিনুল ইসলাম, সাইফুল ইসলাম, ইফতেখার হোসেন প্রমুখ।

বাপা হবিগঞ্জের সাধারণ সম্পাদক ও খোয়াই রিভার ওয়াটারকিপার তোফাজ্জল সোহেল বলেন, বাংলাদেশ নদীমাতৃক দেশ, নদীকে কেন্দ্র করে এখানে সভ্যতা গড়ে উঠেছে। নদীই যদি নষ্ট হয়ে যায় তাহলে মানুষ বাঁচবে কী করে? মানুষের জন্যইতো শিল্প-কারখানা, শিল্প-কারখানার জন্য মানুষ নয়। কোনভাবেই কোন শিল্প প্রতিষ্ঠান অপরিশোধিত বর্জ্য পরিশোধন নিশ্চিত না করে কারখানার বাইরের এলাকায় যে কোন উপায়ে এবং কারখানার অভ্যন্তরে ভূগর্ভস্থ পানি দূষণ করতে পারে না, এটি দেশের প্রচলিত আইন ও বিধি ব্যবস্থার পরিপন্থী। এটি আজ প্রমাণিত পরিবেশবিমুখ শিল্পায়ন দেশের উন্নয়ন নয় বরং ধ্বংস ডেকে আনছে।  

তিনি বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীসহ সকল সচেতন মহল যখন নদী সংরক্ষণ ও পুনরুদ্ধারে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করছেন, তখন এই জেলার নদীর উপর অনাকাঙ্খিত অন্যায় কোনভাবেই গ্রহনযোগ্য নয়। আশংকা করছি, এভাবে নদী ধবংস করা হলে হবিগঞ্জে শুধু পরিবেশ বিপর্যয়ই নয়,  ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয়ও নেমে আসবে। তাই অনতিবিলম্বে নদী গুলোকে রক্ষা করার বিকল্প নেই। এদেশের নদী, বাতাস আর সার্বিক পরিবেশ রক্ষার আলোলনে সর্বস্তরের মানুষকে একত্রিত হয়ে গণপ্রতিরোধ গড়ে তোলার আহ্বান জানান তিনি।

বাপা হবিগঞ্জের সহ-সভাপতি তাহমিনা বেগম গিনি ও সাধারণ সম্পাদক ও খোয়াই রিভার ওয়াটারকিপার তোফাজ্জল সোহেল স্বাক্ষরিত স্মারকলিপিতে বলা হয় সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের পরিকল্পনাহীনতার কারণে খোয়াইয়ের নাব্যতা কমে গেছে। এতে নদীটি দখল-দূষণের শিকার হয়ে হবিগঞ্জের পরিবেশ ও নদীনির্ভর জীবনযাত্রাকে বিপন্ন করে তুলেছে। কয়েক বছর ধরে খোয়াই ব্রীজের তলায় ও এর আশপাশে পৌরসভার বর্জ্য ফেলার কারণে নদীর পানি দুর্গন্ধপূর্ণ হয়ে পড়েছে। এছাড়া শহর সংলগ্ন এলাকায় মাইলের পর মাইল নদীর তীর ও নদী অভ্যন্তর দখল করে গড়ে উঠেছে ঘরবাড়ী ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান।

পুরাতন খোয়াই নদীতে ভূমিখেকোদের লোলুপ দৃষ্টি পড়েছে, বিভিন্ন অংশ দখল হয়েছে, পরিকল্পিত-অপরিকল্পিতভাবে ভরাটের শিকার হয়েছে, দূষণের শিকার হয়েছে পুরাতন খোয়াই। সব মিলিয়ে নদী সংশ্লিষ্ট হবিগঞ্জের মানুষের জন্য ব্যাপক দুর্ভোগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে নদীটি।

কোম্পানির বর্জ্যে দূষিত হয়ে পড়েছে হবিগঞ্জের গুরুত্বপূর্ণ  সুতাং নদী। কোম্পানীগুলোর বর্জ্য সহজেই খালের মাধ্যমে সুতাং নদীতে ছাড়া হচ্ছে। যে কারণে শিল্পবর্জ্য দূষণে সুতাং নদীটি হয়ে পড়েছে মৎস্যশূন্য, নদীর পানি ব্যবহারকারীরা পড়েছেন মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকিতে। মানুষ আক্রান্ত হচ্ছে চর্মরোগসহ নানা অসুখে। আশংকাজনক হারে কমে গেছে ফসল উৎপাদন।

মাধবপুরে সোনাই নদীর পানি প্রবাহ বাধাগ্রস্থ করে নদীর এক বিশাল অংশ দখল করে সায়হাম ফিউচার কমপ্লেক্স নামে বহুতল ভবন নির্মাণ করা হয়েছে। ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের সেতুর জন্য বর্ষাকালে এই স্থাপনা হয়ে দাড়ায় এক বিরাট হুমকি। যা অবশ্যই নদীর প্রবাহকে বাধাগ্রস্থ করছে বলে সহজে দৃশ্যমান।

টুডে মিডিয়া গ্রুপ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
[email protected] ☎ ৮৮ ০১৭ ১৪৩৪ ৯৩৯৩
৭/ডি-১ (৭ম তলা), ব্লু ওয়াটার শপিং সিটি,
জিন্দাবাজার, সিলেট - ৩১০০, বাংলাদেশ।
Developed By - IT Lab Solutions Ltd.