Sylhet Today 24 PRINT

সিলেটের ১২২টি কলেজকে উন্নত করার জন্য উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে

সিলেটে দুই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. মোমেন

নিজস্ব প্রতিবেদক |  ১৭ মার্চ, ২০১৯

পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন বলেছেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সোনার বাংলা গড়ার স্বপ্ন দেখেছিলেন। সেই সোনার বাংলা প্রতিষ্ঠার জন্য আজকের প্রজন্মকে সোনার মানুষ হিসেবে তৈরি করতে হবে।

তিনি শনিবার (১৬ মার্চ) সকালে সিলেট নগরীর বন্দরবাজারস্থ রাজা জিসি হাইস্কুল ও জিন্দাবাজারস্থ রসময় মেমোরিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ে পৃথক অনুষ্ঠানে শিক্ষক-অভিভাবকদের উদ্দেশ্যে একথা বলেন।

মন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের জনগণের অর্ধেকের বয়স ২৫ বছরের নিচে। এক-তৃতীয়াংশ লোকের বয়স ১৮-৩৪ বছর। আমরা খুবই ভাগ্যবান যে, কর্মক্ষম এতো লোক আমরা পেয়েছি। এই বিশাল জনশক্তি সত্যিকার অর্থে তখনই কাজে লাগবে যখন তারা উন্নত প্রযুক্তি ও গুণগত শিক্ষায় শিক্ষিত হবে। অন্যথায়, এরা আমাদের জন্য বোঝা হয়ে দাঁড়াবে।

তিনি বলেন, বাংলাদেশের জনশক্তিকে সুশিক্ষিত করে তুলতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বছরের প্রথমদিনে স্কুলের শিক্ষার্থীদের হাতে বই তুলে দেন। সারাদেশে এখন স্কুল-কলেজে ডিজিটাল ল্যাব তৈরি করা হচ্ছে। সরকার একটি সিদ্ধান্ত নিয়েছে, সারাদেশের ১লক্ষ ৫৬ হাজার স্কুলে একটি করে স্মার্টবুক দেওয়া হবে। প্রকল্প অনুমোদন হয়ে গেছে। এর মাধ্যমে ছেলেমেয়েরা প্রযুক্তিতে আরো দক্ষ হবে বলে মনে করেন মোমেন।

শিক্ষাক্ষেত্রে সিলেট অনেক পিছিয়ে পড়েছে জানিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, সারা বাংলাদেশের তুলনায় সিলেট সবচেয়ে দুর্বল, সবচেয়ে পিছিয়ে। এর কারণ হচ্ছে, সিলেটের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের অবকাঠামো অত্যন্ত দুর্বল।

তিনি উদাহরণ দিয়ে বলেন, বরিশাল ও সিলেট জেলার জনসংখ্যা প্রায় সমান হলেও বৃহত্তর বরিশালে সিলেটের তুলনায় সাড়ে তিনগুণ বেশি স্কুল রয়েছে। তাই, সিলেটে ১টি ছেলে গ্র্যাজুয়েট হলে বরিশালে ৬টি ছেলে গ্র্যাজুয়েট হয়। এ কারণে চাকুরীক্ষেত্রেও সিলেট পিছিয়ে পড়ে।
ড. এ কে আব্দুল বলেন, বৃহত্তর সিলেটে সরকারি ও বেসরকারি ১৩৭টি কলেজ রয়েছে। কিন্তু শুধুমাত্র ঢাকা জেলায় ৮৮৫টি কলেজ রয়েছে। তিনি বলেন, এ বিষয়ে আমি কথা বলেছি। সরকার আমার বক্তব্য গ্রহণ করেছেন। শিক্ষামন্ত্রণালয় সিলেটের ১২২টি কলেজকে উন্নত করার জন্য উদ্যোগ গ্রহণ করেছে।

শিক্ষক ও স্কুল পরিচালনার দায়িত্বে থাকা কমিটির উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, শিক্ষালয়ে যারা আছেন, ম্যানেজমেন্টে যারা আছেন, সকলের কাছে আমার অনুরোধ- শিক্ষায় যেনো কোনধরণের পক্ষপাতিত্ব করা না হয়। মেধাকে যেনো মূল্যায়ন করা হয়। এখানে অন্য কোন রাজনৈতিক ইস্যু যেনো না আসে।

তিনি বলেন, সবাই আমার এই বাংলাদেশের নাগরিক। প্রত্যেকের প্রতি সমান সুযোগ সুবিধা নিশ্চিত করতে হবে। এক্ষেত্রে যদি পার্টিইজম ঢুকে তাহলে ভবিষ্যতে আমরা অনেককে হারাবো। তাই, শিক্ষার ক্ষেত্রে উদার হবেন।

এমিরেটাস অধ্যাপক ড. মোমেন বলেন, শিক্ষা যদি উন্নত না হয় তাহলে আমাদের ভবিষ্যত উজ্জল হবে না। তাই আমি শিক্ষায় বেশি জোর দিচ্ছি। তিনি বলেন, শিক্ষায় ‘এথিকস এন্ড মরালিটি’ যেনো সবচেয়ে বড় হয়। আমরা চাই মানুষের মত মানুষ। আমরা চাই বঙ্গবন্ধুর সেই সোনার বাংলা।

