Sylhet Today 24 PRINT

কানাইঘাটে বাঘ ধরার নামে বনে আগুন

নিজস্ব প্রতিবেদক |  ২৫ এপ্রিল, ২০১৯

দলে দলে আসছে মানুষ। দেশীয় অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত হয়ে আসছে তারা। কেউ কেউ আসছে বাধ্য যন্ত্র নিয়ে। বাদ্য বাজিয়ে বাকীদের উৎসাহ দিচ্ছেন তারা। আর বনের ভেতরে টিলার উপরে হাজারও উৎসক জনতার ভিড়। যেনো উৎসবের আমেজ চারদিকে। বিরাট কোনো উৎসব উপভোগে যেনো শামিল হয়েছে সবাই।

বুধবার এমন দৃশ্য দেখা যায় সিলেটের কানাইঘাটের লক্ষীপ্রসাদ পশ্চিম ইউনিয়নে লােভা বনে। তবে কোনো উৎসব নয়, বনে বাঘ আসার খবরে বাঘ ধরার জন্য এই আয়োজন এলাকাবাসীর। এসময় বাঘ ধরার জাল বসানোর জন্য আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয় বনে। বনের একাধিক জায়গায় একসঙ্গে আগুন দেওয়া হয়।

তবে বাঘ ধরা যায় নি। স্থানীয়রা জানিয়েছেন মানুষের উপদ্রবে বাঘ পালিয়েছে। তবে পুড়িয়ে ফেলা হয়েছে বনের কিছু অংশ। পরিবেশবাদীরা বাঘ ধরার জন্য এই জাল ফেলা ও বনে আগুনের কারণে বন ও জীববৈচিত্র ক্ষতিগ্রস্ত হবে বলে মনে করছেন।

এলাকাবাসী সূত্রে জানা যায়, বাঘ ধরার একদিন আগে মসজিদের মাইকে ঘোষণা দেওয়া হয়। বাঘ ধরতে সব ধরনের সরঞ্জামাদি নিয়ে প্রস্তুত থাকতে বলা হয় গ্রামবাসীদের।

জানা গেছে, বুধবার গ্রামবাসী মসজিদের মাইকের ঘোষণা অনুযায়ী বাঘ ধরতে উপজেলার লাভাছড়া এলাকায় হাজির হয়। উৎসুক মানুষের উল্লাস আর ঢাক-ঢোলের শব্দে সীমান্ত অতিক্রম করে পালিয়ে যায় বাঘটি কিন্তু বাঘ ধরতে আগুন লাগিয়ে পোড়ানো হয় বন। বাঘ ধরতে গিয়ে ধ্বংস করা হয়েছে বনের গাছপালা আর অন্য প্রাণীদের আশ্রয়স্থল।

বনে আগুন দেওয়ার একটি ভিডিও শেয়ার করে সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণীঅধিকার নিয়ে কাজ করা সংগঠন প্রাধিকার'র ফেসবুক পেজে লেখা হয়েছে-

এ যেন এক বিরাট উৎসব। বাঘ ধরতে আশেপাশে গ্রামের হাজার হাজার মানুষ লাঠি সোটা নিয়ে মাঠে নেমেছে। আবার কেউবা ঢোল, তবলা বাজিয়ে নৃত্যের তালে তালে বাঘ আটকের জন্য প্রস্তুতি নেন।

২৪ এপ্রিল (বুধবার) হঠাৎ মসজিদের মাইক থেকে ঘোষণা আসে- ‘প্রিয় এলাকাবাসী লোভাছড়া চা বাগানে বাঘ নেমেছে, আপনারা লাঠিসোটা, সেল, জাল নিয়ে তৈরি থাকেন, আজ বাঘ খেওড় (আটক) করা হবে ‘মাইকের ঘোষণার পর থেকে বিভিন্ন গ্রামের হাজারো লোক জড়ো হন বাঘ আটকের জন্য।

এ যেনো কানাইঘাটের মানুষের কাছে এক উৎসবের দিন। বাঘ ধরার নামে বনের পরিবেশ ধ্বংস করতে মেতেছে মানুষ। বনের এক প্রান্তে আগুন জ্বালিয়ে বাঘ ধরার নামে ধবংস করা হচ্ছে বন। শেষ পর্যন্ত বাঘ ধরতে ব্যর্থ। মানুষের উৎসব থেমে যায়। আর মাঝখানে ক্ষতিগ্রস্ত হয় বনের গাছপালা আর কিছু প্রাণী। হয়তো কিছু প্রজাতি প্রাণী জীবন বাচঁতে চলে যায় অন্য জায়গায়। এভাবে প্রজাতির হয় আঞ্চলিক বিলুপ্তি।

প্রতিবছর কানাইঘাটে যে বাঘগুলো পাওয়া যায় তার অধিকাংশই ভারত থেকে আসে। খাবারের সন্ধানে উঁচু পাহাড় থেকে লোকালয়ে নেমে আসে।'

তবে সিলেট বিভাগীয় বন কর্মকর্তা এসএম মনিরুল ইসলাম বলেন, বাঘ ধরতে জাল ফেলার খবর পেয়ে বৃহস্পতিবারই ঘটনাস্থলে বন বিভাগের কর্মীরা গিয়ে জাল নিয়ে এসেছে। এখনও ওই এলাকায় বনকর্মীরা অবস্থান করছে।

তিনি বলেন, আগুন লাগার যে ভিডিও বিভিন্ন জায়গায় শেয়ার হচ্ছে তা বনে বাঘ ধরার জন্য লাগানো হয়নি। পাশ্ববর্তী লোভাছড়া চা বাগানের শ্রমিকরা তাদের বাগানের আবর্জনা আগুন দিয়ে পুড়ানোর ভিডিওকে ভুলভাবে উপস্থাপন করা হচ্ছে।

টুডে মিডিয়া গ্রুপ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
[email protected] ☎ ৮৮ ০১৭ ১৪৩৪ ৯৩৯৩
৭/ডি-১ (৭ম তলা), ব্লু ওয়াটার শপিং সিটি,
জিন্দাবাজার, সিলেট - ৩১০০, বাংলাদেশ।
Developed By - IT Lab Solutions Ltd.