Sylhet Today 24 PRINT

হকারদের দখলে কিনব্রিজ

নিজস্ব প্রতিবেদক |  ০৯ অক্টোবর, ২০১৯

সংস্কারের জন্য যান চলাচল বন্ধ রাখা হয়েছে সিলেটের ঐতিহ্যবাহী কিনব্রিজে। এই সেতু দিয়ে যান চলাচল স্থায়ীভাবে বন্ধ করে পদচারী সেতুতে পরিণত করার পরিকল্পনার কথা জানিয়েছেন সিটি মেয়র। তবে যান চলাচল বন্ধ করার কিছুদিনের মধ্যেই হকারদের দখলে চলে গেছে পুরো সেতু। দীর্ঘ সেতুজুড়ে নানা ধরণের পণ্যের পসরা নিয়ে বসেছেন হকাররা। ফলে দুর্ভোগে পড়তে হচ্ছে সেতু পারাপারকারী পথচারীদের।

হকারদের কারণে কিনব্রিজ অনেকটা বাজারে পরিণত হয়েছে। কি মিলে না এই বাজারে। মাছ, সুটকি, কাঁচামরিচ, শাক-সবজি, পান-সুপারি, টিশার্ট, মশারি, মোবাইল সিম, চার্জার, হাতঘড়ি, বেল্ট, হ্যাডফোনসহ নিত্য প্রয়োজনীয় সকল জিনিসপত্র। ব্রিজে যান চলাচল বন্ধ করার পর থেকে প্রতিদিন প্রায় শ’খানেক হকার বিভিন্ন পণ্যের পসরা সাজিয়ে ব্রিজের দুইপাশে বসেন।      

শুধুমাত্র পণ্যের পসরা সাজিয়ে বসে খান্ত থাকেন না হকাররা। ব্রিজের উপর দিয়ে চলাচলরত পথচারীদের হাঁকডাক করেও পণ্য কিনতে উদ্ভূদ্ধ করেন। অনেক পথচারী পণ্য কেনা বা দরদাম করতে গিয়ে জটলা পাকান বিক্রেতাদের কাছে। এতে চলচলে বিঘ্ন ঘটে সেতু ব্যবহারকারীদের।

সম্প্রতি সিলেটের সুরমা নদীতে স্থাপিত ব্রিটিশ ঐতিহ্যের নিদর্শন কিনব্রিজ সংস্কার করার উদ্যোগ নেয় সিলেট সিটি করপোরেশন। এর প্রেক্ষিতে কিনব্রিজ সংস্কারের জন্য গত এক সেপ্টেম্বর থেকে কিনব্রিজ দিয়ে যান চলাচল বন্ধ শুধুমাত্র করে শুধু পায়ে হেঁটে চলার উন্মুক্ত করে দেয় সিলেট সিটি করপোরেশন। এরপর থেকেই হকারদের উৎপাত বেড়ে যায়। তবে সংস্কার কাজ শুরু না হওয়ায় ও সিসিকের কোনো তদারকি না থাকায় হকারদের দখলে চলে গেছে কিনব্রিজ।

কিনব্রিজ ব্যবহারকারী কদমতলী এলাকার ব্যবসায়ী মোবাশ্বির আহমদ বলেন, যখন শুনলাম এই ব্রিজে যান চলাচল বন্ধ হবে তখন খুব খুশি হয়েছিলাম। কিন্তু এখন হকারদের উৎপাতে এই ব্রিজ দিয়ে হাঁটা মুশকিল হয়ে গেছে। ব্রিজ পার হওয়ার সময় হকাররা ডাকাডাকি করে। অনেকই এই হকারদের সামনে জটলা করে দাঁড়িয়ে থাকেন। যার ফলে স্বাচ্ছন্দ্যে ব্রিজটি ব্যবহার করা যায় না। এ ব্যাপারে সিটি করপোরেশনের শীঘ্রই উদ্যোগ নেওয়া উচিত। কারণ যত দিন যাচ্ছে হকারদের উৎপাত বাড়ছে।

