Sylhet Today 24 PRINT

মুগ্ধতা ছড়িয়ে শেষ হল ‘সিলেটে রবীন্দ্রনাথ : শতবর্ষ স্মরণোৎসব’

জাহিদুল ইসলাম, অতিথি প্রতিবেদক |  ০৮ নভেম্বর, ২০১৯

ঘূর্ণিঝড় ‘বুলবুল’ এর প্রভাবে দেশজুড়ে যখন কালো মেঘের বিচরণ ঠিক একই সময়ে সিলেটের জেলা স্টেডিয়ামে মুগ্ধতা ছড়াচ্ছিলেন এক ঝাঁক তারকা শিল্পী। সুরের মূর্ছনায় সম্মোহিত সিলেটের কয়েক হাজার দর্শক। রবীন্দ্রনাথের গান, কবিতা আর জীবনালোচনায় স্মরণীয় হয়ে উঠেছিল শুক্রবারের বিকেল।

শুক্রবার (৮ নভেম্বর) বিকেল ছিল সিলেটবাসীর জন্য স্মরণীয় সময়। চার দিনব্যাপী চলা ‘সিলেটে রবীন্দ্রনাথ : শতবর্ষ স্মরণোৎসব’ এর সমাপনী দিন ছিল কাল। রবিঠাকুরের অমর শিশুতোষ কবিতা ‘বীরপুরুষ’ আবৃত্তির মাধ্যমে অনুষ্ঠানের সূচনা করেন সিলেটের শিশু শিল্পীরা। পরে একে একে সম্মিলিত আবৃত্তি, সংগীতের মোহনীয়তায় মজেন উপস্থিত দর্শকরা। অনুষ্ঠান যত গড়িয়েছে দর্শক সমাগম ততই বেড়েছে। একটা সময় তিল ধারণের মত জায়গা ছিলনা সিলেট জেলা স্টেডিয়ামে, দর্শক সামলাতে হিমশিম খেতে হয়েছে নিরাপত্তা রক্ষী ও স্বেচ্ছাসেবকদের। অনুষ্ঠানে আবৃত্তি ও গান পরিবেশন করেন বাংলাদেশের রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা, লাইসা আহমেদ লিসা, ড. অনুপম কুমার পাল, ড. অসীম দত্ত, আমিনুল ইসলাম লিটন এবং ভারতের মেধা বন্দ্যোপাধ্যায়, পদ্মশ্রী পূর্ণদাস বাউল ও অগ্নিভ বন্দ্যোপাধ্যায়সহ খ্যাতিমান শিল্পীরা।

এদিন সমাপণী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পররাষ্ট্র মন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন। বিশেষ অতিথি হিসেবে রবীন্দ্র স্মরণোৎসবের আলোচনায় উপস্থিত ছিলেন সংস্কৃতি বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ, ‘সিলেটে রবীন্দ্রনাথ : শতবর্ষ স্মরণোৎসব’ আয়োজক কমিটির আহ্বায়ক সাবেক অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত, সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী, আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম বোর্ডের সদস্য ড. ইনাম আহমদ চৌধুরী, সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শফিকুর রহমান চৌধুরী এবং বিশিষ্ট রবীন্দ্র গবেষক ও আসামের গৌহাটি বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা বিভাগের সাবেক ডিন ঊষা রঞ্জন ভট্টাচার্য।

এছাড়া উপস্থিত ছিলেন সিলেট-৩ আসনের সাংসদ মাহমুদুস সামাদ কয়েস, সাবেক সাংসদ জেবুন্নেসা হক, সিলেটের জেলা প্রশাসক কাজী এমদাদুল ইসলাম, এসএমপি কমিশনার গোলাম কিবরিয়া, সিলেট জেলা পুলিশ সুপার ফরিদ উদ্দিন, সিলেট সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী বিধায়ক রায় চৌধুরী, যুবলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য আহমদ আল কবিরসহ সিলেটের বিভিন্ন প্রশাসনিক দপ্তরের কর্মকর্তা, সিটি কাউন্সিলর ও সংস্কৃতিকর্মীরা।

