Sylhet Today 24 PRINT

যৌতুকের বলি তরুণী বধূ, বিচার দাবিতে ফুঁসছে এলাকাবাসী

গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় দিপাকে উদ্ধার করে হাসপাতলে ভর্তি করেন তার পরিবারের সদস্যরা। দিপা হাসাপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আরেকটি বিয়ে করে জাহেদ। নতুন বউয়ের ছবি দিপাকে মোবাইল ফোনে পাঠায় সে। একে তো শারিরীক আঘাত, তারউপর এই মানসিক আঘাত- এক সাথে দুই আঘাত সামাল দেয়া সম্ভব হয়নি দিপার পক্ষে। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যায় সে।

নিজস্ব প্রতিবেদক |  ২০ সেপ্টেম্বর, ২০১৫

যৌতুকের বলি হয়ে তরুণী বধূ দিপা হত্যার প্রতিবাদে ফুঁসে ওঠেছে এলাকাবাসী। দিপার হত্যাকারীদের শাস্তির দাবিতে শনিবার সিলেট কেন্দ্রী শহীদ মিনারে মানববন্ধন করেছে সদর উপজেলার কান্দিগাও এলাকাবাসী।

স্পেন প্রবাসী রাজু চৌধুরী জাহেদের সাথে ২০০৬ সালে বিয়ে হয়েছিল মর্জিনা বেগম দিপার। বিয়ের পর থেকেই স্পেনে লিগ্যাল হওয়াসহ নানা অজুহাতে দিপাকে যৌতুকের জন্য চাপ দিতে থাকে জহেদ। কয়েক দফা টাকা এনেও দেন দিপা। জাহেদের লোভ আরো বেড়ে যায়। আরো টাকা দাবি করে সে। টাকা না দেওয়ায় দিপার উপর নেমে আসে অকথ্য নির্যাতন।

গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় দিপাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করেন তার পরিবারের সদস্যরা। দিপা হাসাপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আরেকটি বিয়ে করে জাহেদ। নতুন বউয়ের ছবি দিপাকে মোবাইল ফোনে পাঠায় সে। একে তো শারিরীক আঘাত, তার উপর এই মানসিক আঘাত- এক সাথে দুই আঘাত সামাল দেয়া সম্ভব হয়নি দিপার পক্ষে। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যায় সে।

যে দিন মারা যায় দিপা তার আগের দিনই স্বামী জাহেদসহ তার পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে নারী নির্যাতন মামলাও দায়ের করে সে।

দক্ষিণ সুরমা পুলিশ ও দিপার পরিবার সূত্রে জানা যায়, ২০০৬ সালের ১১ জুলাই জালালাবাদ থানার মোল্লারগাঁও গ্রামের মৃত সিরাজ মিয়ার মেয়ে মর্জিনা বেগম দিপার সাথে দক্ষিণ সুরমার গোপশর গ্রামের জমির আলীর ছেলে রাজু চৌধুরী জাহেদের বিয়ে হয়। বিয়ের ৯ দিন পর জাহেদ স্পেন চলে যান।

বিয়ের প্রায় দুই বছর পর দিপাকে মোবাইল ফোনে কল করে জাহেদ বলেন, তিনি স্পেনে ইলিগ্যাল অবস্থায় আছেন। লিগ্যাল হতে ৮ থেকে ১০ লাখ টাকা লাগবে এবং লিগ্যাল হয়ে দিপাকেও স্পেন নিয়ে যাবেন। স্বামীর এমন কথায় দিপা তার লন্ডনে অবস্থান করা দুই ভাই দিলওয়ার হোসেন ও আলী হোসেন ও বোন ফাতেমা বেগমের কাছ থেকে ৪ লাখ টাকা এনে জাহেদকে দেন। টাকা পেয়ে জাহেদ দিপার সাথে যোগাযোগ বন্ধ করে দেন।

এর ৪ থেকে ৫ মাস পর জাহেদ আবার দিপার সাথে ফোনে যোগাযোগ করে জানান, তিনি দীর্ঘদিন জেলে ছিলেন। এখন দেশে আসবেন টিকিটের টাকা নেই। তাই আসতে পারছেন না। একথা শুনে দিপা নিজের ১ লাখ টাকার স্বর্ণ বিক্রি করে শ্বশুর, শাশুড়ির মাধ্যমে জাহেদের কাছে প্রেরণ করেন। টাকা পাঠানোর কিছুদিন পর জাহেদ দেশে ফিরে আসেন।

পরিবারের সদস্যরা জানান, দেশে এসেই জাহেদ নানা অজুহাতে প্রায়ই টাকার জন্য দিপাকে মারধর করতেন। গত ২৯ আগস্ট জাহেদের পরিবারের সদস্যরা দিপার কাছে ৫ লাখ টাকা দাবি করেন। দিপা টাকা আনতে অপারগতা প্রকাশ করলে স্বামী জাহেদ ও দেবর আব্দুল মালেক শয়ন কক্ষে খাটের সাথে বেঁধে তাকে বেধড়ক মারপিট করেন। এ সময় শ্বশুর-শাশুড়িও মারধর করেন দিপাকে।