ব্রিজ ব্যবহারকারী আরেক পথচারী শিক্ষার্থী ছয়ফুল আহমেদ বলেন, এই ব্রিজে যান চলাচল বন্ধ করায় খুব ভালো হয়েছে। আগে এই ব্রিজ পার হতেই ৩০ টাকা লাগত। এখন বন্ধু-বান্ধব নিয়ে গল্প করে হেঁটে চলে যাই। তবে ইদানীং হকার বেড়ে যাওয়ায় চলাচলে সমস্যা হয়। দুয়েকজন ভ্রাম্যমান হকার হাতে করে বাদাম, চানাচুর বিক্রি করতেই পারেন। এটা এতটা সমস্যা মনে হয় না।  কিন্তু এভাবে ব্রিজ দখল করে এত হকার বসলে অবশ্যই পথচারীদের হাঁটাচলায় বিঘœ ঘটে। প্রতিদিনই দেখছি হকার বাড়ছে। এখনি এ ব্যাপারে উদ্যোগ না নিলে এই ব্রিজ বাজারে পরিণত হবে।   

জানা যায়, কিনব্রিজ সিলেটের সুরমা নদীতে স্থাপিত প্রথম সেতু। ব্রিটিশ আমলে ১৯৩৩ সালে লোহার কাঠামোয় দৃষ্টিনন্দন সেতুর নির্মাণকাজ শুরু হয়। আসাম প্রদেশের তৎকালীন গভর্নর মাইকেল কিনের নামে এই সেতুর নামকরণ হয় কিনব্রিজ। ১৯৩৬ সালে সেতুটি চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হয়।

সেতুটি প্রায় আট দশক ধরে সচল ছিল। তবে মুক্তিযুদ্ধের সময় সেতু কিছুটা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে সংস্কারকাজ শেষে আবারও সচল হয় কিনব্রিজ। নব্বই দশকের পর সিলেটে সুরমা নদীর ওপর আরও চারটি সেতু নির্মাণ করা হয়। কিনব্রিজ সিলেট নগরের মধ্যভাগে হওয়ায় যানবাহন চলাচল কখনো বন্ধ হয়নি। লোহা দিয়ে তৈরি কিনব্রিজের আয়তন হচ্ছে ১,১৫০ ফুট দৈর্ঘ্য এবং ১৮ ফুট প্রস্থ ।

গত ৩ সেপ্টেম্বর মেরামত কাজ চলছে শুনে কিনব্রিজ দেখতে আসেন মার্কিন রাষ্ট্রদূত আর্ল রবার্ট মিলার। এসময় তিনি কিনব্রিজকে পৃথিবীর অন্যতম দীর্ঘ পায়ে হাঁটার ব্রিজ বলে মন্তব্য করেন। ঐতিহ্যবাহী সেতুটি সংস্কার করে টিকিয়ে রাখার চেষ্টা করায় সিলেট সিটি করপোরেশনকে ধন্যবাদ জানান মার্কিন রাষ্ট্রদূত আর্ল রবার্ট মিলার। একই সঙ্গে তিনি ব্রিজটির রক্ষণাবেক্ষণে মার্কিন সরকারের সহায়তার আশ্বাস দিয়ে যান।

এ ব্যাপারে সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী বলেন, কিনব্রিজ সিলেটের একটি প্রতীক। ঐতিহ্যবাহী এই সেতু টিকিয়ে রাখার স্বার্থে যান চলাচল বন্ধ করে শুধু পায়ে হাঁটার জন্য উন্মুক্ত রাখা হয়েছে। এখন এই জায়গাও হকাররা জনগণের হাঁটাচলায় বিঘ্ন ঘটাচ্ছে। প্রতিদিনই  নগরের কোনো না কোনো এলাকায় হকার উচ্ছেদে অভিযান করছি। কিন্তু এখন এ ব্যাপারে সবার সহযোগিতা দরকার। নাগরিক সমাজ যদি এগিয়ে না আসেন তাহলে একা কিছু করা সম্ভব না।      

তিনি বলেন, ঐতিহ্যের নিদর্শন কিনব্রিজকে রক্ষা করার জন্য সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগের প্রকৌশল বিভাগকে নতুন প্রস্তাব দিয়েছে সিটি করপোরেশনের প্রকৌশল বিভাগ। শীঘ্রই কিনব্রিজ সংস্কারের কাজ শুরু হবে।

সিলেটর এই ঐতিহাসিক নিদর্শনকে টিকিয়ে রাখার জন্য হকার উচ্ছেদসহ সার্বিক বিষয়ে সিলেটে সর্বস্তরের মানুষের সহযোগিতা কামনা করেন সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী।

টুডে মিডিয়া গ্রুপ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
[email protected] ☎ ৮৮ ০১৭ ১৪৩৪ ৯৩৯৩
৭/ডি-১ (৭ম তলা), ব্লু ওয়াটার শপিং সিটি,
জিন্দাবাজার, সিলেট - ৩১০০, বাংলাদেশ।
Developed By - IT Lab Solutions Ltd.