Sylhet Today 24 PRINT

ভূমধ্যসাগরে নৌকাডুবিতে নিহতদের পরিবারের পাশে ফেঞ্চুগঞ্জ ইউএনও

সিলেটটুডে ডেস্ক |  ১৫ মে, ২০১৯

ইতালি যাওয়ার সময় ভূমধ্যসাগরে নৌকাডুবিতে নিহত ফেঞ্চুগঞ্জের ৩ জনের পরিবারের পাশে ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও)।

বুধবার সকালে ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলার ইউএনও আয়শা হক শোকার্ত পরিবারকে সান্তনা দিতে উত্তর কুশিয়ারা ইউনিয়নের মহিদপুর গ্রামে যান। পরিবারের সদস্যদের সান্তনা দেওয়ার পাশাপাশি এসময় তিনি পরিবারকে সকল ধরনের আইনি সহযোগিতার আশ্বাস প্রদান করেন।

এসময় আরো উপস্থিত ছিলেন- ৪নং উত্তরপাশা ইউপি চেয়ারম্যান আহমেদ জিল্লু, বাংলাদেশ পল্লী উন্নয়ন বোর্ড ফেঞ্চুগঞ্জের কর্মকর্তা কামাল হোসেন, উপজেলা কৃষি অফিসার হাবিবুর রহমান হাবিব, ৫ নম্বর কুশিয়ারা ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য কুতুব উদ্দিন, উত্তর কুশিয়ারা উচ্চ বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সদস্য বদরুল আলম প্রমুখ।

উল্লেখ্য, তিউনিসিয়া উপকূলে ভূমধ্যসাগরে নৌকা ডুবে নিহত ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলার চার যুবক রয়েছে। যাদের মধ্যে তিনজন একই পরিবারের। তারা হলেন ফেঞ্চুগঞ্জ উত্তর কুশিয়ারা ইউনিয়নের মহিদপুর গ্রামের আব্দুল আজিজ, লিটন শিকদার ও আহমদ হোসেন।

নিহত আজিজের বড় ভাই মফিজুর রহমান বলেন, নিহতদের মধ্যে লিটন তার আপন চাচাতো ভাই। আর আহমদ হোসেন ফুফাত ভাই। শনিবার (১১ মে) বিকেলে তিউনিসিয়ায় সাগরে নৌকাডুবি থেকে বেঁচে যাওয়া তার চাচা বিলাল আহমদ বাকিদের মৃত্যুর খবর জানান। প্রায় ১১ ঘণ্টা সাগরে ভেসে থাকার পর মাছ ধরার ট্রলারে থাকা জেলেরা তাদের কয়েকজনকে জীবিত উদ্ধার করে তিউনিসিয়া উপকূলে নিয়ে যায়। এভাবেই বেঁচে ফেরেন তার চাচা বিলাল। বর্তমানে সেখানেই তিনি চিকিৎসাধীন।

তিনি বলেন, ২০১৮ সালের ৪ ডিসেম্বর জিন্দাবাজার এলাকার ইয়াহিয়া ওভারসিজ ট্রাভেলসের মাধ্যমে জনপ্রতি সাড়ে ৭ লাখ টাকায় তাদের ইতালি পাঠানোর চুক্তি হয়। কথা ছিল সরাসরি ফ্লাইট দেওয়া হবে তাদের। কিন্তু তিন দেশ ঘুরিয়ে লিবিয়াতে নিয়ে তাদের রাখা হয় প্রায় পাঁচ মাস। এই সময়ে তিন থেকে চার দিন পরপর তাদের খেতে দেওয়া হতো।

মফিজ বলেন, ক’দিন আগে কথা বলেছিলাম তাদের সঙ্গে। না খেয়ে তাদের মুখের ভাষাও পরিবর্তিত হয়ে গেছে। পরে ট্রাভেলসের মালিক এনাম আহমদের কাছে তাদের ফেরত চাইলে আরও ৩ লাখ টাকা করে বাড়তি আদায় করেছেন তিনি। এখন আর কিছুরই প্রয়োজন নেই। কেবল ভাইদের মরদেহগুলো ফেরত চাই।

সাগর থেকে উদ্ধার হওয়া বিলাল আহমদের বরাত দিয়ে মফিজ আহমদ আরও বলেন, ট্রাভেলসের স্বত্বাধিকারী এনাম বলেছিলেন, তাদের জাহাজে পাঠানো হবে। কিন্তু পাঠানো হয়েছে নৌকাতে। আর ৪০ জনের নৌকায় তোলা হয়েছিল ৮০ জন। যে কারণে নৌকাটি ডুবে যায়।

অন্যদিকে ছেলের শোকে আর্তনাদ করা লিটন মিয়ার বাবা সিরাজ মিয়া নিজেকে খানিকটা সামলে কথা বলেন গণমাধ্যমের সঙ্গে।

তিনি বলেন, শুক্রবার (১০ মে) বিকেলে সাগর থেকে উদ্ধার হওয়া বিলালের (সিরাজ মিয়ার ভাই) সঙ্গে প্রায় ৪ মিনিট কথা হয়েছে। সে কাঁদছে আর বলছে- আমার চোখের সামনেই তিন সন্তান (ভাতিজারা) ভেসে গেছে। ওদের মৃত্যু না হয়ে আমার কেনো মৃত্যু হলো না। সে নিজেও ১১ ঘণ্টা সাগরে মৃত্যুর সঙ্গে যুদ্ধ করে বেঁচে আছে। জেলেরা তাকে উদ্ধার করে তিউনিসিয়ায় নিয়ে গেছে। সেখানে হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছে সে।তবে বাকিদের মরদেহ কোথায় কিছুই জানেনা সে।

তিনি আরও বলেন, দালালচক্র প্রথমে তাদের ভারত নিয়ে যায়। সেখানে কিছুদিন রেখে নিয়ে যায় শ্রীলঙ্কায়। এরপর লিবিয়া। এভাবেই তাদের বিভিন্ন দেশে নিয়ে যাওয়ার খবর শুনছিলাম। এভাবে ইতালি পাঠাবে জানলে আমার সন্তানকে পাঠাতাম না।

স্থানীয়রা জানান, ছেলেগুলো খুবই ভালো ছিল। ইউরোপ যাওয়ার জন্য দালালের খপ্পরে পড়ে তারা প্রাণ হারিয়েছে। নিহতদের মরদেহগুলো উদ্ধার করে পরিবারের কাছে দেওয়ার জন্য সরকারের কাছে দাবি জানান তারা।

৫ নম্বর কুশিয়ারা ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য কুতুব উদ্দিন বলেন, আমরা চাই ছেলেগুলোর মরদেহ ফেরত আসতে সরকার যেনো ভূমিকা রাখে। অন্তত তাদের পরিবার যেনো স্বজনদের মরদেহগুলো ফেরত পায়।
এদিকে, ঘটনার খবর জানতে পেরে ইয়াহিয়া ওভারসিজ ট্রাভেলস বন্ধ করে এর মালিক পালিয়ে গেছেন। সকাল থেকেই ট্রাভেলসটি তালাবদ্ধ অবস্থায় দেখতে পান মার্কেটের লোকজন।

টুডে মিডিয়া গ্রুপ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
[email protected] ☎ ৮৮ ০১৭ ১৪৩৪ ৯৩৯৩
৭/ডি-১ (৭ম তলা), ব্লু ওয়াটার শপিং সিটি,
জিন্দাবাজার, সিলেট - ৩১০০, বাংলাদেশ।
Developed By - IT Lab Solutions Ltd.