Sylhet Today 24 PRINT

শহীদ মিনারের বেদিতে নামাজ নিয়ে বিতর্ক, ঠিক হয়নি মানছেন আয়োজকরাও

নিজস্ব প্রতিবেদক |  ০৬ জানুয়ারী, ২০২০

সিলেট কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের বেদিতে নামাজ আদায় করছেন ইসলামী শাসনতন্ত্র ছাত্র আন্দোলনের সদস্যরা। ছবি: ফেসবুক

গত শুক্রবার (৩ জানুয়ারি) সিলেট কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে সম্মেলনের আয়োজন করে ইসলামী শাসনতন্ত্র ছাত্র আন্দোলনের সিলেট জেলা ও মহানগর শাখা। অনুষ্ঠান চলাকালে সন্ধ্যায় মাগরিবের আজানের পর জামাতের সাথে নামাজ আদায় করেন সংগঠনটির কয়েকজন কর্মী।

শহীদ মিনারে জামাতে নামাজ আদায়ের ছবি সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়লে এনিয়ে দেখা দেয় বিতর্ক। বিশেষত সংস্কৃতিকর্মীদের অনেকেই এমন কাণ্ডের সমালোচনা করেন। শহীদ মিনারকে অসাম্প্রদায়িক চেতনার প্রতীক উল্লেখ করে এই স্থানকে কোনো ধর্মেরই উপাসনার কাজে ব্যবহার করা উচিত নয় বলে মত তাদের। উদ্দেশ্যমূলক ভাবেই এমনটি করা হয়েছে বলে মনে করেন সাংস্কৃতিক সংগঠকরা।

অপরদিকে, ওই অনুষ্ঠানের আয়োজকরাও মনে করছেন, এমন কাজ করা ঠিক হয়নি। তবে উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে এমনটি করা হয়নি বলে দাবি তাদের।

ওই অনুষ্ঠানের একাধিক প্রত্যক্ষদর্শী জানান, বিকেল থেকেই ইসলামী শাসনতন্ত্র ছাত্র আন্দোলন শহীদ মিনারের পাশের মঞ্চে সভা করছিলো। সন্ধ্যায় আযান হওয়ার পর সংগঠনের কয়েকজন সদস্য শহীদ মিনারের বেদিতে জামাতের সাথে নামাজ আদায় করেন।

সিলেট শহীদ মিনারে বিভিন্ন জাতীয় দিবসের অনুষ্ঠানের ব্যবস্থাপনায় থাকে সম্মিলিত নাট্য পরিষদ সিলেট। সংগঠনটির সভাপতি মিশফাক আহমদ মিশু বলেন, ইসলাম ধর্মের অনুসারীদের জন্য নামাজ পড়া বাধ্যতামূলক। এ নিয়ে আমার কোনো দ্বিমত নেই। কিন্তু শহীদ মিনারে নামাজ পড়া বা ধর্মীয় কর্মকাণ্ড নিয়ে আমার দ্বিমত আছে। শহীদ মিনার হচ্ছে অসাম্প্রদায়িক চেতনার জায়গা। ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠান শহীদ মিনারের চেতনার সাথে যায় না।

তিনি বলেন, আমার কাছে মনে হচ্ছে তাদের শহীদ মিনারে নামাজ পড়াটা উদ্দেশ্যমূলক। কারণ তারা চাইলে পাশের মসজিদে বা শহীদ মিনারের পাশেই যে কক্ষ আছে সেখানে নামাজ পড়তে পারতো। তারা সেটা না করে শহীদ মিনারের মূল বেদিতে নামাজ পড়েছেন। আমি শুনেছি তারা আরও বিভিন্ন জায়গায় শহীদ মিনারে এভাবে নামাজ পড়েছে। তাই মনে হচ্ছে এটা কোনো ভালো লক্ষণ না।

তিনি আরও বলেন, শহীদ মিনারে কি ধরণের অনুষ্ঠান করা যাবে আর কি করা যাবে না, এটা দেখভাল করার মতও কেউ নেই। শহীদ মিনার বাস্তবায়ন কমিটির যারা আছেন তারও অনেক বয়স্ক। তাই এসব ব্যাপারে তারা সমন্বয় করতে পারছেন না। তবে এ ব্যাপারে ইতোমধ্যে আমরা শহীদ মিনার বাস্তবায়ন কমিটির সাথে কথা বলেছি। শীঘ্রই শহীদ মিনারের ব্যবহারবিধি নিয়ে আমরা একটি নীতিমালা তৈরি করবো। কারণ এভাবে শহীদ মিনারে জন্মদিন পালন, ধর্মীয় অনুষ্ঠান করা থেকে সবাইকে বিরত রাখতে হবে।

