Sylhet Today 24 PRINT

কোলে করে ঘুম পাড়িয়ে তুহিনকে হত্যা করেন বাবা!

নিজস্ব প্রতিবেদক |  ১৫ অক্টোবর, ২০১৯

রোববার রাতে খাবার পর ছেলে তুহিন হাসানকে (৫) কোলে নিয়েই ঘুম পাড়ান বাবা আব্দুল বাছির। মধ্যরাতে কোলে করেই ছেলেকে ঘরের বাইরে নিয়ে আসেন তিনি। এরপর নিজের ভাই নাসিরের সাথে মিলে ছেলেকে হত্যা করেন বাছির। হত্যার পর শিশু তুহিনের কান ও লিঙ্গ কেটে গাছের সঙ্গে ঝুলিয়ে রাখেন তারা। এরপর দুটি ছুরিতে প্রতিপক্ষের দু'জনের নাম লিখে তুহিনের পেটে গেঁথে দেন।

আব্দুল বাছির ও নাসিরের বরাত দিয়ে সুনামগঞ্জের দিরাইয়ে চাঞ্চল্যকর তুহিন হত্যার এই লোমহর্ষক বর্ণনা দিয়েছেন সুনামগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মিজানুর রহমান। মঙ্গলবার বিকেলে মিজানুর রহমান জানান, পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে তুহিনের বাবা ও চাচা হত্যাকাণ্ডের দায় স্বীকার করে এমন বর্ণনা দিয়েছে। বিকেলে আদালতে দায় স্বীকার করে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছেন তুহিনের চাচা নাসির ও চাচাতো ভাই শাহরিয়ার। আদালতের মাধ্যমে তুহিনের বাবা আব্দুর বাছির, চাচা আব্দুর মুছাব্বির এবং প্রতিবেশি জমশেদ আলীকে ৩ দিনের রিমান্ডে নিয়েছে পুলিশ।

অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মিজানুর রহমান বলেন, পূর্বের একটি হত্যা মামলার বিরোধের জের ধরে গ্রামের প্রতিপক্ষকে ফাঁসাতে পরিবারের লোকজন শিশু তুহিন মিয়াকে পরিকল্পিতভাবে খুন করে। একটি হত্যার আসামী তুহিনের বাবা। এই মামলার বাদীপক্ষকে ফাঁসাতে তারা শিশু তুহিনকে খুন করে।

মিজানুর রহমান আরও বলেছেন, শুরু থেকেই আমরা বলেছিলাম এ ঘটনায় তুহিনের পরিবারের লোকজন জড়িত। প্রতিপক্ষের লোকজনকে ফাঁসাতে পরিকল্পিতভাবে এই কাজ করা হয়েছে।

সোমবার ভোরে উপজেলার রাজানগর ইউনিয়নের কেজাউড়া গ্রাম থেকে ঝুলন্ত অবস্থায় তুহিনের ক্ষতবিক্ষত লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। এ সময় তুহিনের পেটে দুটি ধারালো ছুরি বিদ্ধ ছিল। তার পুরো শরীর রক্তাক্ত, কান ও লিঙ্গ কাটা ছিল। তুহিনের পেটে বিদ্ধ দুটি ছুরিতে ওই গ্রামের বাসিন্দা ছালাতুল ও সুলেমানের নাম লেখা ছিলো। তাদের ফাঁসাতে এ ধরনের নৃশংস হত্যাকাণ্ড ঘটনা ঘটতে পারে বলে প্রথম থেকেই ধারণা করে আসছেন স্থানীয়রা।

স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, কেজাউরা গ্রামের সাবেক মেম্বার আনোয়ার হোসেনের সঙ্গে নিহত তুহিনের বাবা আব্দুল বাছিরের আধিপত্য বিস্তার নিয়ে বিরোধ চলছে। ছালাতুল ও সুলেমান সাবেক মেম্বার আনোয়ার হোসেনের লোক।

এদিকে, সোমবার সকালে তুহিনের লাশ উদ্ধারের পর থেকেই দেশজুড়ে আলোচিত হয়ে ওঠে এ ঘটনা। এমন বীভৎস কায়দায় একটি শিশুকে হত্যার ঘটনায় ব্যাপক সমালোচনা দেখা দেয়।

পুলিশও এ ঘটনার তদন্তে তৎপর হয়ে ওঠে। নিহত শিশুর পরিবারের সদস্যদের কথাবার্তা সন্দেহজনক হওয়ায় সোমবার দুপুরেই তুহিনের বাবা আব্দুল বাছির, চাচা আব্দুল মুছাব্বির, নাসির উদ্দিন, চাচাতো ভাই শাহরিয়ার, প্রতিবেশী আজিজুল ইসলাম, চাচি খাইরুল নেছা ও চাচাতো বোন তানিয়াকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য থানায় নিয়ে আসে পুলিশ।

ওইদিন বিকেলে দিরাই থানায় সংবাদ সম্মেলনে সুনামগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মিজানুর রহমান হত্যাকাণ্ডে তুহিনের পরিবারের ২/৩ জন সদস্যের সম্পৃক্ততার প্রমাণ মিলেছে বলে জানান।

এ ঘটনায় মঙ্গলবার সকালে তুহিনের মা মনিরা বেগম বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামাদের আসামী করে দিরাই থানায় মামলা দায়ের করেন। মামলা দায়েরের পর মঙ্গলবার বিকেলে চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট শ্যাম কান্ত সিনহার আদালতে আসামীদের ৫জনকে তোলা হয়।

এসময় তুহিনের বাবা আব্দুর বাছির, চাচা আব্দুর মুছাব্বির এবং প্রতিবেশি জমশেদ আলীর ৫দিনের রিমান্ডের আবেদন জানালে আদালত ৩দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। আর দু'জন স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন বলে জানান দিরাই থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কেএম নজরুল ইসলাম। চাচি খাইরুল নেছা ও চাচাতো বোন তানিয়ার সম্পৃক্ততা না পাওয়ায় তাদের এখনও গ্রেপ্তার দেখানো হয়নি। তবে জিজ্ঞাসাবাদ চলছে বলে জানান ওসি।

টুডে মিডিয়া গ্রুপ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
[email protected] ☎ ৮৮ ০১৭ ১৪৩৪ ৯৩৯৩
৭/ডি-১ (৭ম তলা), ব্লু ওয়াটার শপিং সিটি,
জিন্দাবাজার, সিলেট - ৩১০০, বাংলাদেশ।
Developed By - IT Lab Solutions Ltd.