Sylhet Today 24 PRINT

বানিয়াচংয়ের হাটবাজারে দেশিয় মাছের আকাল

রায়হান উদ্দিন সুমন,বানিয়াচং |  ২৮ জুলাই, ২০১৯

হাওর অধ্যুষিত হবিগঞ্জের বানিয়াচং উপজেলায় বর্ষা মৌসুমেও দেশি প্রজাতির মাছ মিলছে না। মুক্ত জলাশয়, নদী-নালা, খাল-বিলে আগের বর্ষা মৌসুমে এবং এই মৌসুমের শুরুতে যে পরিমাণ মাছ পাওয়া গেছে চলতি মৌসুমে তা অর্ধেক নেমে এসেছে। ফলে বাজারে চাহিদার তুলনায় সরবরাহ কম থাকায় মাছের দাম আকাশচুম্বী।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, জমিতে অতিরিক্ত সার প্রয়োগ, মা মাছ নিধন, অভয়াশ্রমের অভাব ও সংরক্ষণে সরকারি-বেসরকারি কোনো উদ্যোগ না থাকায় দিনের পর দিন দেশীয় মাছ হারিয়ে যাচ্ছে। দেশি মাছের উৎপাদন বৃদ্ধিতে স্থানীয় মৎস্য বিভাগ প্রায় নির্বিকার।

স্থানীয়রা বলেছেন, বৃষ্টি হলেই মাছ বাজারে আসতে শুরু করে। চলতি মৌসুমে আশানরুপ বৃষ্টি হয়েছে। অথচ বর্ষা প্রায় শেষ প্রান্তে আসলেও বাজারে দেশীয় মাছ উঠছে না। জলাশয়গুলোতে একসময় শিং, মাগুর, কৈ, টেংরা, শোউল, গজার, বোয়াল, বালিয়া, বাইম, পুঁটি, চিংড়িসহ নানা প্রজাতি মাছ পাওয়া যেত। বর্তমানে এসব প্রজাতির মাছ পাওয়াই দুষ্কর। বিলুপ্তি প্রায় এই মাছ গুলো একসময় চিরচেনা হলেও এখন তা এলাকাবাসীর কাছে এগুলো খুবই অপরিচিত। এছাড়া এলাকার হাট-বাজারগুলোতে দেশিয় মাছের আমদানি একেবারেই কমে গেছে। মাঝেমধ্যে বাজারে কিছু আমদানি হলেও তার দাম চড়া হওয়ায় সাধারণ মানুষের ক্রয় ক্ষমতার বাইরে থাকে।

বানিয়াচংয়ের কয়েকটি হাটবাজার ঘুরে দেখা যায়, রুই, কাতলা, সিলভার কার্প, বিদেশী মাগুর, পাঙ্গাশ, বিদেশী কৈ, তেলাপিয়াসহ বিভিন্ন ধরণের পুকুরে চাষ করা মাছ বিক্রি হলেও দেশিয় মাছের আমদানি নেই।

স্থানীয় মৎস্যজীবীরা জানান, বৈশাখ থেকে আষাঢ় মাস পর্যন্ত খাল-বিল, নদীনালা ও জলাশয়ে দেশী প্রজাতির মাছ ডিম পাড়ে। এ সময় একশ্রেণীর অসাধু জেলেরা নির্বিচারে ছোট মাছ শিকার করায় মাছ বংশবিস্তার করতে পারছেনা। ফলে দিন দিন বিলুপ্তি হয়ে যাচ্ছে এই দেশী প্রজাতির মাছ।

স্থানীয় সচেতন মহল মনে করেন-বাঁধ নির্মাণ না করা, ডোবাগুলোয় মাটি ভরাট না করা, কৃষিকাজে অপরিমিতভাবে রাসায়নিক সার ও কীটনাশকের ব্যবহার না করা, ডিমওয়ালা মাছ ধরা থেকে বিরত থাকা, জলাশয় দূষণ না করা, কারেন্ট জাল ব্যবহার নিষিদ্ধ এবং মৎস্য-বিভাগ সরেজমিন তদারকির ব্যবস্থা করলে মাছের উৎপাদন পুরোপুরি না হলেও অনেকটা স্বাভাবিক করা সম্ভব।
    
এই বিষয়ে বানিয়াচং উপজেলার সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা মোহাম্মদ আলম (অতিরিক্ত দায়িত্ব) বলেন, বৈশাখ থেকে শ্রাবণ মাস পর্যন্ত চার মাস দেশীয় প্রজাতির ছোটমাছ না ধরে প্রজননক্ষেত্র সংরক্ষণ করতে হয়। এছাড়াও নদী জলাশয়গুলোতে ডিমওয়ালা মাছ অবমুক্তকরণ, ছোট মাছের উপকারিতা সম্পর্কে জনসচেতনতা বৃদ্ধি ও প্রশিক্ষণ, জেলে পরিবারগুলোকে নির্দিষ্ট সময়ে মাছ ধরার পরিবর্তে বিকল্প কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে হবে। সমন্বিত বালাইনাশক প্রয়োগ পদ্ধতি সম্পর্কে প্রশিক্ষণ ও কীটনাশকের মাত্রাতিরিক্ত ব্যবহার কমানোর মাধ্যমে দেশীয় প্রজাতির মাছ রক্ষা করা সম্ভব।  


টুডে মিডিয়া গ্রুপ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
[email protected] ☎ ৮৮ ০১৭ ১৪৩৪ ৯৩৯৩
৭/ডি-১ (৭ম তলা), ব্লু ওয়াটার শপিং সিটি,
জিন্দাবাজার, সিলেট - ৩১০০, বাংলাদেশ।
Developed By - IT Lab Solutions Ltd.