Sylhet Today 24 PRINT

চারদিন আগেই ফটিককে তুলে নিয়ে যায় পুলিশ!

পরিকল্পিতভাবে হত্যার অভিযোগ বন্দুকযুদ্ধে নিহতের স্ত্রীর

নিজস্ব প্রতিবেদক |  ২২ ফেব্রুয়ারী, ২০২০

সিলেটের বিশ্বনাথে কথিত বন্দুকযুদ্ধে নিহত ফটিক ওরফে লিটনকে চারদিন আগেই সাদা পোষাকে পুলিশ তুলে নিয়ে যায় বলে অভিযোগ করেছেন তার স্ত্রী হালিমা খাতুন। হালিমা খাতুনের অভিযোগ, তুলে নিয়ে যাওয়ার পর পুলিশ টাকা দাবি করে। টাকা না দেওয়ায় পরিকল্পিতভাবে ফটিককে হত্যা করা হয় বলেও অভিযোগ করেন স্ত্রী।

শুক্রবার রাত ৩টায় কথিত বন্দুকযুদ্ধে নিহত হন ফটিক। শনিবার (২২ ফেব্রুয়ারি) বেলা ৩টার দিকে ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গ থেকে নিহতের মরদেহ স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়। স্বামীর মরদেহ গ্রহণের সময় সাংবাদিকদের কাছে এমন অভিযোগ করেন হালিমা খাতুন। যদিও পুলিশ এসব অভিযোগ অস্বীকার করে বলছে, ফটিক চিহ্নিত ডাকাত। শুক্রবার রাতে ডাকাতির সময় বাধা দিলে পুলিশকে লক্ষ্য করে গুলি ছুঁড়ে ফটিকের দল। এসময় পাল্টাগুলিতে তিনি নিহত হন।

ওসমানী হাসপাতালের মর্গের সামনে সাংবাদিকদের সাথে আলাপকালে হালিমা খাতুন বলেন, ডাকাতি মামলায় ২৬ মাস হাজতবাসের পর গত ১৮ ফেব্রুয়ারি জামিন পেয়ে বেরিয়ে আসেন বিশ্বনাথের ফটিক ওরফে লিটন। জেল থেকে বের হওয়ার ৫ মিনিটের মাথায় ফের জেলগেট থেকে সাদা পোশাকে একদল পুলিশ তাকে আবার ধরে নিয়ে যায়। এরপর থেকে তার আর খোঁজ পাওয়া যাচ্ছিল না।

হালিমা খাতুন আরও বলেন, ‘আমি তার (নিহত ফটিকের) আইনজীবীর মাধ্যমে জানতে পারি ৫০ হাজার টাকা দিলে আমার স্বামীকে ছোটখাটো মামলা দিয়ে ছেড়ে দেওয়া হবে। কিন্তু আজ (শনিবার) সকালে ফেসবুকের মাধ্যমে জানতে পারি আমার স্বামী মারা গেছেন।’

তবে এ অভিযোগকে মিথ্যা ও বানোয়াট দাবি করে বিশ্বনাথ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) শামীম মুসা সিলেটটুডে টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, ফটিক ডাকাত দলের সদস্য। ডাকাতির প্রস্তুতিকালেই পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয়েছেন ফটিক। ফটিকের বিরুদ্ধে থানায় ১৮টি মামলা রয়েছে বলেও জানান ওসি।

তিনি আরও বলেন, ডাকাতিসহ সকল প্রকার অপরাধ দমনে থানা পুলিশ কাজ করে যাচ্ছে। এ ঘটনায় থানায় মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে।

প্রসঙ্গত, শুক্রবার রাত ৩টার দিকে বিশ্বনাথ-জগন্নাথপুর বাইপাস সড়কের মরমপুর-সুরিরখাল এলাকায় পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে নিহত হন ফটিক মিয়া। নিহত ফটিক ওরফে লিটন সিলেটের বিশ্বনাথের পূর্বপাড়া গ্রামের মৃত ইদ্রিস আলীর ছেলে।

পুলিশ সূত্রে জানা যায়, শুক্রবার রাতে উপজেলা সদরের বিশ্বনাথ-জগন্নাথপুর বাইপাস সড়কের মরমপুর-সুরিরখাল এলাকার মধ্যবর্তী জায়গায় সড়কের পার্শ্বের গাছ কেটে ডাকাতির প্রস্তুতি নিচ্ছিল অস্ত্রধারী একটি ডাকাত দল। নিয়মিত টহলের অংশ হিসেবে শুক্রবার দিবাগত ভোররাত আনুমানিক সাড়ে ৩টার দিকে থানার এসআই মিজানুর রহমান তার সঙ্গীয় কনস্টেবল চন্দন গৌর ও রাসেল দাসকে নিয়ে এলাকা টহল দিচ্ছিলেন। পুলিশের গাড়ি দেখতে পেয়ে ডাকাত দল পুলিশকে লক্ষ্য করে গুলি করতে শুরু করে। এতে পুলিশ সদস্যরা গুলিবিদ্ধ হয়ে গুরুতর আহত হন।

পুলিশ আরও জানায়, খবর পেয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শামীম মুসা, পরিদর্শক (তদন্ত) রমা প্রসাদ চক্রবর্তী, এসআই নূর হোসেন, দেবাশীষ শর্ম্মা নিজের ফোর্স নিয়ে ঘটনাস্থলে উপস্থিত হন। পুলিশের উপস্থিতি বাড়ছে টের পেয়ে ডাকাতদল দুটি ভাগে বিভক্ত হয়ে পুলিশকে লক্ষ্য করে গুলি ছুড়তে ছুড়তে পালানোর চেষ্টা করে। এসময় পুলিশও পাল্টা গুলি করে।

এরপর স্থানীয় লোকজনকে সাথে নিয়ে পুলিশ ঘটনাস্থল তল্লাশি করলে স্তূপ করা মাটির উপর এক ডাকাত সদস্যের লাশ উদ্ধার করে। এ সময় ওই ডাকাত সদস্যের হাতে একটি দেশীয় পাইপগান ও কোমরে থাকা ৩টি তাজা কার্তুজ উদ্ধার করে। এ ঘটনায় নিজেদের তিন সদস্য আহত হন বলেও দাবি পুলিশের।

পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, ফটিক ওরফে লিটনের বিরুদ্ধে সিলেট বিভাগের বিভিন্ন থানায় থাকা ১৮টি মামলার মধ্যে ১১টি ডাকাতির মামলা, ৩টি অস্ত্র মামলা, ১টি ছিনতাই মামলা, ২টি ডাকাতির প্রস্তুতি মামলা ও ১টি অন্যান্য মামলা। তার বিরুদ্ধে থাকা এসব মামলা আদালতে বিচারাধীন রয়েছে।

টুডে মিডিয়া গ্রুপ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
[email protected] ☎ ৮৮ ০১৭ ১৪৩৪ ৯৩৯৩
৭/ডি-১ (৭ম তলা), ব্লু ওয়াটার শপিং সিটি,
জিন্দাবাজার, সিলেট - ৩১০০, বাংলাদেশ।
Developed By - IT Lab Solutions Ltd.