Sylhet Today 24 PRINT

কর্মক্ষেত্রে শ্রমজীবী নারীরা নিরাপত্তাহীনতা, মজুরি বৈষম্য ও নির্যাতনের শিকার

কমলগঞ্জে গণতান্ত্রিক মহিলা সমিতির সমাবেশে নারী-পুরুষের ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের আহ্বান

কমলগঞ্জ প্রতিনিধি |  ২০ ডিসেম্বর, ২০১৯

মৌলভীবাজার গণতান্ত্রিক মহিলা সমিতির সমাবেশে নারী নেতৃরা শোষণ বঞ্চনা থেকে মুক্তির লক্ষে নারী-পুরুষের ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের আহ্বান জানিয়েছেন। দেশে অব্যাহতভাবে গুম, খুন, হত্যা, অগ্নিকান্ড, সন্ত্রাসী ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করে বক্তারা বলেন, গৃহকর্মে নিয়োজিত নারী শ্রমিকদের নেই কোন মজুরি কাঠামো, তেমনি নেই কর্মের নিশ্চয়তা ও নিরাপত্তা। নারী অধিকার, নারীর ক্ষমতায়ন, নারী উন্নয়ন নিয়ে নানা রকমের গালভরা বুলি শুনালেও প্রতিনিয়ত দেশের অধিকাংশ নারীরা, বিশেষত শ্রমজীবী নারীগণ কর্মক্ষেত্রে নিরাপত্তাহীনতা, মজুরি বৈষম্য ও নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন। গণতান্ত্রিক মহিলা সমিতি মৌলভীবাজার জেলা কমিটির উদ্যোগে বৃহস্পতিবার (১৯ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় কমলগঞ্জের কালেঙ্গায় অনুষ্ঠিত সমাবেশে এসব কথা বলেন।

গণতান্ত্রিক মহিলা সমিতি মৌলভীবাজার জেলা কমিটির আহবায়ক দেলোয়ারা বেগমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সমাবেশে প্রধান অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন সংগঠনের কেন্দ্রীয় আহবায়ক জিনাত রেহনা। বিশেষ অতিথি ছিলেন সংগঠনের কেন্দ্রীয় যুগ্ম-আহবায়ক রহিমা আখতার ও কামরুন নাহার, জাতীয় গণতান্ত্রিক ফ্রন্ট মৌলভীবাজার জেলা কমিটির সভাপতি শহীদ সাগ্নিক। সমাবেশে বক্তব্য রাখেন গণতান্ত্রিক মহিলা সমিতির কেন্দ্রীয় নেত্রী দৌলতুন নেছা, ডা. তাবাসুম মুমু, মৌলভীবাজার জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক আম্বিয়া বেগম, বাংলাদেশ ট্রেড ইউনিয়ন সংঘ জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক রজত বিশ্বাস, ধ্রুবতারা সাংস্কৃতিক সংসদ জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক অমলেশ শর্ম্মা, মৌলভীবাজার জেলা হোটেল শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক মো. শাহিন মিয়া, জেলা রিকশা শ্রমিক ইউনিয়ন এর সাধারণ সম্পাদক দুলাল মিয়া, শ্রমিকনেতা শাহজাহান আলী ও রিপন মিয়া প্রমূখ।

