Sylhet Today 24 PRINT

স্বপ্নের রিসার্চ সেন্টার উদ্বোধনের দিনই সমাহিত হলেন ডা. আনোয়ারা

নিজস্ব প্রতিবেদক |  ২৭ মার্চ, ২০১৯

সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের অধ্যাপক ও গাইনোকলজি বিভাগের সাবেক বিভাগীয় প্রধান, স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. আনোয়ারা বেগম চিরনিদ্রায় শায়িত হয়েছেন।

মঙ্গলবার (২৬ মার্চ) বেলা সাড়ে ৩টার দিকে তাকে হবিগঞ্জের নবীগঞ্জ উপজেলার শাহবাজপুর গ্রামে দ্বিতীয় নামাজের জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়।

অথচ স্বাধীনতা দিবসের এই দিনটিকেই তিনি বেছে নিয়েছিলেন নিজের প্রচেষ্টায় গড়া কর্ডিয়াল সাবফার্টিলিটি কেয়ার এন্ড রিসার্চ সেন্টারের উদ্বোধনের জন্য। নিজের স্বপ্নের প্রতিষ্ঠানের উদ্বোধনের দিনই সমাহিত হলেন এই খ্যাতিমান চিকিৎসক।

প্রয়াতের প্রথম জানাজার নামাজ মঙ্গলবার সকাল ১০টায় সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মাঠে অনুষ্ঠিত হয়।

২৫ মার্চ সোমবার সকাল ১০টার দিকে ঢাকার ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।

প্রয়াতের স্বামী আইনজীবী এডভোকেট আব্দুস সবুর। মৃত্যুকালে তিনি স্বামী, ডা. আনোয়ার সাদাত ও মেজর রাশেদ আহমদ সেজান নামে দুই ছেলে এবং অসংখ্য আত্মীয়-স্বজন ও গুণগ্রাহী রেখে গেছেন। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৬২ বছর।

সম্প্রতি নগরীর কাজলশাহে কর্ডিয়াল সাবফার্টিলিটি কেয়ার অ্যান্ড রিসার্চ সেন্টার প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নেন তিনি। মহান স্বাধীনতা দিবস ২৬ মার্চ উপলক্ষে এই রিসার্চ সেন্টারের উদ্বোধন হওয়ার কথা ছিল। অনেক পরিকল্পনাও ছিল এই উদ্বোধনকে ঘিরে। কিন্তু এই দিনেই তিনি চিরনিদ্রায় শায়িত হলেন অন্ধকার কবরে।


তাঁর মৃত্যুতে সিলেট রয়েল হসপিটাল এন্ড রিসার্চ সেন্টার, সিলেট পপুলার মেডিকেল সেন্টার লিমিটেড, পার্কভিউ মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালসহ অনেকেই শোক প্রকাশ করেছেন।  

ডা. আনোয়ারা বেগমের অধীনে স্নাতকোত্তর এফসিপিএস করা ডা. অনন্যা জাকিয়া জিসা স্মৃতিচারণ করে বলেন, ''ম্যাডাম, আপনি এত তাড়াতাড়ি কেন চলে গেলেন? আমি বিশ্বাস করি, আমার জীবনের কিছু জিনিস আল্লাহ প্রদত্ত উপহার। আমার সিলেট ট্রেনিং জীবন ঠিক তাই। ২০১৩ সালে যখন সিলেট যাচ্ছি আমি কল্পনাও করিনি যে, আমার জন্য আল্লাহ কত বড় উপহার রেখে দিয়েছিলেন।

আমি আজকে লিখতে গেলে হাজার পাতা শেষ হবে, তাও আমি বোঝাতে পারব না.....

আমি পাস করার পর আপনার সাথে যখন আমার প্রথম দেখা হলো, আপনি তখন ঢাকায় হাসপাতালে ভর্তি...এমন তো কথা ছিল না ম্যাডাম.... কথা তো ছিল আমি আপনার সাথে দেখা করতে সিলেট যাব, হাসি মুখে সেই আগের মত দেখা হবে... আমি আমার চিরচেনা অসম্ভব কর্মঠ আমার ম্যাডামকে দেখব..... চেম্বারে যাওয়ার আগেও যে আমাকে যত্ন করে দুপুরে ভাত খাইয়ে গল্প করে ঠিকই সময় দিবেন...

২০১৩ সালে একটা শিশুর মতো আনাড়ি এই আমাকে আপনি ধীরে ধীরে নিজের হাতে তৈরি করেছিলেন। সাড়ে তিন বছর আমার মাথার উপর মায়ের ছায়া হয়ে ছিলেন আপনি।''

তাঁর সহকর্মী ডা. আঁখি নাহার বলেন, ‘চলে গেলেন একজন সাহসী জীবন-যোদ্ধা। একজন মহীয়সী নারী। জীবনকে জয় করেছিলেন সাহস, মেধা আর শ্রম দিয়ে। ছোট-খাট শারীরিক অসুস্থতা পিছনে ফেলে এগিয়ে নিয়েছেন জীবনকে। অসম্ভব মেধাবী ছিলেন তিনি। পাশাপাশি ছিলেন ভীষণ ভাগ্যবান, যা ছুঁয়েছেন তার স্পর্শে সোনা হয়ে গেছে।’

প্রসঙ্গত, ১৯৫৭ সালের পহেলা সেপ্টেম্বর ময়মনসিংহে জন্মগ্রহণ করেন অধ্যাপক ডা. আনোয়ারা বেগম। ময়মনসিংহ মেডিকেল থেকে ১৩তম ব্যাচের শিক্ষার্থী হিসেবে এমবিবিএস সম্পন্ন করলেও এমএস ডিগ্রি নেন সিলেট ওসমানী মেডিকেল থেকে। এমসিপিএস এবং ডিজিও করা এই মেধাবী মানুষটি দক্ষ ছিলেন ল্যাপারোস্কোপি ও বন্ধ্যাত্ব বিষয়ে।

৮০ দশকের শেষ ভাগ থেকে শুরু করে টানা প্রায় ৩০ বছরেরও বেশি সময় ধরে নবীগঞ্জের অধিকাংশ নারীদের চিকিৎসা সেবা দিয়েছেন তিনি। সিলেটে স্থায়ী হওয়ার পরেও প্রতি শুক্রবার চিকিৎসাসেবা দিতে ছুটে যেতেন নিজের এলাকা নবীগঞ্জে।

তিনি প্রথমে নবীগঞ্জ, পরে কিছুদিন হবিগঞ্জে চিকিৎসা সেবা দিয়ে সিলেটে স্থায়ীভাবে বসবাস করা শুরু করেন।

টুডে মিডিয়া গ্রুপ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
[email protected] ☎ ৮৮ ০১৭ ১৪৩৪ ৯৩৯৩
৭/ডি-১ (৭ম তলা), ব্লু ওয়াটার শপিং সিটি,
জিন্দাবাজার, সিলেট - ৩১০০, বাংলাদেশ।
Developed By - IT Lab Solutions Ltd.