Sylhet Today 24 PRINT

সংস্কৃতির বাতিঘর ছিলেন হেমচন্দ্র ভট্টাচার্য্য

অনির্বাণ প্রকাশনা অনুষ্ঠানে বক্তারা

সিলেটটুডে ডেস্ক |  ২০ ফেব্রুয়ারী, ২০২০

মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক গবেষক অপূর্ব শর্মা ও বাচিক শিল্পী মুনিরা পারভীন সম্পাদিত স্মারকগ্রন্থ অনির্বাণ প্রকাশনা অনুষ্ঠানে অনুষ্ঠানে বক্তারা বলেছেন, হেমচন্দ্র ভট্টাচার্য্য ছিলেন নির্ভরতার প্রতীক। সংস্কৃতির এই বটবৃক্ষের শীতল ছায়ায় স্বস্তির নিশ্বাস নেননি, সুরমা উপত্যকায় এমন সংস্কৃতিজন বিরল। বিরুদ্ধতাকে অতিক্রম করেই সুস্থ সংস্কৃতি চর্চা করেছেন তিনি। শোষণ আর বঞ্চনায় নাভিশ্বাস ওঠার কালে সংস্কৃতির উপর নানা বিধি নিষেধ আরোপিত হলে তার বিরুদ্ধে সোচ্চার ছিলেন তিনি। পাকিস্তানিদের চোখ রাঙানি উপেক্ষা করে সিলেটে রবীন্দ্র জন্মশতবার্ষিকী পালনের জন্য কমিটি গঠন করা হয় তার অন্যতম সদস্য ছিলেন তিনি। নির্ভার থেকেই পালন করেন নিজ দায়িত্ব। ছয় দফার আন্দোলনে, উনসত্তরের গণঅভ্যুত্থানে, সত্তরের নির্বাচনে, একাত্তরের অসহযোগ আন্দোলনে তিনি ছিলেন সোচ্চার।

বক্তারা বলেন, সংস্কৃতির মাধ্যমে জাগরণ সৃষ্টিই ছিল তাঁর সংগ্রামের মূল লক্ষ্য। একাত্তরের অন্যরকম যুদ্ধ হিসেবে ইতিহাসের পাতায় ঠাঁই পাওয়া সমস্বর এবং  কলম তুলি কণ্ঠ পরিষদ আয়োজিত অনুষ্ঠানগুলোর অন্যতম প্রাণশক্তি ছিলেন তিনি। মুক্তিযুদ্ধের ভয়াল সেই দুঃসময়ে ভারতে শরণার্থী হিসেবে আশ্রয় নিয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য, অনাহারী মানুষদের জন্য মাঠে নামেন তিনি। বাংলাদেশ গণমুক্তি শিল্পী সংস্থা গঠন করে সংগীতানুষ্ঠানের আয়োজন করে, উপার্জিত অর্থ তুলে দিয়েছেন সংশ্লিষ্টদের হাতে। মুক্তিযোদ্ধাদের মনোবল চাঙা করতেও উদ্যোগ গ্রহন করেন তিনি। উদ্দীপনার গান শোনাতে প্রতিষ্ঠিত শিল্পীদের নিয়ে গেছেন ক্যাম্পে ক্যাম্পে। স্বাধীনতার সূর্য উদিত হলে ফিরে আসেন জন্মভূমে। সমৃদ্ধ দেশ গঠনের অংশহিসেবে পুনরায় শুরু করেছেন সংস্কৃতিচর্চা। নেতৃত্ব দিয়েছেন নাট্য আন্দোলনে, ভূমিকা রেখেছেন সুস্থ সংস্কৃতিচর্চার ক্ষেত্র প্রতিষ্ঠায়। বঙ্গবন্ধুর মৃত্যুর পর যখন আবারও নেমে এলো গ্রহণের কাল, তখনও তিনি প্রতিবাদ-প্রতিরোধের মিছিলের ছিলেন অগ্রভাগে। নব্বইয়ের গণআন্দোলনে লড়াই শেষে হেসেছেন বিজয়ের হাসি।

বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ছ'টায় কবি নজরুল অডিটোরিয়ামে সম্মিলিত নাট্য পরিষদ,সিলেট আয়োজিত হেমচন্দ্র ভট্টাচার্য্য স্মারক গ্রন্থ 'অনির্বাণ' প্রকাশনা অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করে সম্মিলিত নাট্য পরিষদ সিলেটের সভাপতি মিশফাক আহমেদ মিশু।   

এতে বক্তারা আরও বলেন, নগর সিলেটের সংস্কৃতির পুরোধা হিসেবে তিনি ছিলেন সর্বজন শ্রদ্ধেয়। সকল কিছুর সাথে সম্পৃক্ত থাকলেও আবৃত্তি এবং নাটককে তিনি সযতনে আগলে রেখেছেন জমজ সন্তানের মতো। আবৃত্তিচর্চার ক্ষেত্র সম্প্রসারিত করতে বিনা পারিশ্রমিকে দিনের পর দিন, বছরের পর বছর শিশু একাডেমি এবং শিল্পকলা একাডেমিতে প্রশিক্ষকের দায়িত্ব পালন করেছেন বিনা সম্মানিতে। দেশের ইতিহাসে একটানা পঁচিশ বছর দায়িত্ব পালন করে কোনও সম্মানী গ্রহণ না করার দৃষ্টান্ত সমকালে নেই আর একটিও।

বক্তারা বলেন, হেমচন্দ্র ভট্টাচার্য্য চেতনার যে দীপ শিখা তিনি প্রজ্বলিত করেছেন অগণনের মাঝে তা নির্বাপিত হবে না কোনওদিন। কিন্তু দুঃখের বিষয় হচ্ছে, চেতনার এই বাতিঘরকে আমরা জীবদ্দশায় মূল্যায়ন করতে পারিনি। তাঁকে যথাযথ সম্মান প্রদর্শন করতে পারেনি সমাজ এবং রাষ্ট্র। আমরা সেই অপূর্ণতাকে পূরণের দাবি জানাচ্ছি।

এতে স্বাগত বক্তব্য রাখেন রজত কান্তি গুপ্ত। আরও বক্তব্য রাখেন,সাংস্কৃতিক ব্যাক্তিত্ব ব্যারিষ্টার মো.আরশ আলী, সাবেক শিশু বিষয়ক কর্মকর্তা মাহবুবুজ্জামান চৌধুরী, হেমচন্দ্র ভট্টাচার্য্যের সহধর্মিণী অনিমা ভট্টাচার্য, জেলা প্রেসক্লাবের সভাপতি তাপস দাশ পুরকায়স্থ, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের কেন্দ্রীয় সদস্য শামসুল আলম সেলিম, নাট্য পরিষদের সাবেক সভাপতি নিরঞ্জন দে যাদু। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন, বাচিক শিল্পী নাজমা পারভিন।

সংগীত পরিবেশন করেন, রানা কুমার সিনহা, অনিমেষ বিজয় চৌধুরী, জয়ন্তী ভট্টাচার্য, আবৃত্তি করেন, জ্যোতি ভট্টাচার্য, মুনিরা পারভিন, অচিরা ভট্টাচার্য।

অনুষ্ঠানে অপূর্ব শর্মা ও মুনিরা পারভিন সম্পাদিত 'অনির্বান' স্মারক গ্রন্থের মোড়ক উন্মোচন করেন অতিথিবৃন্দ।

টুডে মিডিয়া গ্রুপ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
[email protected] ☎ ৮৮ ০১৭ ১৪৩৪ ৯৩৯৩
৭/ডি-১ (৭ম তলা), ব্লু ওয়াটার শপিং সিটি,
জিন্দাবাজার, সিলেট - ৩১০০, বাংলাদেশ।
Developed By - IT Lab Solutions Ltd.