Sylhet Today 24 PRINT

বানিয়াচংয়ে অবাধে চলছে অতিথি পাখি শিকার

বানিয়াচং প্রতিনিধি |  ২০ নভেম্বর, ২০১৯

প্রকৃতিতে শীতের আমেজ শুরু হলেই রঙ-বেরঙের অতিথি পাখি কলতানে মুখরিত হয়ে থাকে বানিয়াচংয়ের হাওর-বাঁওড়গুলো। শীত মওসুম জুড়েই দেখা যায় সাদা বক, বালিহাঁস, সারস, পানকৌড়িসহ দেশি-বিদেশি অসংখ্য পাখির। কিন্তু এক শ্রেণির স্বার্থান্বেষী মহল পাখির এমন অবাধ বিচরণে কাল হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই অতিথি পাখিদের শিকার করে কেউ আর্থিকভাবে লাভবান হয় আবার কেউ রসনার তৃপ্তি মেটাচ্ছেন। শিকারিরা বিষটোপ-বড়শিসহ নানা প্রকার ফাঁদ পেতে নির্বিচারে শিকার করছে এসব অতিথি পাখি।

পাখি শিকার ও দণ্ডনীয় অপরাধ হলেও এ বিষয়ে প্রশাসনের কোনো নজরদারি নেই। ফলে অবাধে শিকার ও বিক্রি বেড়েছে পাখির। এই পাখিগুলোই সমাজের সচেতন মানুষ থেকে শুরু করে শিক্ষক, সাংবাদিক, জনপ্রতিনিধি ও প্রশাসনের বড়বড় কর্তাব্যক্তিসহ বিভিন্ন পেশাজীবীরা গোপনে কিনে নিচ্ছেন।

বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা আইনে পাখি শিকার ও নিধন দুটিই দণ্ডনীয় অপরাধ হলেও বানিয়াচংয়ে অবাধে চলছে অতিথি পাখি শিকার। আইনের সঠিক বাস্তবায়ন না হওয়া ও সচেতনতার অভাবে শিকারিদের ফাঁদে ধরা পড়ছে বিভিন্ন প্রজাতির পাখি।

সরজমিনে দেখা যায়, বাঁশের খুটি,কলা পাতা, খেজুর ডালের বেতের পাতা এসব উপকরণ দিয়ে বিশেষ কায়দায় তৈরি করা ফাঁদ পেতে বসে থাকে শিকারিরা। নৌকা, জাল, বন্দুক ও অচেতন ঔষধসহ বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করা হচ্ছে পাখি শিকারে। প্রতিদিনই শিকারিরা এই পন্থায় নানা রকমের পাখি শিকার করছে। দিনদিন উপজেলা জুড়ে পাখি শিকারির সংখ্যা বেড়েই চলছে। শিকার করা পাখিগুলো বাজারে এনে প্রকাশ্যে বিক্রি করা হচ্ছে।

বিশেষজ্ঞদের মতে,এসব অতিথি পাখি বার্ডফ্লুতে আক্রান্ত হতে পারে। আর এসব রোগাক্রান্ত পাখি খেয়ে মানবদেহে বার্ডফ্লু ছড়িয়ে পড়তে পারে। পাখি শিকার ও নিধন বন্ধের আইন থাকলেও এর কার্যকরী ভূমিকা না থাকায় পাখি শিকারিদের তৎপরতা বন্ধ করা যাচ্ছেনা বলে অভিযোগ রয়েছে সাধারণ মানুষের।

এ বিষয়ে সালমান জামান সৈকত নামে এক পাখিপ্রেমী জানান, শীতের শুরুতেই বিভিন্ন জায়গা থেকে ঝাঁকে ঝাঁকে পাখি আসে আশেপাশের জলাশয়গুলোতে। নদীর জেগে উঠা চরে এদের আনাগোনা বেশি। আর এই সুযোগে শিকারিরা পাখি শিকার করে নেয়। পাখি শিকার বন্ধে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরাও কোনো ভূমিকা রাখছেন না। বরং সমাজের এই বিবেকরাই সুযোগ পেলে পাখি কিনে রসনার তৃপ্তি মেটাতে ব্যস্ত। জনসচেতনতা ছাড়া অতিথি পাথি শিকার রোধ করা সম্ভব না। এছাড়া আইন প্রয়োগকারী সংস্থা কঠোর আইন থাকা সত্ত্বেও তা প্রয়োগ না করায় শিকারিরা উৎসাহিত হচ্ছে দিনদিন। এ ব্যাপারে সমাজের সুশীল সমাজকে এগিয়ে আসতে হবে।

এ নিয়ে বানিয়াচং উপজেলা নির্বাহী অফিসার মামুন খন্দকারের কাছে জানতে চাইলে তিনি এই বলেন, পাখি শিকার জীব বৈচিত্র্যের জন্য দীর্ঘ মেয়াদী ক্ষতি। পাখি শিকার ও বিক্রি রোধে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে। চালানো হবে অভিযানও।

উল্লেখ,২০১২ সালের বন্যপ্রাণী (সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা) আইন অনুযায়ী পাখি নিধনের সর্বোচ্চ শাস্তি ১ লাখ টাকা জরিমানা, ১ বছরের কারাদণ্ড বা উভয় দণ্ডের বিধান থাকলেও মৌসুমী পাখি শিকারিদের পাখি শিকার থামছে না। শীত এলেই এক শ্রেণির অসাধু মানুষ হত্যা করছে এই পরিযায়ী পাখিগুলোকে।
 

টুডে মিডিয়া গ্রুপ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
[email protected] ☎ ৮৮ ০১৭ ১৪৩৪ ৯৩৯৩
৭/ডি-১ (৭ম তলা), ব্লু ওয়াটার শপিং সিটি,
জিন্দাবাজার, সিলেট - ৩১০০, বাংলাদেশ।
Developed By - IT Lab Solutions Ltd.