সমাবেশে বক্তারা বলেন, নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যের দাম কমানো, সাম্রাজ্যবাদী দেশ ও সংস্থা এবং ভারতের সাথে সম্পাদিত জাতীয় ও জনস্বার্থ বিরোধী সকল চুক্তি বাতিল, বিনাবিচারে হত্যা-খুন-গুম বন্ধ, দফায় দফায় গ্যাস-বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধির পাঁয়তারা বন্ধ, শ্রমিক-কর্মচারিদের জন্য বাজারদরের সাথে সংগতি রেখে ন্যূনতম মূল মজুরি ২০ হাজার টাকা নির্ধারণ ও শ্রমিকস্বার্থ বিরোধী সংশোধিত শ্রমআইন বাতিল করে গণতান্ত্রিক শ্রমআইন প্রণয়ন, সমকাজে সমমজুরি ও কর্মক্ষেত্রে নিরাপত্তার দাবিতে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন গড়ে  তোলার আহবান জানানো হয়।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে নারীনেত্রী জিনাত রেহানা বলেন, গণতান্ত্রিক মহিলা সমিতি নারী মুক্তির লক্ষ্যে শোষিত- বঞ্চিত নির্যাতিত নারী-পুরুষ আপামর জনগণের দুঃখ-দুর্দশা, অভাব-অনটন-সমস্যা-সংকটের জন্য দায়ী প্রচলিত আর্থ-সমাজ ব্যবস্থার বিরুদ্ধে সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশের নারী সমাজ তথা শ্রমিক-কৃষক-জনতার দুঃখ-কষ্ট, সমস্যা-সংকটের জন্য তিনি  সাম্রাজ্যবাদ, সামন্তবাদ ও আমলা-মুৎসুদ্দি পুঁজির শোষণ ও শাসনকে তিনি দায়ী করেন। তিনি বলেন, এই সত্যকে আড়াল ও অস্বীকার করে সাম্রাজ্যবাদ ও তার দালাল শাসক-শোষক গোষ্ঠি এবং এনজিও’রা নারী ও পুরুষের মধ্যকার বিভক্তি বৃদ্ধি করে জনগণের ঐক্যকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে। এর বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে বাংলাদেশের নারী সমাজের দায়িত্ব নারী মুক্তির লক্ষ্যে সাম্রাজ্যবাদ, সামন্তবাদ ও আমলা-মুৎসুদ্দি পুঁজি বিরোধী নারী-পুরুষের ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন-সংগ্রামের মাধ্যমে নারী পুরুষ তথা জনগণের রাষ্ট্র ও সমাজ ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে।

বিশেষ অতিথি কামরুন নাহার বলেন, দেশে দ্রব্যমূল্যের দাম অব্যাহতভাবে বাড়লেও শ্রমিকের মুজরি বাড়ে না। রাষ্ট্রের কাছে শ্রমিকের জীবনেরও কোন মূল্য নেই। রাজধানীর কেরানীগঞ্জে প্লাস্টিক কারখানা নামক মৃত্যূকূপে এখন পর্যন্ত দগ্ধ হয়ে ২০ জন শ্রমিক অকালে মৃত্যু বরণ করেন এবং আরও ১০ জন শ্রমিক জীবনমৃত্যু অবস্থায় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন। তিনি বলেন, প্লাস্টিক কারখানার অগ্নিকান্ডের শোক কাটিয়ে উঠার চার দিনের মাথায় গাজীপুরে ফ্যান কারখানায় আরও ১০ জন শ্রমিক অগ্নিদগ্ধ হয়ে মৃত্যুবরণ করেন। যার কারণে মৃত্যুকূপ সমতুল্য এসব কারখানা গুলোয় একের পর এক সাধারণ শ্রমিককে অগ্নিদগ্ধ হয়ে অকাতরে প্রাণ দিতে হচ্ছে। তাই প্লাস্টিক বা ফ্যান কারখানার এই অগ্নিদগ্ধের ঘটনা কোন নিছক দুর্ঘটনা নয়, এটি মালিক ও সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের অবহেলাজনিত হত্যাকান্ড। তিনি অবিলম্বে মজুরি কমিশন বাস্তবায়ন, আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী প্লাস্টিক ও ফ্যান কারখানায় নিহত শ্রমিক উপযুক্ত ক্ষতিপুরণ, আহতদের যথাযথ সুচিকিৎসা ও ক্ষতিপুরণ, কর্মক্ষেত্রে শ্রমিকদের উপযুক্ত নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা নিশ্চিত করার দাবি জানান।

টুডে মিডিয়া গ্রুপ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
[email protected] ☎ ৮৮ ০১৭ ১৪৩৪ ৯৩৯৩
৭/ডি-১ (৭ম তলা), ব্লু ওয়াটার শপিং সিটি,
জিন্দাবাজার, সিলেট - ৩১০০, বাংলাদেশ।
Developed By - IT Lab Solutions Ltd.