Sylhet Today 24 PRINT

সিলেটে বিএনপির বিক্ষোভে ককটেল বিস্ফোরণ, আটক ৩

খালেদার জামিন খারিজের প্রতিবাদ

নিজস্ব প্রতিবেদক |  ১২ ডিসেম্বর, ২০১৯

জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় কারাবন্দি বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার জামিন আবেদন আপিল বিভাগে খারিজ হওয়ার প্রতিবাদে বৃহস্পতিবার সিলেটে বিক্ষোভ মিছিল ও সড়ক অবরোধের চেষ্টা করেন দলটির নেতাকর্মীরা।

এ সময় নগরের সুরমা মার্কেট মোড়ে ককটেল বিস্ফোরণের ঘটানা ঘটে। এর পর পরই নগর বিএনপির তিন নেতাকর্মীকে আটক করে পুলিশ। তবে তাৎক্ষণিকভাবে আটকদের নাম-পরিচয় জানা যায়নি।

সিলেট মহানগর পুলিশের (সিএমপি) কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ সেলিম মিঞা তিনজনকে আটকের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

জানা গেছে, জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় কারাবন্দি বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার জামিন আবেদন আপিল বিভাগে খারিজ হওয়ার প্রতিবাদে বৃহস্পতিবার দুপুর ১টায় নগরীর কোর্ট পয়েন্ট মিছিল বের করার চেষ্টা করলে পুলিশের বাঁধায় তা ছত্রভঙ্গ হয়ে যায়।

এরপর বিএনপির নেতাকর্মীরা তালতলা সড়কে একটি ঝটিকা মিছিল করেন।

তালতলা পয়েন্টে কিছুক্ষণের জন্য সড়কের মধ্যে অবস্থান করেন তারা। পরে মিছিলটি নগরের সুরমা পয়েন্টে এসে শেষ হয়।

এ সময় সেখানে সংক্ষিপ্ত সমাবেশ করার সময় একটি ককটেল বিস্ফোরণ ঘটে।

পরে পুলিশ এসে আশেপাশের এলাকায় অভিযান চালায়।

এর আগে বৃহস্পতিবার প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চ খালেদা জিয়ার জামিন আবেদন খারিজ করে দেন।

এর ফলে এই মামলায় খালেদা জিয়ার জামিন পাওয়ার আর কার্যত কোনো সুযোগ থাকল না। খালেদা জিয়া কেবল আপিলের রায় রিভিউ করতে পারবেন। আইনজীবীরা বলছেন, রিভিউয়ে আপিলের রায়ে কোনো পরিবর্তন আনার সম্ভাবনা নেই বললেই চলে।

এদিন সকাল ১০টার দিকে খালেদা জিয়ার সর্বশেষ স্বাস্থ্য পরীক্ষার প্রতিবেদন দাখিলের মাধ্যমে শুরু হয় শুনানি কার্যক্রম। রেজিস্ট্রার জেনারেল আলী আকবর আদালতে এই প্রতিবেদন দাখিল করেন।

ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, খালেদা জিয়ার ব্লাড প্রেশার ও ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে থাকলেও তিনি শারীরিকভাবে দুর্বল। খালেদা জিয়ার চিকিৎসায় গঠিত মেডিকেল বোর্ড মনে করছে, খালেদা জিয়া রাজি না হওয়ার কারণেই তাকে উন্নত চিকিৎসা দেওয়া যায়নি।

শুনানিতে জয়নুল আবেদীন বলেন, খালেদা জিয়ার প্রপার চিকিৎসা হচ্ছে না। তার উন্নত চিকিৎসা দরকার। তিনি দিন দিন পঙ্গু হয়ে যাচ্ছেন। তার স্বাস্থ্য খারাপ হয়ে যাচ্ছে। ভালো মানুষ কারাগারে গিয়েই তিনি পঙ্গু হয়ে যাচ্ছেন। আর ছয় মাস গেলে তিনি লাশ হয়ে ফিরবেন।

খালেদা জিয়ার এই আইনজীবী আরও বলেন, মানবিক কারণে আমরা জামিনের আবেদন করেছি। আমরা তো আপনাদের কাছেই আসব। আপনারা সর্বোচ্চ আদালত। আপনাদের পরে আর কেউ নেই আল্লাহ ছাড়া। তাছাড়া নারী, বয়স্ক, অসুস্থ— এসব বিবেচনায় জামিনের বিষয়ে আপনাদের সিদ্ধান্ত রয়েছে। এসব বিষয় বিবেচনা করে আপনারা জামিন দেবেন। তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠানো দরকার। তার উন্নত চিকিৎসা রাষ্ট্রেরও দায়িত্ব। তিনি জামিন পেলে তো পালিয়ে যাবেন না।

গত বছরের ২৯ অক্টোবর জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলার রায় ঘোষণা করেন পুরান ঢাকার নাজিমুদ্দিন রোডের পুরোনো কেন্দ্রীয় কারাগারে স্থাপিত ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৫-এর বিচারক ড. মো. আকতারুজ্জামান। রায়ে খালেদা জিয়া ছাড়া অপর তিন আসামিকেও সাত বছর করে কারাদণ্ড দেওয়া হয়। প্রত্যেককে ১০ লাখ টাকা করে অর্থদণ্ড দেওয়া হয়।

এই রায়ের বিরুদ্ধে খালেদা জিয়া আপিল করলে ৩০ এপ্রিল তা শুনানির জন্য গ্রহণ করে অর্থদণ্ড স্থগিত করেন হাই কোর্ট। পাশাপাশি খালেদা জিয়ার আপিল শুনানির জন্য গ্রহণ করে বিচারিক আদালতের রায়ের নথি দুই মাসের মধ্যে হাই কোর্টে পাঠানোর নির্দেশ দেন।

গত ৩১ জুলাই জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় খালেদা জিয়ার জামিন আবেদন খারিজ করে দেন বিচারপতি ওবায়দুল হাসান ও বিচারপতি এস এম কুদ্দুস জামানের হাই কোর্ট বেঞ্চ। এ আদেশের বিরুদ্ধে আপিলে আবেদন করেন খালেদা জিয়া।

গত ৫ ডিসেম্বর খালেদা জিয়ার জামিন আবেদনের আপিলের রায় ঘোষণার কথা ছিল। তবে এর আগে আদালত খালেদা জিয়ার সর্বশেষ স্বাস্থ্য পরীক্ষার প্রতিবেদন চাইলে তা ওই তারিখের আগে দাখিল করতে পারেনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) কর্তৃপক্ষ। ফলে আদালত জামিন বিষয়ে আদেশ এক সপ্তাহ পিছিয়ে দিতে চাইলে আপিল বিভাগে ব্যাপক হট্টগোল করেন বিএনপিপন্থি আইনজীবীরা। হট্টগোলের কারণে বন্ধ ছিল বিচার কাজ। এ ঘটনাকে বিচার বিভাগের ইতিহাসে নজিরবিহীন বলে উল্লেখ করেছেন স্বয়ং প্রধান বিচারপতি।

টুডে মিডিয়া গ্রুপ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
[email protected] ☎ ৮৮ ০১৭ ১৪৩৪ ৯৩৯৩
৭/ডি-১ (৭ম তলা), ব্লু ওয়াটার শপিং সিটি,
জিন্দাবাজার, সিলেট - ৩১০০, বাংলাদেশ।
Developed By - IT Lab Solutions Ltd.