শহীদ মিনারের বেদীতে নামাজ পড়া ঠিক হয় নি বলে মনে করেন ওইদিনের অনুষ্ঠানের আয়োজক সংগঠন ইসলামী শাসনতন্ত্র ছাত্র আন্দোলন, সিলেট মহানগর শাখার সাধারণ সম্পাদক আব্দুল্লাহ আরাফাতও। সিলেটটুডে টোয়েন্টিফোরকে তিনি বলেন, শহীদ মিনারে নামাজ পড়া নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিভিন্ন আলোচনা ও সমালোচনার ব্যাপারে আমরা অবগত আছি। ওইদিন কেউ উদ্দেশ্যমূলকভাবে ওখানে নামাজ পড়েনি। যখন নামাজের সময় হয় তখন আমি নিজে মাইকে ঘোষণা দিয়েছি সবাইকে আশপাশের মসজিদে গিয়ে নামাজ পড়ার জন্য। সবাই গিয়ে আশপাশের বিভিন্ন মসজিদেই নামাজ পড়েছেন। কিন্তু যারা এই আয়োজনের স্বেচ্ছাসেবকের দায়িত্বে ছিলেন তারা অনুষ্ঠানস্থল ছেড়ে যেতে পারেননি। তারা বাধ্য হয়েই শহীদ মিনারে নামাজ পড়েন।

সিলেট সিটি করপোরেশন ও মহানগর পুলিশের অনুমতি নিয়ে শহীদ মিনারে ওই সম্মেলনের আয়োজন করেছিলেন জানিয়ে আব্দুল্লাহ আরাফাত বলেন, অনেক ইসলামী দল শহীদ মিনারে যাওয়ার বিরোধিতা করে। তবে আমরা তাদের এই মতামতের সাথে একমত নই। আর সবাই যেমন শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে শহীদ মিনারে আসেন আমরাও ঠিক সেভাবেই আসি। ৫২’র ভাষা আন্দোলনে শহীদ ও '৭১ এর মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের প্রতি আমরা শ্রদ্ধাশীল। গত অনুষ্ঠানে আমরা আমাদের সংগীতসহ বিভিন্ন পরিবেশনার মাধ্যমে শহীদদের শ্রদ্ধা জানিয়েছি।

তবে সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট, সিলেটের সহ-সভাপতি শামসুল ইসলাম সেলিম মনে করেন রাজনৈতিক উদ্দেশ্য হাসিলের জন্যই শহীদ মিনারের বেদিতে নামাজ পড়া হয়েছে। তিনি বলেন, এর দায় সিলেট সিটি করপোরেশনকে নিতে হবে। কারণ শহীদ মিনার সিটি করপোরেশনের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। তাদের কাছ থেকে অনুমতি নিয়েই শহীদ মিনার ব্যবহার করতে হয়। শহীদ মিনার ব্যবহারের একটি সুনির্দিষ্ট নীতিমালা প্রয়োজন বলে মনে করেন সেলিম।

তিনি বলেন, শহীদ মিনার একটি অসাম্প্রদায়িক জায়গা। শহীদ মিনারে জন্মদিন পালন, ধর্মীয় অনুষ্ঠান করা থেকে বিরত থাকতে হবে। তা না হলে শহীদ মিনারের ঐতিহ্য রক্ষা করা যাবে না। তাই শহীদ মিনারে যেন এই ধরনের কার্যক্রম কেউ করতে না পারে সে ব্যাপারে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে হবে।

এ ব্যাপারে সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীর সাথে মোবাইল ফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি।

আর শহীদ মিনার বাস্তবায়ন কমিটির সদস্য মুক্তিযোদ্ধা সদরউদ্দিন আহমদের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি কথা বলতে অপারগতা প্রকাশ করেন।

টুডে মিডিয়া গ্রুপ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
[email protected] ☎ ৮৮ ০১৭ ১৪৩৪ ৯৩৯৩
৭/ডি-১ (৭ম তলা), ব্লু ওয়াটার শপিং সিটি,
জিন্দাবাজার, সিলেট - ৩১০০, বাংলাদেশ।
Developed By - IT Lab Solutions Ltd.