অনুষ্ঠানে স্বল্প পরিসরে আয়োজিত আলোচনা সভায় স্বাগত বক্তব্য রাখেন সিটি মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী। এসময় তিনি সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদের কাছে সিলেটে একটি কালচারাল সেন্টার স্থাপনের দাবি জানান। বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখতে এসে প্রতিমন্ত্রী প্রথমেই সিলেট বাসী ও আয়োজক কর্তৃপক্ষকে ধন্যবাদ জানা এমন একটি অনুষ্ঠান আয়োজনের জন্য। এরপর তিনি কবিগুরুর স্মরণে বিভিন্ন বিষয়বস্তু নিয়ে আলোচনা করেন। এসময় কবিগুরুর হাস্যরস নিয়েও কথা বলেন তিনি। বক্তব্যে শেষাংশে সিলেটে একটি কালচারাল সেন্টার করার দাবি মেনে নিয়ে তিনি বলেন, আজ সিলেটবাসীর এই আয়োজন দেখে আমি সত্যি অভিভূত। আমারও মনে হচ্ছে সিলেটে এমন একটি কালচারাল সেন্টার হোক যেখানে সংস্কৃতিচর্চা হবে, গবেষণা হবে।

অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি পররাষ্ট্র মন্ত্রী ড. একে আব্দুল মোমেন তার বক্তব্যে রবীন্দ্রনাথকে স্মরণ করে তার বিভিন্ন রচনার অংশ বিশেষ পাঠ করেন। পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন সিলেট এক পুণ্যভূমি, যেখানে শাহজালাল (রহ) এর আগমন ঘটেছে। এটি শ্রী চৈতন্যের পিতৃভূমি। এই মাটিতেই জন্মেছেন হাছন রাজা, সৈয়দ শাহনুর, আরকুম শাহ, সীতালং শাহ ওবাউল আব্দুল করিম। এই মাটির প্রতি রবি ঠাকুরের ভালোবাসাও ছিল অসীম। সিলেটকে বাংলা থেকে বিচ্ছিন্ন করে আসামে যুক্ত করার সময় তিনি ব্যথিত হয়েছেন।

তিনি যখন সিলেট আসেন ১৯১৯ সালে, তখন তিনি ইংরেজদের দেয়া নাইট উপাধি ফিরিয়ে দিয়েছেন। এই সিলেটে এসে তিনি এতই মুগ্ধ হয়েছেন, এখানের সকলের ভালোবাসায় এতই মুগ্ধ হয়েছেন যে তিনি সিলেটকে ‘শ্রীভূমি’ বলে আখ্যায়িত করেছেন। মন্ত্রী সকলকে রবীন্দ্রনাথের দর্শনের প্রতি অনুপ্রাণিত হতে আহ্বান জানিয়ে বলেন, আজ বিশ্বের প্রতিটা দেশে এক অস্থির সময় যাচ্ছে। সবাই হানাহানি আর সংঘাতে জড়িয়ে পড়ছে। এর অন্যতম কারণ পরস্পরের প্রতি অশ্রদ্ধা, একে অন্যের প্রতি ভালোবাসা না থাকা। রবি ঠাকুর আমাদের একে অন্যকে শ্রদ্ধা করার শিক্ষা দিয়েছেন। তিনি বিশ্ব শান্তির জন্য প্রার্থনা করেছেন। সিলেটে যেদিন গুরুদেব এসেছিলেন সেদিন তাকে অভিভাধন জানিয়েছেন সিলেট মিউনিসিপালিটির চেয়ারম্যান রায় বাহাদুর শ্রী সুকুমার চৌধুরী এবং মৌলভী আব্দুর রশিদ। তখন যেমন সিলেটের মানুষে মানুষে ভেদাভেদ ছিলনা, আজও নেই।

সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি শতবর্ষেও অপরিবর্তিত রয়েছে। মন্ত্রী বিশ্ব শান্তি কামনায় রবি ঠাকুরের কবিতার কয়েকটি চরণ আবৃত্তি করেন ‘যুক্ত করো হে সবার সঙ্গে, মুক্ত করো হে বন্ধ, সঞ্চার করো সকল কর্মে, শান্ত তোমার ছন্দ’। অনুষ্ঠানে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীর যুক্ত থাকার কথা থাকলেও অনিবার্য কারণবশত: তিনি যোগ দিতে পারেন নি। সেজন্য তার পক্ষ থেকে পররাষ্ট্রমন্ত্রী সিলেটবাসীকে অভিনন্দন জানান।

পরে সাবেক অর্থমন্ত্রী ও অনুষ্ঠানের পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি আবুল মাল আব্দুল মুহিত উপস্থিত সকলকে ধন্যবাদ জানিয়ে সমাপনী অনুষ্ঠানের সমাপ্তি ঘোষণা করেন।

টুডে মিডিয়া গ্রুপ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
[email protected] ☎ ৮৮ ০১৭ ১৪৩৪ ৯৩৯৩
৭/ডি-১ (৭ম তলা), ব্লু ওয়াটার শপিং সিটি,
জিন্দাবাজার, সিলেট - ৩১০০, বাংলাদেশ।
Developed By - IT Lab Solutions Ltd.