Sylhet Today 24 PRINT

বৃষ্টিতে নগরজুড়ে জলাবদ্ধতা, চরম দুর্ভোগ

নিজস্ব প্রতিবেদক |  ২৬ জুন, ২০১৯

টানা বৃষ্টিতে সিলেট নগরীর বিভিন্ন এলাকায় জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে। এতে চরম দুর্ভোগে পড়েছেন নগরবাসী। নগরীর বিভিন্ন এলাকায় ড্রেন ও সড়ক সংস্কারের কাজ চলায় দুর্ভোগ আরও বেড়েছে।

মঙ্গলবার রাত থেকেই বৃষ্টি শুরু হয় নগরীতে। যা বুধবার দিনভর অব্যাহত ছিলো। সন্ধৌার পরও বৃষ্টি চলছে।

বৃষ্টিতে সিলেট-সুনামগঞ্জ আঞ্চলিক মহাসড়কে সড়কে লন্ডনিরোড থেকে মদীনা মাকেট এলাকা একেবারে জলমগ্ন হয়ে পড়েছে। পানিতে ডুবে গেছে সড়ক।

এছাড়াও সিলেট নগরীর নয়াসড়ক,ছড়ারপাড়, পুরানলেন, শেখঘাট, ঘাসিটুলা, কলাপাড়া, ভাতালিয়া, উপশহরসহ কয়েকটি এলাকায় জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে।

বৃষ্টি হলেই সিলেট-সুনামগঞ্জ আঞ্চলিক মহাসড়কে সড়কের নগরীর ভেতরের এলাকা জলমগ্ন হয়ে পড়ে বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা। মূলত এই সড়কের পাশের ড্রেন ছোট হওয়ার কারণে পানি নামতে সময় লাগে বলে জানান সংশ্লিষ্টরা। এই জলাবদ্ধতা নিরশনে গত বছর সিলেট সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে ছয় কোটি টাকার টেন্ডার করা হয় ড্রেনের কাজ করানোর জন্য। বর্তমান ড্রেনের চেয়ে আকারে বড় করে লন্ডনীরোডের মুখ থেকে মদিনা মার্কেট হয়ে ধোপাচড়া পর্যন্ত নেওয়ার কথা।  

তবে ৬ মাস আগে এই ড্রেনের কাজ শুরু হলেও তেমন কোনো অগ্রগতি নেই কাজের। ঈদুল ফিতরের আগে কিছু কাজ করা হলেও ঈদের পর এই কাজে আর হাত দেওয়া হয়নি।

সিসিকের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বলছে এক ঠিকাদার দিয়ে ৩ টি প্রকল্পের কাজ করানো হচ্ছে তাই ধীর গতিতে কাজ হচ্ছে। এই কাজ শেষ করার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের আরো ৯ মাস সময় আছে। তাছাড়া বৃষ্টি শুরু হয়ে যাওয়ায় এখন কাজ করা যাচ্ছে না।  

সরজমিনে দেখা যায়, বুধবার বিকালে সিলেট-সুনামগঞ্জ আঞ্চলিক মহাসড়কে লন্ডনীরোড এলাকায় জলাবদ্ধতার ফলে সুবিদবাজার থেকে মদিনা মার্কেট পর্যন্ত দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়। এসময় সড়কের উভয় পাশে প্রায় দুশতাধিক যানবাহন আটকা পড়ে। বৃষ্টিতে লন্ডনীরোডে জলাবদ্ধতায় পরে ইঞ্জিনে পানি ডুকে গাড়ি, সিএনজি অটোরিক্সা, মটরবাইক পথিমধ্যে বিকল হয়ে পড়ে। এসব দেখে অনেক চালক সিএনজি অটোরিক্সা নষ্ট হবার ভয়ে লাভলী রোড মোড়ে এসে গাড়ি ঘুরিয়ে নেয়। এসব কারণে যানজট সৃষ্টি হয়। এসময় অনেক যাত্রী গাড়ি থেকে নেমে বিকল সিএনজি অটোরিক্সাকে ধাক্কা দিয়ে চালকদের সাহায্য করেন।  

সিএনজি চালক মো. রহমত আলী বলেন, প্রায় ১০ বছর যাবত সিএনজি চালাই। প্রতি বছরই বৃষ্টির সময় এই রাস্তায় জলাবদ্ধতা। সারা শহরের কোথাও জলাবদ্ধতা না থাকলে এখনে থাকে। বৃষ্টির দিনে এই রোডটা আমাদের জন্য ভয়ানক হয়ে উঠে। কারণ সিএনজি নিয়ে গেলেই ইঞ্জিনে পানি ডুকে নষ্ট হয়ে যায়।

