Sylhet Today 24 PRINT

সুরমা নদীর উদ্ধারকৃত জায়গা সংরক্ষণে দ্রুত উদ্যোগ নেয়ার আহ্বান

\"সুরমা নদী পুনরুদ্ধার ও সংরক্ষণের চলমান তৎপরতায় নাগরিক ভাবনা\" শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠক

সিলেটটুডে ডেস্ক |  ৩১ আগস্ট, ২০১৯

সিলেট নগরীতে সুরমা নদী তীর পূনরুদ্ধার কাজ গত ৭ জুলাই থেকে শুরু হয়েছে। সুরমা নদীর দুই তীর দখল করে গড়ে ওঠা প্রায় পাঁচ শতাধিক স্থাপনা চিহ্নিত করা হয়েছে। এ অভিযান চলমান রয়েছে। এ অবস্থায় সুরমা নদী দখলমুক্ত করার দাবিতে আন্দোলনকারী নদী অধিকার বিষয়ক আন্তর্জাতিক সংগঠন সুরমা রিভার ওয়াটারকিপার-এর পক্ষ থেকে শুক্রবার রাত আট ঘটিকায় নগরীর খাদিমনগর এলাকার একটি রেস্তোরায় আয়োজন করা হয় গোলটেবিল বৈঠক।

"সুরমা নদী পুনরুদ্ধার ও সংরক্ষণের চলমান তৎপরতায় নাগরিক ভাবনা" শীর্ষক এই গোলটেবিল বৈঠকে অংশগ্রহণ করেন জনপ্রতিনিধি, নদী বিষয়ক সরকারী নীতিনির্ধারক, নদী অধিকারকর্মী, নগর পরিকল্পনাবিদ, প্রকৌশলী, স্থপতি ও গণমাধ্যমকর্মী।

বাংলাদেশ স্থপতি ইনষ্টিটিউট, সিলেট সেন্টারের আহ্বায়ক ও নগর পরিকল্পনাবিদ স্থপতি সৈয়দা জেরিনা হোসেনের সভাপতিত্বে গোলটেবিল বৈঠকে প্রারম্ভিক বক্তব্য রাখেন সুরমা রিভার ওয়াটারকিপার আব্দুল করিম কিম। আলোচনায় অংশগ্রহন করেন সিলেট সিটি কর্পোরেশন-এর মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী, জাতীয় নদীরক্ষা কমিশন-এর সদস্য শারমীন মুরশিদ, ওয়াটারকিপার্স বাংলাদেশ-এর সমন্বয়ক ও বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) যুগ্ম সম্পাদক শরীফ জামিল, সিলেট সিটি কর্পোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী নুর আজিজ, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থাপত্য বিভাগের বিভাগীয় প্রধান স্থপতি কৌশিক সাহা, বাংলাদেশ স্থপতি ইনষ্টিটিউট, সিলেট সেন্টারের সদস্য সচিব ও লিডিং ইউনিভার্সিটির স্থাপত্য বিভাগের বিভাগীয় প্রধান স্থপতি রাজন দাশ, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থাপত্য বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক স্থপতি শুভজিৎ চৌধুরী, যুক্তরাজ্যের হার্টফোর্ডশায়ার বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থাপত্য বিভাগের প্রাক্তন শিক্ষার্থী স্থপতি সায়কা তাবাসসুম চৌধুরী নাহিয়া, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থাপত্য বিভাগের সহকারী অধ্যাপক স্থপতি সুব্রত দাশ, স্থপতি মোহাম্মদ নাহিয়ান, লিডিং ইউনিভার্সিটির স্থাপত্য বিভাগের সহকারী অধ্যাপক স্থপতি শওকত জাহান চৌধুরী, প্রভাষক স্থপতি নুর জাহান বেগম ও শাহ মুহাম্মদ হাসিনা সাদ, নদী আন্দোলনকর্মী মোঃ ফজল খান প্রমুখ ।

প্রারম্ভিক বক্তব্যে আব্দুল করিম কিম বলেন, দেশব্যাপী এখন নদী উদ্ধারের তোড়জোড় চলছে। ঢাকার চার নদীসহ চট্রগ্রামের কর্ণফুলি নদীর দখলদার উচ্ছেদে দীর্ঘদিন ধরে অভিযান চলছে কিন্তু দুঃখের সাথে বলতে হয় ঢাকা ও চট্রগ্রামে উদ্ধারকৃত ভূমি পুনঃরায় দখল হয়ে স্থাপনা নির্মান হয়েছে। এই অবস্থায় সুরমা নদীর পূনরুদ্ধারকৃত জায়গা সংরক্ষণে দ্রুত উদ্যোগ নেয়া প্রয়োজন। পাশাপাশি দখলদারদের তালিকা প্রকাশ করা উচিৎ।
 
নগর পরিকল্পনাবিদ স্থপতি সৈয়দা জেরিনা হোসেন বলেন, সুরমা নদীকে কেন্দ্র করেই হাজার বছর পূর্বে সিলেট নগরী গড়ে ওঠে। এই নগরীর ইতিহাস-ঐতিহ্যের সাথে সুরমার অবিচ্ছেদ সম্পর্ক। তাই সুরমাকে বাঁচাতে হলে নগরবাসীর সামনে সুরমার প্রবহমানধারাকে উন্মুক্ত রাখতে হবে। অতীতে সিলেটে সুরমা নদী ও সুরমার সাথে সংযুক্ত ছড়াগুলোকে আড়াল করে, পেছন করে বসতবাড়ি ও বাণিজ্যিক স্থাপনা নির্মাণ করা হয়েছে। ফলে প্রাকৃতিক পানিপ্রবাহকে দৃষ্টির আড়ালে রেখে দখল ও দূষণ করে আবর্জনার ভাগাড়ে পরিণত করা হয়েছে। এখনো ছড়াগুলো দিয়েই নগরবাসীর পয়ঃনিষ্কাষন বর্জ্য সুরমায় আসছে। সুরমাকে সুস্থ রাখতে হলে সিলেটের খাল বা ছড়াগুলো দূষণমুক্ত করতে হবে । বিকল্প পয়ঃনিষ্কাষন ব্যাবস্থা গড়ে তুলতে হবে।

মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী বলেন, নদী ও ছড়া দখলদারদের উচ্ছেদে সিলেট সিটি কর্পোরেশন জিরো টলারেন্স নীতি অনুসরণ করছে। আমাদের কাছে এই মূহুর্তে নদীর তীর উদ্ধার করাটা গুরুত্বপূর্ণ। অতীতে দেখা গেছে নানা প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে অভিযানকে ব্যার্থ করার ও দখলদারদের সুবিধা দেয়ার চেষ্টা করা হয়েছে। এবার আর সে সুযোগ নেই। প্রধানমন্ত্রী নদী উদ্ধারের বিষয়ে সরাসরি নজরদারী রাখছেন। জাতীয় নদীরক্ষা কমিশনকে উচ্চ আদালত নদীর অভিভাবক ঘোষণা করেছে। এ অবস্থায় সুরমা নদীর তীর সংরক্ষণে নদী অভিভাবক জাতীয় নদী কমিশন, নদী অধিকারকর্মী, নগর পরিকল্পনাবিদদের সাথে নিয়ে সিলেট সিটি কর্পোরেশন সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবে।

মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী আরোও বলেন, আমলাতান্ত্রিক জটিলতার কারনে অনেক ভালো উদ্যোগ মুখ থুবড়ে পড়ে যায়। তিনি দ্রুততর সময়ে প্রয়োজনীয় কাজ সম্পন্ন করতে নাগরিকদের সহযোগীতা কামনা করেন।

শারমীন মুরশিদ বলেন, জাতীয় নদী রক্ষা কমিশন নদী সংরক্ষনে প্রকৃতিবান্ধব সবুজ পরিকল্পনা প্রনয়নের প্রতি গুরুত্ব প্রদান করে। নদীকে মানুষ ও ভূগর্ভস্থ পানির স্তরের সাথে আলাদা করে এমন কোন ঊদ্যোগ গ্রহন করলে তাতে নদী রক্ষা কমিশন অনাপত্তি প্রদান করবে না।

শরীফ জামিল বলেন, যথাযথভাবে সংরক্ষনের ব্যাবস্থা না নেয়ায় অতীতের সকল উদ্ধারকৃত নদীর জায়গা পুনর্দখল হয়েছে। তাই, সুরমা নদীর উদ্ধারকৃত জায়গা জনসম্পৃক্ত ও জনবান্ধব পরিকল্পনা বাস্তবায়নের মাধ্যমে সংরক্ষন করা প্রয়োজন।

স্থপতি কৌশিক সাহা বলেন, নদীকে সর্বসাধারণের জন্য উন্মুক্ত রাখতে হবে। দশনার্থীরা যেন নদী তীরে দেশীয় গাছগাছালির ছায়াতে বসে নদীর সৌন্দর্য অবলোকন করে। সুরমা নদী তীর সংরক্ষনে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থাপত্য বিভাগের শিক্ষার্থীদের কাছে নদী ও মানুষের মধ্যে আরো নিবিড় সম্পর্ক গড়ে তোলার মত প্রকল্পের প্রস্তাব করা যেতে পারে।

স্থপতি রাজন দাশ বলেন, নগর পরিকল্পনা প্রনয়নকালে নাগরিক প্রতিনিধিদের মতামত গ্রহণ করা প্রয়োজন। এতে গৃহীত সিদ্ধান্ত বাস্তব সম্মত হয়। সিলেট নগরীর সৌন্দর্য্য বর্ধন ও সুরমা নদীর তীর সংরক্ষণের কাজে স্থানীয় পর্যায়ের নগর পরিকল্পনাবিদ, স্থপতি, পরিবেশ ও প্রকৃতি সংরক্ষকদের মতামতকে গুরুত্ব দেয়া উচিৎ।

স্থপতি শুভজিৎ চৌধুরী বলেন, সুরমা তীরে যে কোন প্রকার প্রকল্প অনুমোদন দেয়ার পূর্বে নগর নকশাবিদ ও প্রকৃতি সংরক্ষকদের সমন্বয়ে নদী তীর সংরক্ষণে গবেষণা করা প্রয়োজন ।

স্থপতি সায়কা তাবাসসুম চৌধুরী নাহিয়া বলেন, নগররের সৌন্দর্য্য বর্ধন বা নদী তীর সংরক্ষণ মানে ইট-সিমেন্ট দিয়ে তীর বাঁধাই করা নয়। প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্যকে সংরক্ষণ করতে গিয়ে প্রকৃতির স্বাভাবিকতাকে বিনস্ট করার একটা প্রবণতা আমাদের নীতি নির্ধারক মহলে আছে। এই ভাবনা থেকে তাঁদের বেড় করে আনতে হবে।

টুডে মিডিয়া গ্রুপ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
[email protected] ☎ ৮৮ ০১৭ ১৪৩৪ ৯৩৯৩
৭/ডি-১ (৭ম তলা), ব্লু ওয়াটার শপিং সিটি,
জিন্দাবাজার, সিলেট - ৩১০০, বাংলাদেশ।
Developed By - IT Lab Solutions Ltd.