Sylhet Today 24 PRINT

লালবাজারে জমজমাট মাছের মেলা, মিলছে সামুদ্রিক মাছও

নিজস্ব প্রতিবেদক |  ১৪ জানুয়ারী, ২০২০

সিলেট নগরীর বন্দরবাজার এলাকার লালবাজারে পৌষ সংক্রান্তি উপলক্ষে আয়োজন করা হয়েছে মাছের মেলার। তিনদিনব্যাপী এই মেলা শুরু হয়েছে সোমবার। মূলত এটি মাছেরই বাজার। প্রতিদিনই মাছ বিক্রি হয়। প্রতিদিনই যেখানে মাছের পসরা নিয়ে বসেন বিক্রেতারা, চলে কেনাবেচা- সেখানে আলাদা করে মেলার আয়োজনের বিশেষত্ব কী?

বিশেষত্বটা জানালেন লালবাজার মৎস্য ব্যবসায়ী সমবায় সমিতির সভাপতি এনায়েতুর রহমান। তিনি বলেন, পৌষ সংক্রান্তিতে মাছের মেলা আমাদের ঐতিহ্য। নগর থেকে এইসব ঐতিহ্য হারিয়ে যাচ্ছে। আমরা মেলার মাধ্যমে তা ধরে রাখার চেষ্টা করছি। তাছাড়া মেলা উপলক্ষে এখানকার মাছের সংগ্রহেও অনেক বৈচিত্র্য আনা হয়েছে। নানা দুর্লভ ও সিলেটে দুষ্প্রাপ্য প্রজাতির মাছও মেলায় নিয়ে এসেছেন ব্যবসায়ীরা। প্রতিদিনকার চেয়ে আকারে অনেক বড় বড় মাছও আনা হয়েছে। ফলে হরেক প্রজাতির মাছের সাথেও পরিচিত হওয়ার সুযোগ পাচ্ছেন  নগরবাসী।

মেলায় ঢুকেই প্রমাণ পাওয়া গেলো এনায়েতুর রহমানের কথার। বাজারের প্রবেশের পরই এক ব্যবসায়ীর মাছকে ঘিরে দেখা গেলো অতিরিক্ত ভিড়। কাছে ঘেঁষতেই বুঝা গেলো এই ভিড়ের কারণ। ওই ব্যবসায়ী বিভিন্ন সামুদ্রিক মাছের পসরা সাজিয়েছেন। হাওর-বিল ঘেরা সিলেটে সামুদ্রিক মাছ প্রায় পাওয়াই যায়না। তাই নোনা পানির এসব মাছের স্বাদ থেকে বঞ্চিত এখানকার বাসিন্দারা। মেলায় সেই সুযোগ মিলেছে। ফলে সামুদ্রিক মাছের দোকানের সামনে ভিড় একটু বেশি তো হতেই পারে।

এই দোকানে লম্বাটে যে মাছটি সবার দৃষ্টি কাড়ছিলো তার নাম ময়ুরপঙ্খী। চেহারা তেমন আকর্ষণীয় নয়, ছাই রংয়ের, বাইম মাছের মতো লম্বাটে, তবে নামের কারণেই এই মাছটি দৃষ্টি কাড়ছিলো সবার। বাদুড়ের মতো দেখতে আরেকটি মাছের নাম- শাপলা। শাপলা কেবল ফুলের নাম নয়, মাছেরও এমন নাম হয়- এই মেলায় না আসলে সিলেটের ক’জন জানতো তা! আছে সমুদ্রের অন্য জনপ্রিয় মাছগুলো- কুড়াল, ভাটা, তাপসি।

এখানে প্রতি কেজি কুড়াল ১২শ’ টাকা, ময়ূরপঙ্খী কেজি প্রতি ১২শ’ টাকা, শাপলা কেজি প্রতি  ৬০০ টাকা, বামাস ৬০০ টাকা, ভাটা ৮০০ টাকা, টুনা মাছ ৪০০ টাকা, ভইল মাছ ৪৫০ টাকা, সেইল ফিশ ১ হাজার ৫০০ টাকা, তাপসি ৬০০ টাকা দরে কেজি বিক্রি করে হচ্ছে। ক্রেতারা চাইলে কেজি হিসেবে কিংবা আস্ত মাছও কিনে নিয়ে যেতে পারবেন।

