Sylhet Today 24 PRINT

অসহায়, বৃদ্ধ ও প্রতিবন্ধীদের ভাড়া নেন না টমটম চালক

রিপন দে, মৌলভীবাজার |  ১৭ ফেব্রুয়ারী, ২০২০

যাদের ভাড়া দেওয়ার সামর্থ্য নেই, যারা বৃদ্ধ ও প্রতিবন্ধী তাদের জন্য প্রতিদিন এবং তাদের সাথে প্রতি শুক্রবারে যোগ হন নামাজি মুসল্লিরা। এই তিন ধরণের মানুষের জন্য প্রতিদিন সকাল ৯টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত এবং দুপুর ২টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত টমটমের ভাড়া নেন না টমটম চালক মো. ইবাদুর রহমান ইমন।

গত ৩ মাস ধরে নীরবে তিনি এই সেবা দিয়ে আসছেন। সাধারণ মানুষকে জানানোর জন্য দুই দিন আগে টমটমের সামনে একটা স্টিকার লাগিয়েছেন, যার পরে মূলত আলোচনায় এসেছে এই চালকের মহানুভবতার কথা।

টমটমের সামনে সাদা কাগজে কালো কালিতে লেখা 'বৃদ্ধ ও প্রতিবন্ধীদের জন্য ফ্রি সার্ভিস ও সাপ্তাহিক শুক্রবার নামাজি মুসল্লিদের জন্য ফ্রি টমটম সার্ভিস।'

আলোচিত এই চালকের বাড়ি মৌলভীবাজার কমলগঞ্জ পৌর এলাকার ৫নং ওয়ার্ডের ফরেস্ট অফিস রোডে।

মানুষের সেবায় এগিয়ে আসার কারণ নিয়ে টমটম চালক মো. ইবাদুর রহমান ইমন জানান, আমার মা ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন ২০১৮ সালে টাকার অভাবে। মায়ের চিকিৎসা ঠিকমত করাতে পারিনি। বাবা আর আমার সংসার। বাবা ঠেলা গাড়ি চালান। ছোট বেলা থেকেই অভাব অনটনে বড় হয়েছি। গরীবের দুঃখ আমি বুঝি। আমার ইচ্ছে ছিল অনেক কিছু করার কিন্তু আমার সেই সামর্থ্য নেই। সামান্য যে সামর্থ্য আছে তা নিয়ে মানুষের সেবা করার জন্য আমার এই উদ্যোগ।

কমলগঞ্জ মডেল বহুমুখী মডেল উচ্চ বিদ্যালয়ে সপ্তম শ্রেণি পর্যন্ত লেখাপড়া করেছেন ইমন মিয়া। কিন্তু অভাবের কারণে আর লেখাপড়া করতে পারেননি। এরপর ট্রাক চালকের সহযোগী হিসেবে ছিলেন কিছুদিন। কিন্তু এরই মধ্যে সড়ক দুর্ঘটনায় আহত হয়ে আর ট্রাকে উঠতে পারেননি।

তিন মাস আগে ঠেলাচালক বাবার সাহায্য এবং দাদীর থেকে কিছু টাকা ধার নেন। সেই সাথে নিজের জমানো কিছু টাকা মিলিয়ে ৯১ হাজার টাকা দিয়ে একটি টমটম কেনেন। প্রথম দিন থেকেই সমাজের অসহায়, বৃদ্ধ ও প্রতিবন্ধীদের কোন ধরণের ভাড়া ছাড়াই পৌর এলাকায় একপাশ থেকে অন্য পাশে নিয়ে যান। প্রতি শুক্রবারে যারা জুম্মার নামাজে যান সেই সব মুসল্লিদেরও ফ্রি সার্ভিস দেন।

প্রতিদিন সকাল ৯টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত, দুপুর ২টা থেকে বিকাল ৪টা তার এই ফ্রি সার্ভিস চলমান থাকে। দুপুর ১টা থেকে ২টা পর্যন্ত নিজের খাবারের সময় তবে বিকেল ৪টা থেকে নিজের জন্য রুজি করেন।

ইমন জানান, সারাদিন ভাড়া নিলে ৮-৯শ টাকা আয় করা যায়। কিন্তু আমি আমার জন্য আয় করি বিকেল ৪টা থেকে রাত ১০-১১টা পর্যন্ত। এই সময়ে ৩-৪শ টাকা আয় করি। এই টাকা দিয়ে মূলত নিজে চলি এবং সকাল ৯টা থেকে বিকেল পর্যন্ত যে ফ্রি সার্ভিস দেই তার জন্য গাড়ির যে খরচ হয় তা মেটাই।

ইমনের ঠেলাচালক বাবা বাবলা মিয়া (৪৩) ছেলের এই কাজে খুশি। ছেলেকে কখনো বাধা দেননি, বরং উৎসাহ দিয়ে বলেন, আমরা দুইজনের বাপ-বেটার সংসার। নিজেও ঠেলা চালাই, ছেলেও বিকেল থেকে আয় করে। এই টাকা জমিয়ে আমরা আরেকটা টমটম কিনতে পারব। কারণ হালাল রুজি আর মানুষের দোয়ায় কিভাবে কি হয়ে যাবে নিজেই বুঝতে পারবো না।

ইমন জানান, আমার বাবা আমাকে উৎসাহ দেন। জানি অভাব আছে তবুও বাবা বলেন কিছুদিন পর আরেকটা টমটম কিনে ফেলব আমাদের অভাব থাকবে না। তবে আমরা এখন যেমন আছি ভাল আছি। বাবা আর আমার সংসার। আমার মা মারা যাওয়ার পর বাবা আর বিয়ে করেননি। এখন বাবাই আমার মা-বাবা সব।

ইমন এমন উদ্যোগে প্রশংসায় ভাসছেন। স্থানীয়রা তার এই মহানুভব চিন্তায় খুশি।

কমলগঞ্জ পৌরসভার ৫নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর (প্যানেল মেয়র) রমুজ মিয়া জানান, সে দীর্ঘদিন ধরে এই ফ্রি সার্ভিস দিয়ে যাচ্ছে। একজন টমটম চালক এবং অভাবের সংসারের ছেলে হয়েও তার যে সেবা করার চিন্তা তা আমাদের শেখায় মানুষের ইচ্ছে থাকলে সে অনেক ভাবেই মানুষের পাশে দাড়াতে পারে। তার আর্থিক উন্নতি হোক এবং আরও বেশী মানুষের পাশে দাঁড়াক সেই শুভকামনা তার জন্য।

 

টুডে মিডিয়া গ্রুপ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
[email protected] ☎ ৮৮ ০১৭ ১৪৩৪ ৯৩৯৩
৭/ডি-১ (৭ম তলা), ব্লু ওয়াটার শপিং সিটি,
জিন্দাবাজার, সিলেট - ৩১০০, বাংলাদেশ।
Developed By - IT Lab Solutions Ltd.