মোমেন বলেন, সোনার বাংলার স্বপ্ন অর্জন করতে হলে সোনার মানুষ দরকার। সেটা তখনই সফল হবে যখন আজকের প্রজন্মকে যথাযথ মূল্যায়ন ও পরিচর্যার মাধ্যমে সৃজনশীল মেধাবী ও যোগ্য নাগরিক হিসেবে গড়তে পারবো।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, আমি একটি কথায় বিশ্বাস করি- সৃজনশীলতা, প্রজ্ঞা ও মেধার যোগ্যতা প্রমাণ হয় প্রতিযোগিতার মাধ্যমে। এ জন্য আমি কারো পক্ষে সুপারিশ করি না। আমি মনে করি, প্রতিযোগিতার মাধ্যমে প্রত্যেকে নিজের অবস্থান তৈরি করে নেবে।

সিলেট-১ আসনের সংসদ সদস্য ড. এ কে আব্দুল মোমেন বলেন, গত দুই মাস ধরে আমি এই এলাকার জনপ্রতিনিধি ও মন্ত্রী হিসেবে আছি। কিন্তু গত তিনবছর এই এলাকায় ঘোরাঘুরির কারণে আমি আপনাদের অনেক সমস্যার কথা জানি। ইতোমধ্যে অনেকগুলো কাজ হাতে নিয়েছি। দায়িত্ব গ্রহণ করার পর সিলেটের ১৪টি স্কুল ও ৩টি মাদরাসার অবকাঠামো উন্নয়নের আবেদন করেছি। এর মধ্যে ৮টি স্কুল ও ৩টি মাদরাসা অনুমোদন পেয়ে গেছে। এগুলো চারতলা ও ছয়তলা ভবন হবে।

তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মানুষের মঙ্গলের জন্যে, শান্তি ও সমৃদ্ধির জন্যে কাজ করে যাচ্ছেন। গত ১০ বছরে শেখ হাসিনা সরকার অভাবনীয় সাফল্য অর্জণ করেছে। যার কারণে মানুষের আশাআকাক্সক্ষা অনেক বেড়েে গেছে।

প্রধানমন্ত্রী আমাদেরকে কিছু দিকনির্দেশনা দিয়েছেন। তিনি ২০২১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে উচ্চ মধ্য আয়ের দেশ হিসেবে দেখতে চান। ২০৩০ সালের মধ্যে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জন ও ২০৪১ সালের মধ্যে সত্যিকার অর্থে উন্নত ও সমৃদ্ধ সোনার বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্ন দেখছেন তিনি। এগুলো অর্জন করতে অনেক পরিশ্রম দরকার।

তাই, এসব লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের লক্ষ্যে তার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় দু’টি নীতি করেছে। এর মধ্যে একটি হচ্ছে, ইকোনমিক ডিপ্লোমেসি। যার মাধ্যমে রূপরেখা অর্জনে প্রয়োজনীয় বিনিয়োগ, প্রযুক্তি সহায়তা নেওয়া যায়। দ্বিতীয়ত, বন্ধুপ্রতীম দেশগুলো থেকে বাংলাদেশে বিনিয়োগ ও বাণিজ্য যোগাযোগ বৃদ্ধি। এ লক্ষ্যে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে স্থাপিত বাংলাদেশের দূতাবাসগুলোকে আগামী তিনবছরের জন্য পরিকল্পনা গ্রহণের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সেসব দেশ থেকে কিধরণের সুযোগ-সুবিধা ও বাণিজ্য বিনিয়োগ করা যায় তার তালিকা তৈরি করতে তাদেরকে বলা হয়েছে। তবে, ওইসব দেশ থেকে ভিক্ষা হিসেবে কিছু গ্রহণ করা হবে না বলে জানান মন্ত্রী।

রসময় মেমোরিয়াল উচ্চ বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি আফসার আজিজের সভাপতিত্বে বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতার পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠানের শুরুতে স্বাগত বক্তব্য দেন স্কুলের প্রধান শিক্ষক সেলিম উদ্দিন আহমদ। শ্রদ্ধাঞ্জলি পাঠ করেন শিক্ষক তাহমিনা আক্তার। এর আগে স্কুলের শিক্ষার্থীরা জাতীয় সংগীত ও নৃত্য পরিবেশন করেন।

অনুষ্ঠানে সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শফিকুর রহমান চৌধুরী, মহানগর সাধারণ সম্পাদক আসাদ উদ্দিন আহমদ, স্বেচ্ছাসেবক লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক এডভোকেট সুব্রত পুরকায়স্ত, মহানগর আওয়ামী লীগের শিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক ও সিটি কাউন্সিলর আজাদুর রহমান আজাদ, রসময় স্কুলের সাবেক প্রধান শিক্ষক অঞ্জলি প্রভা প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

এর আগে সকালে রাজা জিসি হাইস্কুল পরিচালনা পরিচালনা কমিটির সভাপতি, সাবেক মেয়র বদর উদ্দিন আহমদ কামানের সভাপতিত্বে বার্ষিক ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতার পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শফিকুর রহমান চৌধুরী, সিলেট শিক্ষা বোর্ডের সাবেক চেয়ারম্যান এ কে এম গোলাম কিবরিয়া তাপাদার। স্বাগত বক্তব্য রাখেন স্কুলের প্রধান শিক্ষক মো. আব্দুল মোমিত। অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন স্কুলের শিক্ষক ফৌজিয়া খানম।

টুডে মিডিয়া গ্রুপ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
[email protected] ☎ ৮৮ ০১৭ ১৪৩৪ ৯৩৯৩
৭/ডি-১ (৭ম তলা), ব্লু ওয়াটার শপিং সিটি,
জিন্দাবাজার, সিলেট - ৩১০০, বাংলাদেশ।
Developed By - IT Lab Solutions Ltd.