দিপা মোবাইল ফোনে মাধ্যমে বিষয়টি তার ভাইদেরকে জানান। ভাইয়েরা নির্যাতনে অসুস্থ হয়ে পড়া দিপাকে উদ্ধার করে নগরীর হাসপাতাল রাগীব রাবেয়ায় ভর্তি করা হয়। চিকিৎসকরা দিপার অবস্থা খারাপ দেখে তাকে ঢাকায় হার্ট ফাউন্ডেশনে নিয়ে যেতে পরামর্শ দেন। ৩১ আগস্ট দিপাকে ঢাকার ল্যাব এইড হাসপাতালে ভর্তি করা হলে অপেন হার্ট সার্জারি করা হয়।

দিপার ভাই ব্যবসায়ী মোজাম্মেল জানান, ৮ সেপ্টেম্বর শুনতে পারি আমার বোনের স্বামী আরেকটি বিয়ে করেছেন। এরপর আমার বোনোর মোবাইল ফোনে ও আমার মোবাইল ফোনে জাহেদ তার নতুন স্ত্রীর ছবি পাঠাতে থাকে। তিনি আমাকে ও আমার বোনকে মেরে ফেলারও হুমকী দেন।

মোজাম্মেল বলেন, ১৬ সেপ্টেম্বর আর্বাও আবারও দিপা আপাকে ও আমাকে হত্যার হুমকি দেয় জাহেদ। হমুকী পেয়ে আমার বোন আবার অসুস্থ হয়ে পড়েন। তাকে নিয়ে যাই ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। রাত আড়াইটায় ডাক্তাররা আমার বোনকে মৃত ঘোষণা করেন।

দিপা মারা যাওয়ার ১ দিন আগে ১৫ সেপ্টেম্বর স্বামীসহ পরিবারের ৪ সদস্যকে আসামি করে দক্ষিণ সুরমা থানায় একটি এজহার দাখিল করেন।

দিপার মৃত্যুর পর ১৭ সেপ্টেম্বর পুলিশ দিপার স্বামী রাজু চৌধুরী জাহেদ, জমির আলী ও দেবর আব্দুল মালেককে গ্রেপ্তার করেছে। তাদেরকে ওইদিনই আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়। এ মামলার আরেক আসামী দিপার শ্বাশুরি আলতানুর নেছা পলাতক রয়েছেন বলে জানান তিনি।

মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই আলতাফুর রহমান বলেন, দিপার অভিযোগ পেয়েই আমরা বিষয়টি নিয়ে তদন্ত শুরু করি। ৩ আসামীকে গ্রেপ্তারও করা হয়েছে। পলাতক আরেকজনকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।

শাস্তির দাবিতে মানববন্ধন : মর্জিনা বেগম দিপার হত্যা কারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে ৮নং কান্দিগাঁও ইউনিয়নবাসীর উদ্যোগে শনিবার সিলেট কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের সামনে এক মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়।

বাংলাদেশ মানবাধিকার বাস্তবায়ন সংস্থার সাধারণ সম্পাদক শাহিন আহমদ খানের সভাপতিত্বে ও কয়েছ আহমদ এবং এসকে শাহিনের যৌথ পরিচালনায় বক্তব্য রাখেন ৮নং ইউপির চেয়ারম্যান মোঃ নিজাম উদ্দিন, ৯নং ওয়ার্ড মেম্বার মোঃ আব্দুল জাহির, মোঃ সানুর মিয়া, মোঃ চান মিয়া, মোঃ সমুজ মিয়া, মোঃ তছিল মিয়া, মোঃ জয়নাল আহমদ, মোঃ সাজ্জাদুর রহমান সাজু, মোঃ সিদ্দেক আলী, সাজিদ মিয়া, মোজ্জাম্মেল হোসেন, নাজমুল হোসেন, সুরমান, আনোয়ার হোসেন, জাবেদ, লাহিন, রুহুল আমিন, কামরান, আজিজুল, এখলাছ, ময়নুল, হাসান আহমদ, কামাল হোসেন, সাদিক আহমদ, সাহেদ খান, মামুনুর রশিদ মামুন, ইয়ামিন আহমদ প্রমুখ।

টুডে মিডিয়া গ্রুপ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
[email protected] ☎ ৮৮ ০১৭ ১৪৩৪ ৯৩৯৩
৭/ডি-১ (৭ম তলা), ব্লু ওয়াটার শপিং সিটি,
জিন্দাবাজার, সিলেট - ৩১০০, বাংলাদেশ।
Developed By - IT Lab Solutions Ltd.