Sylhet Today 24 PRINT

শহীদ মিনারের পাশের স্থাপনা অপাসরণ না করায় শ্রদ্ধাঞ্জলি দেননি মুক্তিযোদ্ধা!

সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি |  ২১ ফেব্রুয়ারী, ২০২০

১৯৭১ সনের ৬ ডিসেম্বর সুনামগঞ্জ হানাদারমুক্ত হয়। ওইদিন থেকেই শহিদদের স্মরণে জয়বাংলা স্লোগান দিয়ে শহরে প্রবেশকারী মুক্তিযোদ্ধারা নিজেরাই নকশা করে শহিদ মিনার নির্মাণের উদ্যোগ নেন। যুদ্ধজয়ী মুক্তিযোদ্ধারা শহিদ মিনারের শ্রমিকের কাজ করেন। ‘সুনামগঞ্জ কেন্দ্রীয় শহিদ মিনার’ নামে ডিএস রোডে এর উদ্বোধন করেন বালাট সাব সেক্টও কমা-ার মেজর মোতালেব।

১৯৭১ সনের ১৬ ডিসেম্বর প্রথম বিজয় দিবস উদযাপন করে মাতৃভূমির সম্মান বজায় রাখার শপথ করেন মুক্তিযোদ্ধারা। কিন্তু সম্প্রতি সুনামগঞ্জের ঐতিহ্যের এই শহিদ মিনার আড়াল করে দুই দিকে দুটি বাণিজ্যিক মার্কেট নির্মাণের প্রতিবাদ করে আসছিলেন মুক্তিযোদ্ধারা। মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতিবাদের মুখে একটি মার্কেট অপসারণ হলেও আরেকটি মার্কেট বহাল রয়ে যাওয়ায় প্রতিবাদ স্বরূপ ওই শহিদ মিনার নির্মাণের অন্যতম সদস্য মুক্তিযোদ্ধা মালেক হুসেন পীর এবার শহিদ দিবসে শ্রদ্ধাঞ্জলি দেননি। ওই মার্কেট অপসারণের জন্য তিনি আইনী লড়াইয়ের ঘোষণা দিয়ে শহিদ মিনারের পক্ষে পক্ষভূক্তির আবেদন করেছেন।

মুক্তিযোদ্ধারা জানান, সম্প্রতি সুনামগঞ্জ ঐতিহ্যবাহী শহিদ মিনারের পূর্ব ও পশ্চিম পাশের ভূমিতে হঠাৎ দুটি বাণিজ্যি মার্কেট নির্মাণ করা হয়েছে। গত ১২ ফেব্রুয়ারি রাতে পূর্বদিকের মার্কেটটি মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতিবাদের মুখে অপসারণ করা হয়েছে। পশ্চিম দিকের মার্কেটটিও মুক্তিযোদ্ধারা অপসারণের দাবি জানালে সেটা অপসারণ করা হয়নি। গত ১১ ফেব্রুয়ারি ‘সুনামগঞ্জ শহিদ মিনারের জায়গার মালিকানা সংক্রান্ত বিষয়ক উপকমিটি’ জরুরি সভা করে। ওই সভায় উপস্থিত সকল মুক্তিযোদ্ধা শহিদ মিনার এলাকায় রাতারাতি দুটি বাণিজ্যিক মার্কেট নির্মাণের প্রতিবাদে নিন্দা ও ঘৃণা জানিয়ে অপসারণের দাবি জানান। ওই সভায় ১৯৭১ সনে শহিদ মিনার নির্মাণে জড়িত মুক্তিযোদ্ধা মালেক হুসেন পীর ২১ ফেব্রুয়ারির মধ্যে শহিদ মিনার এলাকায় গড়ে ওঠা বাণিজ্যিক স্থাপনা অপসারণ না হলে তিনি ২১ ফেব্রুয়ারি প্রতিবাদ স্বরূপ শহিদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পন করবেন না বলে জানান।

তিনি এ বিষয়ে কমিটিকে সিদ্ধান্ত নেওয়ারও অনুরোধ জানান। তবে কমিটি মার্কেট নির্মাণকারীদের সঙ্গে যোগাযোগ করে পূর্বে দিকের নির্মাণাধীন স্থাপনা গত ১২ ফেব্রুয়ারি অপসারণ করে। পশ্চিম দিকের বাণিজ্যিক স্থাপনা অপসারণে এখনো কোন সিদ্ধান্তের বিষয়টি জানানো হয়নি মুক্তিযোদ্ধাদের। পশ্চিম দিকের মার্কেট অপসারণের প্রতিবাদে সুনামগঞ্জ জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক সদস্যসচিব ও ৭১ সনে ওই শহিদ মিমার নির্মাণে জড়িত মুক্তিযোদ্ধা মালেক হুসেন পীর শহিদ মিনারে শ্রদ্ধাঞ্জলি দিতে আসেননি।

মুক্তিযোদ্ধা মালেক হুসেন পীর বলেন, আমি সেদিনের মতবিনিময় সভায়ই প্রস্তাব করেছিলাম দুই দিকের অবৈধ স্থাপনা অপসারণের জন্য। একটি অপসারণ করা হয়েছে। আরেকটি এখনো বহাল আছে। শহিদ মিনার এলাকায় শহিদ মিনারকে অস্তিত্বহীনের প্রয়াসে নির্মিত এই স্থাপনা অপসারণ না করায় আমি প্রতিবাদ স্বরূপ শ্রদ্ধাঞ্জলি দেইনি। আমি শহিদ মিনারের পক্ষে আইনী লড়াইয়ের সিদ্ধান্ত নিয়েছি।

এদিকে মালেক হুসেন পীর শ্রদ্ধাঞ্জলি না দিলেও জেলা প্রশাসন, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন, সরকারি বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ও পেশাজীবী দল শহিদ মিনারে শ্রদ্ধাঞ্জলি দিয়েছেন।

উল্লেখ্য তেঘরিয়া মৌজার ৪২১ নং দাগের, জেএল ১৪৪ এবং ৯নং খতিয়ানের এই ভূমি নিয়ে সম্প্রতি বিরোধ দেখা দিয়েছে। ২০১৪ সালে শহিদ মিনারের এই ভূমি স্বত্বপ্রচার ও হালজরিপে জেলা জজের নামে রেকর্ডের জন্য ১৪৪/২০১৪ মামলা দায়ের করেন আদালতের নাজির।

স্বত্বপ্রচার মামলার বিষয়টি স্বীকার করলেও জেলা জজ আদালতের নাজির দেবাশী দে বলেন, পশ্চিমের মার্কেট কারা নির্মাণ করেছে আমরা জানিনা।

টুডে মিডিয়া গ্রুপ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
[email protected] ☎ ৮৮ ০১৭ ১৪৩৪ ৯৩৯৩
৭/ডি-১ (৭ম তলা), ব্লু ওয়াটার শপিং সিটি,
জিন্দাবাজার, সিলেট - ৩১০০, বাংলাদেশ।
Developed By - IT Lab Solutions Ltd.