নিজস্ব প্রতিবেদক | ১২ নভেম্বর, ২০১৯
প্রায় ৬ যুগ পর গত জুলাইয়ে সিলেট নগরীর শেখঘাট খুলিয়াপাড়া এলকার ৩৭ শতক জমির দখল নিয়েছিলো সিলেট সিটি করপোরেশন (সিসিক)। তবে মাত্র ৪ মাসের মাথায় এই জমি আবার পূর্বের দখলদারকে ফিরিয়ে দিতে হয়েছে সিসিককে। সোমবার সকালে প্রায় ১০ কোটি টাকা মূল্যের এ জমি ফিরিয়ে দেওয়া হয়।
সোমবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে সিলেট সিটি করপোরেশনের পক্ষে ১৩ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর শান্তনু দত্ত, সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তা-কর্মচারী ও স্থানীয় লোকজনের উপস্থিতিতে ওই জমি মালিক দাবিদার হুমায়ুন কবির চৌধুরীর কাছে ফিরিয়ে দেওয়া হয়।
ওয়ার্ড কাউন্সিলর শান্তনু দত্ত বলেন, উচ্চ আদালতের নির্দেশনা মোতাবেক ও মেয়রের পক্ষে সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে হুমায়ুন কবিরের কাছে জায়গা বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে।
এর আগে গত ২১ জুলাই স্থাপনা ভেঙ্গে জমিটির দখল নেয় সিটি করপোরেশন। এরপর ওই জায়গায় সিলেট সিটি করপোরেশন নিজস্ব ওয়্যারিং কার্যালয় নির্মাণ করে ওয়্যার হাউস হিসেবে ব্যবহার করে আসছিল।
জমি দখল নেওয়ার সময় সিসিকের পক্ষ থেকে থেকে জানানো হয়েছিলো, মিউনিসিপালিটি মৌজার জে এল নং- ৯১ এর ৩৭৫১ ও ৩৭৫২ নং দাগে মোট ৩৯ দশমিক ৮৫ শতক জমির মালিক সিলেট সিটি করপোরেশন। ১৯৪৭ সালে তৎকালীন মিউনিসিপালিটি কর্তৃপক্ষ ঐ এলাকার এক ব্যক্তিকে শর্ত সাপেক্ষে লিজ প্রদান করেন। এর পরপরই জমিতে কব্জা করে বসেন ওই ব্যক্তি। লিজের মেয়াদ শেষ হলেও জমি ছাড়েননি তিনি। এরপর বিভিন্ন সময় বিভিন্ন হাত বদল হয় জমিটি। এভাবেই সিসিকের হাত ছাড়া হয়ে যায় মূল্যবান ভূমিটি। বার বার নোটিশ পাঠালেও কোনো কাজ হয়নি। পরে সিসিকের মূল্যবান জমি উদ্ধারে আদালতের শরণাপন্ন হন মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী। আদালতের রায় সিসিকের পক্ষে আসলে উদ্ধার অভিযানে নামেন তিনি।
তবে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, ওই জমির মালিকানা নিয়ে এখনও আদালতে মামলা বিচারাধীন রয়েছে। বিচারাধানীন থাকাবস্থায়ই জমির দখল নেয় সিসিক। পরবর্তীতে জমির মালিক দাবিদারপক্ষ বিষয়টি আদালতের নজরে আনেন। আদালত ওই জমি তাদের সমঝিয়ে দিতে সিসিক মেয়রকে নির্দেশ দেন।
ভূমির মালিক দাবিদার হুমায়ুন কবির চৌধুরী বলেন, আমরা জমির প্রকৃত মালিক। আমার বাবা মরহুম সফিউর রহমান চৌধুরীর এই জমিটি কিনেছেন।
তিনি জানান, ১৯৮৬ সালে তৎকালীন পৌরসভা জমি উদ্ধারের মামলা করে। ১৯৯০ সালে আদালত সফিউর রহমানের পক্ষে রায় দেয়। ২০০২ সালে তৎকালীন পৌরসভা উচ্চ আদালতে জমি উদ্ধারের জন্য আপিল করে। পরে উচ্চ আদালত আদেশ দেন, এ জমি নিয়ে সিআর নং ৬৫১৬/০২ মোকদ্দমা বিচারাধীন এবং এটি নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত মালিকানার বিষয়ে স্থগিতাদেশ বহাল থাকবে।
হুমায়ুন কবির চৌধুরী জানান, উচ্চ আদালতের পরবর্তী কোনো আদেশ না নিয়েই এবং মালিক পক্ষকে কোনো নোটিস না দিয়েই ২১ জুলাই এ জমি দখল করে সিসিক। পরে ২৪ জুলাই মালিকপক্ষের আইনজীবী মঞ্জুর আল মতিন সিসিক মেয়রকে কারণ দর্শানোর নোটিস দেন। মেয়র নোটিসের জবাব দেননি। বিষয়টি উচ্চ আদালতের নজরে আনা হলে মেয়রকে শোকজ করেন আদালত এবং জমিটি প্রকৃত মালিককে সমঝিয়ে দিয়ে আদালতে হাজির হতে নির্দেশ দেন। এ প্রেক্ষিতেই সোমবার জমিটি সমঝিয়ে দেওয়া হয়।