আরেক চালক সজিব মিয়া লাভলীরোডের মোড়ে এসে সিএনজি ঘুরিয়ে নেন। তিনি বলেন, ‘আমরা দিন আনি দিন খাই। এখন ই রাস্তা দি গেলেই গাড়িটা নষ্ট হই যাইবো। নষ্ট হলেই অনেক টাকা লাগবো ইঞ্জিনো কাজ করাইতে। তার উপড় দুইদিন গাড়ি চালাতে পারতামা না। তাই গাড়ি ঘুরাইয়া নিছি।

জলাবদ্ধতায় সড়কের গর্তে পরে গাড়ির চাকা ভেঙ্গে যায় রিক্শা চালক আম্বর আলীর। তিনি  বলেন,‘সারা দিনে রুজি হইছে না একশ টাকা কিন্তু গাড়ির চাক্কা ভাইঙ্গা দুইশ টাকা গলাত দন্ডি লাগছে।’

লন্ডণী রোড এলাকার বাসিন্ধা ব্যবসায়ী মন্নান আহমদ বলেন, ১৯৯৪ সালে আমরা যখন আমরা পাঠানটুলা স্কুলে অধ্যায়নরত ছিলাম তখনও বৃষ্টি হলে জলাবদ্ধতা হতো। ওই সময় এই পানিতে খেলা করে খুশি মনে বাসায় গেলেও এখন আর এই জলাবদ্ধতায় খুশি হতে পারি না। এভাবে আর কতদিন চলবে। শুনেছি ড্রেন বড় করা হবে। তাই কাজ ধরা হলেও কাজের কোনো অগ্রগতি নেই। এই সড়ক ব্যবহারকারী অনেক । তাই সিটি করপোরেশনের দায়িত্বশীলদের এই ড্রেনটা দ্রæত করার ব্যাপারে আরো দায়িত্বশীল হওয়া প্রয়োজন।

এ ব্যাপারে ৮নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর মো. ইলিয়াছুর রহমান বলেন, এই রাস্তার পাশের ড্রেন ছোট হওয়ার কারণে পানি নামতে সময় লাগে। ইতোমধ্যে ড্রেন বড় করার জন্য কাজ শুরু হয়েছে। এখন বৃষ্টির সময় তাই কাজ বন্ধ আছে। আশা করি এই ড্রেন বড় হলে আর এই জলাবদ্ধতা থাকবে না।

এ ব্যাপারে সিলেট সিটি করপোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী নূর আজিজুর রহমান বলেন, এই সড়কে জলাবদ্ধতা ভোগান্তী র্দীঘ দিনের। এই সড়কের ড্রেন বড় করার জন্য ৬ মাস আগে কাজ ধরা হয়েছে। লন্ডনীরোডের মুখ থেকে মদিনা মার্কেট হয়ে ধোপাচড়া পর্যন্ত যাবে এই ড্রেন। আশা করছি এই ড্রেনের কাজ শেষ হলে এই সড়কে আর জলাবদ্ধতা হবে না।

কাজের ধীরগতি নিয়ে তিনি বলেন, আমাদের এক ঠিকাদার ৩টি সাইডে কাজ করেন তাই কাজ একটু ধীর গতিতে হচ্ছে। তার উপড় এখন বৃষ্টির সময় তাই এই সিজনে কাজ করা যাবে না। আরো ৯ মাস আছে এই কাজ শেষ করার জন্য আশা করছি আগামী বর্ষায় আর জলাবদ্ধতায় র্দভোগ পোহাতে হবে না এই সড়ক ব্যবহারকারীদের।

বুধবার দুপুরে পাঠানটুলা-মদিনা মার্কেট এলাকার জলাবদ্ধতা পরিদর্শনে যান সিটি মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী। ওই এলাকায় জলাবদ্ধতার কারণ অনুসন্ধান করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে তিনি সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দিয়েছেন বলে জানা গেছে।

টুডে মিডিয়া গ্রুপ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
[email protected] ☎ ৮৮ ০১৭ ১৪৩৪ ৯৩৯৩
৭/ডি-১ (৭ম তলা), ব্লু ওয়াটার শপিং সিটি,
জিন্দাবাজার, সিলেট - ৩১০০, বাংলাদেশ।
Developed By - IT Lab Solutions Ltd.