সামুদ্রিক মাছের পাশাপাশি রুই, কাতলা, চিতল, বোয়াল, চিংড়ি, পাবদাসহ এই অঞ্চলের জনপ্রিয় মাছগুলো তো ছিলই। লালবাজারের মেলায় এই বাহারি মাছের বৈচিত্র্য দৃষ্টি কেড়েছে নগরবাসীর। তাই শুরুর দিন থেকেই মেলায় ক্রেতা-দর্শনার্থীদের ভিড়। মঙ্গলবারও বাজারজুড়ে ভিড় দেখা গেছে। একেবারে পা ফেলবার জায়গা নেই অবস্থা। মেলায় মোট ৮০ জন ব্যবসায়ী মাছের পসরা নিয়ে বসেছেন। মেলা উপলক্ষে বাজারজুড়ে আলোকসজ্জ্বা করা হয়েছে। নির্মাণ করা হয়েছে তোরণ। মেলায় মাছের বৈচিত্র্য নিয়ে ক্রেতাদের সন্তুষ্টি থাকলেও অসন্তোষ দাম নিয়ে। মেলা উপলক্ষে দাম বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ ক্রেতাদের।

মেলায় ২০ কেজি ওজনের একটি বোয়াল মাছ নিয়ে এসেছেন ব্যবসায়ী কালাম মিয়া। দাম হাঁকছেন ৩৫ হাজার টাকা। দুপুর পর্যন্ত বিক্রি হয়নি বোয়ালটি। ক্রেতারা কেবল দরদাম করে যাচ্ছেন। কালাম জানান, আস্ত মাছটি বিক্রি না হলে সন্ধ্যার কেটে কেজি হিসেবে বিক্রি করবেন।

মেলায় কেজি দরে ১২ হাজার টাকা দিয়ে একটি চিতল মাঝ কিনেছেন নগরীর মদিনা মার্কেট এলাকার হাসিবুর রহমান। তিনি বলেন, এখানে প্রচুর মাছ আনা হয়েছে। তবে দাম অনেক বেশি। অন্যান্য দিনের চেয়ে বেশি দাম হাঁকা হচ্ছে।

মেলায় আসা আরেক ক্রেতা শশাঙ্ক দাশ বলেন, আমি আমার ছেলেকে নিয়ে মেলায় এসেছি। সে বিভিন্ন জাতের মাছ দেখার সুযোগ পাচ্ছে এখানে। বিশালাকৃতির মাছও দেখতে পাচ্ছে। এটিও একটি বড় সুযোগ।

আগামীতে আরও বড় পরিসরে মেলা আয়োজনের দাবি জানিয়ে আরেক ক্রেতা সাইদুর রহমান বলেন, মাছে-ভাতে বাঙালির পরিচয় থাকলেও অনেক মাছ এখন হারিয়ে যাচ্ছে। খামারে চাষ হয় এমন কয়েক প্রজাতির মাছই আমরা সচরাচর দেখতে পাই। এধরনের মেলার আয়োজন নানা প্রজাতির মাছ দেখার অন্তত সুযোগ করে দেয় আমাদের।

লালবাজার মৎস্য ব্যবসায়ী সমবায় সমিতির সাধারণ সম্পাদক গোলজার আহমদ বলেন, ২০১৭ সাল থেকে আমরা এই মেলা করছি। বুধবার পৌষের শেষদিনে মেলাও শেষ হবে। প্রতিবছর এমন মেলার আয়োজন করা হবে বলে জানান তিনি।

টুডে মিডিয়া গ্রুপ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
[email protected] ☎ ৮৮ ০১৭ ১৪৩৪ ৯৩৯৩
৭/ডি-১ (৭ম তলা), ব্লু ওয়াটার শপিং সিটি,
জিন্দাবাজার, সিলেট - ৩১০০, বাংলাদেশ।
Developed By - IT Lab Solutions Ltd.