Sylhet Today 24 PRINT

বিশ্বনাথে ভূমি কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ঘুষ নেওয়ার অভিযোগ

‘৩৩৩’ নাম্বারে কল

বিশ্বনাথ প্রতিনিধি |  ২১ নভেম্বর, ২০১৯

বিশ্বনাথের আব্দুস সালাম নামের এক ব্যক্তির কাছ থেকে ১৮শতক ফসলি জমির খাজনা বাবদ ৫ হাজার টাকা নিয়ে জাহাঙ্গীর আলম নামের এক ইউনিয়ন ভূমি কর্মকর্তা রশিদ দিয়েছেন ৯৫২ টাকার। ঘটনা গত ২ অক্টোবর বুধবার। এর পরিপ্রেক্ষিতে গত ১৩ নভেম্বর বুধবার আব্দুস সালামের পক্ষে তার আত্মীয় অ্যাডভোকেট আব্দুর রাজ্জাক ভূমি সংক্রান্ত দেশের বিশেষ সেবা ‘৩৩৩’ নাম্বারে কল দিয়ে ওই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছেন।

অভিযোগে উল্লেখ করেন, জমির খাজনার জন্য আব্দুস সালামের নিকট থেকে ৫হাজার টাকা নিয়ে ওই কর্মকর্তা ৯৫২ টাকার রশিদ দিয়েছেন। আর বাকি ৪হাজার ৪৮ টাকা তিনি ঘুষ হিসেবে গ্রহণ করেছেন। এছাড়া ভূমি কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর আলম ঘুষ নিয়েছেন মর্মে অ্যাডভোকেট আবদুর রাজ্জাক ও বাংলাদেশ মানবাধিকার ফাউন্ডেশন তাদের ফেসবুকের টাইমলাইনে পোস্টও করেছেন। আর ওই অভিযোগ তদন্ত করে ব্যবস্থা নিতে গত ১৪ নভেম্বর বৃহস্পতিবার সিলেটের বিশ্বনাথ উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ফাতেমা-তুজ-জোহরাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।

অভিযুক্ত ভূমি কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর আলম হলেন, সিলেটের বিশ্বনাথ সদর ইউনিয়ন ভূমি অফিসের উপ-সহকারী ভূমি কর্মকর্তা। আর আব্দুস সালাম হলেন বিশ্বনাথের নরশিংপুর গ্রামের আব্দুল করিমের ছেলে এবং অভিযোগকারী অ্যাডভোকেট আব্দুর রাজ্জাক বিশ্বনাথের গাঁওয়ের বাসিন্দা। অন্যদিকে আব্দুস সালাম যার জমির খাজনা দিয়েছেন সেই জমির মালিক হলেন বিশ্বনাথের দূর্য্যাকাপন গ্রামের যুক্তরাজ্য প্রবাসী জমসেদ আলী।   

জানা গেছে, বিশ্বনাথের দূর্য্যাকাপন গ্রামের যুক্তরাজ্য প্রবাসী জমসেদ আলী প্রবাসে বসবাস করার সুবাদে তার আত্মীয় আব্দুস সালামকে জমির মামলাসহ নামজারি করার দায়িত্ব দেন। তবে, ওই জায়গার উপর অন্য আরেক জনের আপত্তি থাকায় প্রথমে তার কাছ থেকে (সালামের) খাজনা নেননি ভূমি কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর। পরবর্তীতে উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ফাতেমা তুজ জোহরার হস্তক্ষেপে আপত্তির বিষয়টি নিষ্পত্তি করা হলে গত ২ অক্টোবর বুধবার আব্দুস সালাম ওই ভূমি কর্মকর্তার মাধ্যমে জমির খাজনা পরিশোধ করেন। এরপর নিজে স্বাক্ষর দিয়ে ৯৫২ টাকার খাজনা পরিশোধের রশিদও বুঝে নেন তিনি।

অন্যদিকে উপজেলা ভূমি অফিস সূত্র জানিয়েছে, ওই ১৮ শতক জমির মালিকানা নিয়ে স্বত্ব মামলা থাকায় মামলা নিষ্পত্তির পর দূর্য্যাকাপন গ্রামের আজিজুর রহমান চৌধুরীর নাম কর্তন করে ওই প্রবাসী জমসেদ আলীর নামে নামজারী করার প্রয়োজন পড়ে। এজন্য বছর খানেক আগে অ্যাডভোকেট আব্দুর রাজ্জাকের সঙ্গে ২৫ হাজার টাকায় চুক্তি করেন প্রবাসী জমসেদ আলীর আত্মীয় আব্দুস সালাম। পরবর্তীতে নামজারী শেষে খাজনা পরিশোধ করা হলে ভূমি কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর সরেজমিনে দূর্যাকাপন গ্রামে যেতে চাইলে বাঁধা দেন আব্দুস সালাম ও অ্যাডভোকেট আব্দুর রাজ্জাক। এজন্য ভূমি কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর আলমকে ঘুষ দেওয়ার চেষ্টাও করেন তারা।

