Sylhet Today 24 PRINT

অনুমোদনহীন হাসপাতাল, অস্ত্রােপচারে ব্যর্থ চিকিৎসক, বিপাকে রোগী

জাহিদুল ইসলাম |  ২৫ ফেব্রুয়ারী, ২০২০

সিলেট নগরীর মিরবক্সটুলা এলাকার ‘সিলেট ট্রমা সেন্টার এন্ড স্পেশালাইজড হসপিটাল’। নামে বিশেষায়িত হাসপাতাল হলেও এই প্রতিষ্ঠানের নেই কোনো অনুমোদন। কেবল ট্রেড লাইসেন্স নিয়েই চলছে হাসপাতালের কার্যক্রম। এই হাসপাতালেই এক অর্ধেক অস্ত্রোপচারের পর রোগী ফেলে চলে যান এক চিকিৎসক। এতে বিপাকে পড়েছেন ও রোগী ও তার স্বজনরা।

মনছুফ মিয়া নামের ওই রোগীর স্বজনদের অভিযোগের প্রেক্ষিতে মঙ্গলবার ওই হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, হাসাপাতালের তিন তলা ভবনের ছোট বড় ২০ টির মতো কক্ষের সবগুলোতেই ভর্তি রোগী। এর মধ্যে প্রায় সবাই অস্ত্রোপচারের রোগী। প্রতিদিনই ৪ থেকে ৫ টি বড় অস্ত্রোপচার করা হয় এই হাসপাতালে। তবে এসবের জন্য স্বাস্থ্য অধিপ্তরের কোনো অনুমোদন নেই হাসপাতালটির। অনুমোদনের জন্য আবেদন করেই তিন মাস থেকে চলছে হাসপাতালের কার্যক্রম। সিটি করেপারেশন থেকে ব্যবসা পরিচলানা সংক্রান্ত ট্রেড লাইসেন্স দিয়েই চলছে এ হাসপাতালের কার্যক্রম।

কাতার প্রবাসী মনছুফ মিয়া গোড়ালিতে ভেঙে গেলে প্রবাসে থাকতেই সেখানে প্লেট লাগান। প্লেট অপসারণের জন্য দুই সপ্তাহ আগে শরনাপন্ন হন আর্থোপেডিক সার্জন সুমন মল্লিকের। ডা. সুমন মল্লিকের পরামর্শে তিনি ভর্তি হন সিলেট ট্রমা সেন্টার নামের এই হাসপাতালে।

মনছুফ মিয়ার স্বকজনরা জানান, অস্ত্রোপচারের জন্য হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ৩২ হাজার টাকা ফি দাবি করে। সোমবার রাতে অপারেশন থিয়েটারে নিয়ে যওয়া হয় মনছুফ মিয়াকে। অস্ত্রোটপচার চলাকালেই ২০ হাজার টাকা জমা দিতে বলেন চিকিৎসক। এই টাকা পরিশোধও করেন রোগীর স্বজনরা। তবে এর মিনিট দশেক পরই চিকিৎসক এসে জানান- অস্ত্রোপচার সফল হয় নি। এই চিকিৎসা দেশে সম্ভব নয়, বিদেশে নিয়ে যেতে হবে।

এরপর জমাকৃত ২০ হাজার টাকার মধ্যে আট হাজার টাকা রোগীর স্বজনদের ফিরিয়ে দেবার নির্দেশ দিয়ে চলে যান চিকিৎসক।

এ বিষয়ে অস্ত্রোপচারকারী চিকিৎসক ডা. সুমন মল্লিকের সাথে যোগাযোগ করলে তিনি অস্ত্রোপচারে ব্যর্থতার কথা স্বীকার করেন। তবে হাসপাতালের অনুমোদন আছে কিনা কিংবা এই হাসপাতালে অস্ত্রোপচারে করার অনুমতি আছে কিনা সে বিষয়ে স্পষ্ট কিছু জানাতে পারেননি।

তবে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এই হাসপাতালের স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কোনো অনুমোদনই নেই। নেই পরিবেশের ছাড়পত্রও। এছাড়া এখানে নেই কোন আবাসিক চিকিৎসক বা সার্জন।

এ ব্যাপারে হাসাপাতালের সহকারী ব্যবস্থাপনা পরিচালক জয়নাল আবেদীন সিলেটটুডে টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, আমাদের ট্রেড লাইসেন্স আছে, হাসপাতালের অনুমোদনের জন্য সিভিল সার্জনের কাছে আবেদন করা হয়েছে।

আবেদন করেই কার্যক্রম শুরু করা যায় কিনা এমন প্রশ্নের উত্তরে জয়নাল আবেদীন বলেন, সিলেটের কোনো হাসপাতালেই ছাড়পত্র নেই, সবাই এভাবেই হাসপাতাল পরিচালনা করেন।

এ ব্যাপারে সিলেট এমএজি ওসমানী হাসপাতালের উপ পরিচালকের দায়িত্বে থাকা সাবেক সিভিল সার্জন ডা. হিমাংশু লাল রায় বলেন, কোনো অবস্থাতেই অনুমোদন ছাড়া চিকিৎসা কার্যক্রম চালানো যায় না। আর সিভিল সার্জন দপ্তর হাসপাতালের অনুমোদন দেয় না। যে বা যারা এমন কার্যক্রম চালাচ্ছেন তারা সম্পূর্ণ অবৈধ উপায়ে চালাচ্ছেন।

এ ব্যাপারে সিলেট বিভাগীয় পরিচালক (স্বাস্থ্য) দেবপদ রায় সিলেটটুডে টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, আমরা অচিরেই এসব প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করবো।

তবে এসব আশ্বাসে আস্থা রাখতে পারছেন না রোগী এবং রোগীর স্বজনরা। সিলেট ট্রমা সেন্টারে ভুল অস্ত্রোপচারের শিকার মনছুফ মিয়ার আত্মীয় ও সিলেটের পরিবেশকর্মী আশরাফুল কবির বলেন, সিলেট শহরের প্রাণকেন্দ্রে কোনপ্রকার অনুমোদন ছাড়া একটি হাসপাতাল চলছে, একের পর এক অস্ত্রোপচার করছেন তারা অথচ কর্তৃপক্ষ কিছুই জানেন না এমন হতে পারে না। তিনি আরো বলেন, রোগীরা এখন আর ডাক্তারদের কাছে রোগী নন, তারা এখন ক্রেতা। ব্যবসা প্রতিষ্ঠান যেমন তার গ্রহকদের সাথে ব্যবহার করে এখনকার ডাক্তাররাও ঠিক তাই করেন।

টুডে মিডিয়া গ্রুপ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
[email protected] ☎ ৮৮ ০১৭ ১৪৩৪ ৯৩৯৩
৭/ডি-১ (৭ম তলা), ব্লু ওয়াটার শপিং সিটি,
জিন্দাবাজার, সিলেট - ৩১০০, বাংলাদেশ।
Developed By - IT Lab Solutions Ltd.