Sylhet Today 24 PRINT

গোয়াইনঘাটে বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে আ’লীগ নেতার পশুর হাট

মিনহাজ উদ্দিন, গোয়াইনঘাট |  ১৮ নভেম্বর, ২০১৯

সিলেটের গোয়াইনঘাটের ৬নং ফতেহপুর ইউনিয়নের বিন্নাকান্দি উচ্চ বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে গড়ে তোলা হয়েছে পশুরহাট। সীমান্ত পেরিয়ে ভারত থেকে চোরাই পথে আসা এসব অবৈধ গরু বিক্রয়ের জন্য গরুর হাট তৈরি করে চলছে বাণিজ্য। বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে এমন পশুরহাট গড়ে তুলায় গবাদি পশুর মল-মূত্রের তীব্র গন্ধে বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও স্থানীদের চলাচলে বেগ পোহাতে হচ্ছে। এদিকে এ ঘটনায় ছাত্র/ছাত্রী, শিক্ষানুরাগীসহ এলাকার শিক্ষা সচেতন সাধারণ মানুষজনের মধ্যে ক্ষোভ বিরাজ করছে।

অভিযোগ উঠেছে বিদ্যালয় সভাপতি উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ইসমাইল আলী মাষ্টার, বিদ্যালয় সহকারী প্রধান শিক্ষক ও ইউপি চেয়ারম্যান আমিনুর রহমান চৌধুরী, প্রধান শিক্ষক মহসিন উদ্দিনসহ একটি চক্রের প্রকাশ্য মদদে এই অবৈধ পশুরহাট গড়ে উঠেছে। স্থানীয় বিন্নাকান্দি গ্রামের সিরাজ উদ্দিনের ছেলে সাব্বির আহমদের অনুকূলে ১ লক্ষ ৮০ হাজার টাকায় ১ বছরের জন্য ইজারা পেয়েছেন।

জানা যায়, বিদ্যালয়ের কার্যক্রম চলাকালীন প্রতি শনি ও মঙ্গলবার বেলা ২টা থেকে পশুরহাটের কার্যক্রম শুরু হয়ে গভীর রাত পর্যন্ত চলে পশু বিকিকিনি। উপজেলা প্রশাসন কিংবা শিক্ষা বিভাগের কোন ধরণের অনুমতি ছাড়াই এখানে চলছে পশু কেনা-বেচা।  

বিন্নাকান্দি উচ্চ বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে সরজমিনে গিয়ে গত শনি ও রোববার দু-দিন সরেজমিনে দেখা যায় এখানে প্রকাশ্যে চলছে পশু বিকিকিনির কার্যক্রম। বিদ্যালয় চলাকালে এর আঙ্গিনায় পশুর হাটের বর্জ্যের গন্ধে শিক্ষার্থীদের মুখে রুমাল, টিস্যু দিয়ে অতিক্রম করতে হচ্ছে।

এ ব্যাপারে গোয়াইনঘাট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ইউএইচও ডা. রেহান উদ্দিন জানান, কোন বিদ্যালয় চলাকালে বিদ্যালয়ের আঙ্গিনায় পশুর হাটের সৃষ্ট পরিবেশ দূষণের দ্বারা ছাত্র/ছাত্রীরা বমি, খিচুনিসহ জনিত রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা আছে। তাছাড়া বায়ু বাহিত  হয়ে এ থেকে ছাত্র/ছাত্রীদের ডায়রিয়া,কলেরাসহ পেটের পীড়াসহ নানা রোগের আক্রান্ত হওয়া ও পশুর দ্বারা শিক্ষার্থীরা আহত হয়ে স্বাস্থ্যহানির সম্ভাবনা আছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন রাজনৈতিক ও অপর একজন শিক্ষা সচেতন ব্যক্তি জানান, ১৯৩৫ সালে স্থাপিত বিন্নাকান্দি উচ্চ বিদ্যালয়ের  ইতিহাসে এমন নোংরা ঘটনা আর কখনো ঘটেনি। সামান্য কিছু টাকার জন্য বিদ্যালয় ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি, সদস্যরা, প্রধান শিক্ষকসহ জড়িতরা এমনটা করবে তা কল্পনাও করতে পারিনি। ১ হাজারের অধিক শিক্ষার্থী নির্ভর এ বিদ্যাপীঠের এমন চিত্র কাম্য হতে পারেনা।

এ ব্যাপারে কথা হলে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মহসিন উদ্দিন জানান, এই পশুর হাট বিদ্যালয়ে কোন পরিবেশ নষ্ট কিংবা সৌন্দর্য্যহানির ঘটনা না। বরং বিদ্যালয় আর্থিকভাবে লাভবানের একটি খাত। বিদ্যালয় লাভবান হচ্ছে এমনটা বলেলও পশুর হাটের জন্য বিদ্যালয় আঙ্গিনা ইজারা দেয়া বাবদপ্রাপ্ত বিদ্যালয় তহবিলে জমা নিয়েছেন এম কোন রশিদ দেখাতে পারেননি।

বিদ্যালয় ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ইসমাইল আলী মাষ্টার জানান, এটা আমরা বিদ্যালয়ের স্বার্থে ইজারা দিয়েছি। এটা কোন অন্যায় কাজ নয়। বিদ্যালয়ের স্বার্থে এটা আমরা স্থাপন করেছি।

বিদ্যালয় আঙ্গিনায় স্থাপিত পশুর হাটের ইজারাদার সাব্বির  আহমদ জানান, বিদ্যালয় সভাপতি ইসমাইল আলী মাষ্টার,বিদ্যালয় সহকারী প্রধান শিক্ষক ও ইউপি চেয়ারম্যান আমিনুর রহমান চৌধুরী,প্রধান শিক্ষক মহসিন উদ্দিনসহ ৬ মৌজার অর্থাৎ পশ্চিম রাজের মতামতের ভিত্তিতে ১ লক্ষ ৮০ হাজার টাকায় মৌখিকভাবে আমাকে এই হাট ইজারা দিয়েছেন।

এ ব্যাপারে কথা হয় গোয়াইনঘাটের উপজেলা নির্বাহী অফিসার বিশ্বজিত কুমার পালের সাথে। তিনি জানান, এটা সম্পূর্ণ অবৈধ ও এখতিয়ার বহির্ভূত কাজ। দেশের শিক্ষা ব্যবস্থায় আর কোথাও এমন নোংরা নজির আছে কিনা জানিনা। বিদ্যালয় আঙ্গিনায় এই হাট অপসারণে করতে আমি প্রধান শিক্ষককে নির্দেশ দিয়েছি। অপসারণ না করলে আমি তার বিরুদ্ধে অচিরেই ব্যবস্থা নিবো।

টুডে মিডিয়া গ্রুপ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
[email protected] ☎ ৮৮ ০১৭ ১৪৩৪ ৯৩৯৩
৭/ডি-১ (৭ম তলা), ব্লু ওয়াটার শপিং সিটি,
জিন্দাবাজার, সিলেট - ৩১০০, বাংলাদেশ।
Developed By - IT Lab Solutions Ltd.