কিন্তু ঘুষ গ্রহণে ভূমি কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর আলম রাজী না হওয়ায় খাজনা দেওয়ার প্রায় এক মাস বারোদিন পর তার বিরুদ্ধে ‘৩৩৩’ নাম্বারে কল দিয়ে ঘুষ গ্রহণের অভিযোগ করেন অ্যাডভোকেট আব্দুর রাজ্জাক। আর ১৩ নভেম্বর করা ওই অভিযোগটি তদন্তের জন্য গত ১৪ নভেম্বর দায়িত্ব দেওয়া হয় বিশ্বনাথ উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ফাতেমা-তুজ-জোহরা’কে। এরপর ১৬ নভেম্বর উভয় পক্ষকে নোটিশ করে ১৭ নভেম্বর রোববার অ্যাডভোকেট আব্দুর রাজ্জাক ও আব্দুস সালামের উপস্থিতিতে এসিল্যান্ড কার্যালয়ে তদন্ত করা হয়।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে অভিযোগকারী অ্যাডভোকেট আবদুর রাজ্জাক বলেন, যে অফিসের প্রধান কর্মকর্তা তদন্তকারী অফিসার, সেখানে ন্যায় বিচার কতটুকু আশা করা যায়? আর ন্যায় বিচার না পাওয়াটা একবারে নিশ্চিত হওয়ায় তিনি বাধ্য হয়েই তার অভিযোগ তুলে নিতে তদন্তকারী কর্মকর্তার কাছে (এস্যিলান্ড) লিখিত আবেদন দিয়ে গেছেন। এছাড়া স্বত্ব মামলা পরিচালনার জন্য খরচ বাবদ আব্দুস সালামের নিকট থেকে ২৫ হাজার টাকা নেওয়ার কথাও তিনি স্বীকার করেছেন।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে আব্দুস সালাম বলেন, ৫ হাজার টাকা তিনি ভূমি কর্মকর্তাকে দিয়েছিলেন, কিন্তু তার কাছে কোন তথ্য প্রমাণ নেই। তার দাবি, ‘৩৩৩’র অভিযোগের বিষয়টি যেভাবে নিষ্পত্তি হয় সেভাবেই যেন তার মন্তব্যটি পত্রিকায় দেওয়া হয়।

‘৩৩৩’ নাম্বারে মিথ্যা অভিযোগ দেওয়া হয়েছে দাবি করে বিশ্বনাথ ইউনিয়ন (ভূমি) অফিসের উপ-সহকারী কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর আলম বলেছেন, ৫ হাজার টাকা নয়, ৯৫২ টাকাই আব্দুস সালাম তাকে দিয়েছেন। খাজনা দেওয়া শেষে নিজে স্বাক্ষর দিয়ে রশিদও নিয়েছেন আব্দুস সালাম।

এ প্রসঙ্গে কথা হলে ‘৩৩৩’র অভিযোগ তদন্তকারী কর্মকর্তা বিশ্বনাথ উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ফাতেমা-তুজ-জোহরা বলেছেন, বিশ্বনাথ ইউনিয়ন (ভূমি) অফিসের উপ-সহকারী কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর আলমের বিরুদ্ধে করা ওই অভিযোগের কোন প্রমাণ দিতে পারেননি অভিযোগকারী অ্যাডভোকেট আবদুর রাজ্জাক কিংবা আব্দুস সালাম। সেজন্য ‘৩৩৩’ নাম্বারে কল দিয়ে ঘুষ গ্রহণের যে অভিযোগ করা হয়েছিল তার সত্যতা পাওয়া যায়নি।

টুডে মিডিয়া গ্রুপ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
[email protected] ☎ ৮৮ ০১৭ ১৪৩৪ ৯৩৯৩
৭/ডি-১ (৭ম তলা), ব্লু ওয়াটার শপিং সিটি,
জিন্দাবাজার, সিলেট - ৩১০০, বাংলাদেশ।
Developed By - IT Lab Solutions Ltd.