Sylhet Today 24 PRINT

বাবার গান বিকৃত না করার অনুরোধ শাহ আব্দুল করিমের ছেলের

সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি |  ২৯ ফেব্রুয়ারী, ২০২০

বাউল সম্রাট শাহ আব্দুল করিমের ১০৪তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে সুনামগঞ্জের দিরাই উপজেলায় দুই দিনব্যাপী শুরু হয়েছে বাউল শাহ আব্দুল করিম লোকউৎসব।

সানোয়ারা ড্রিংক্স এন্ড বেভারেজ ইন্ডাস্ট্রিজ এর কোয়ালিটি আইসক্রিম এর আয়োজনে লোকউৎসব উপলক্ষে বসেছে মেলাও। হরেক রকমের পণ্য সাজিয়ে বসেছেন অনেক দোকানি।

শুক্রবার (২৮ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে দিরাই উপজেলার শাহ আব্দুল করিমের বাড়ি উজানধলে স্থানীয় একটি মাঠে কবুতর উড়িয়ে উৎসবের শুভ উদ্বোধন করা হয়।

একুশে পদক পাওয়া বাউল সম্রাট শাহ আব্দুল করিমের জীবনদশা থেকে শুরু হওয়া এই উৎসবটি সুনামগঞ্জ ছাড়াও বিভিন্ন জেলা থেকে আসেন হাজারো মানুষ। বাউল সম্রাট শাহ আব্দুল করিমের গানের মাধ্যমে কথা বলেছেন দেশের, অসাম্প্রদায়িক চেতনা এবং দারিদ্রতার। জীবনের শেষ সময় পর্যন্ত অভাব আর অনটনের মাধ্যমে পার করা এই সাধককে রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ সম্মাননা রাষ্ট্রীয় পদক দেওয়ার দাবি তুলেছেন অনেকে।

শাহ আব্দুল করিমের গান বিনা অনুমতিতে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান নিয়ে সেগুলোকে বিকৃত করে প্রচার করারও প্রতিবাদ করেছেন তার একমাত্র সন্তান বাউল শিল্পী শাহ নুর জালাল।

বাউল সম্রাটের গান বিভিন্ন কোম্পানি অনুমতি না নিয়ে বিকৃত করার প্রতিবাদ জানিয়ে বাউল শাহ আব্দুল করিমের ছেলে শাহ নুর জালাল বলেন, খুব কষ্ট লাগে যখন দেখি বাবার গানের বিকৃতি ঘটে। আমি সেটা বিবেচনা করে ২০১০ সালে শাহ আব্দুল করিম রচনাসংগ্রহ কপি রাইট করিয়েছি। আমি অনেক সময় বলেছি যারা শাহ আব্দুল করিমের গান মঞ্চে গাচ্ছেন, আমার আপত্তি নেই কিন্তু যারা বাণিজ্য করছেন তারা কিন্তু আমাকে কিছুই জিজ্ঞেস করছেন না। আগামীতে চেষ্টা করবো আমি আমার ন্যায্য পাওনা থেকে বঞ্চিত না হই। আমি দেখেছি যারা ইউটিউবে গান করেন তারা গানটি ভুলভাবে পরিবেশন করেন তারা যদি আমার অনুমতি নিয়ে গাইতো তাহলে শুদ্ধ গানটি পরিবেশন করতে পারতো। আমার অনুরোধ বাবার কোনও গান গাওয়ার আগে একবার আমার সাথে যোগাযোগ করে নিবেন।

শাহ আব্দুল করিমের ছেলে শাহ নুর জালালের সভাপতিত্বে ও সংস্কৃতিকর্মী জয়ন্ত কুমার সরকারের পরিচালনায় অনুষ্ঠিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন, পিকেএসএফ’র চেয়ারম্যান স্বাধীনতা পুরস্কারপ্রাপ্ত ড. খালিকুজ্জামান।

সভায় বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন, একুশে পদকপ্রাপ্ত শিল্পী সুষমা দাশ, পিকেএসএফ এর উপ-ব্যবস্থাপক ড. মো. জসিম উদ্দিন, টিএমএসএস এর উপ-নির্বাহী পরিচালক মো. আব্দুল কাদের, সানোয়ারা ড্রিংক্স ও বেভারেজ এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক মুজিবুর রহমান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক ড. জাহেদা আহমদ প্রমুখ।

সাংবাদিকদের এক প্রশ্নে জবাবে পিকেএসএফ’র চেয়ারম্যান স্বাধীনতা পুরস্কারপ্রাপ্ত ড. খালিকুজ্জামান বলেছেন, শাহ আব্দুল করিম একজন উঁচু মানের মানুষ ছিলেন। তিনি সমাজকে এমন চোখে দেখেছেন যার বিশ্লেষণ করা খুব কঠিন হবে। তিনি তার গানের মাধ্যমে দারিদ্রের কথা বলেছেন, মানুষের কথা বলেছেন, অসাম্প্রদায়িক ও দেশপ্রেমের কথা বলে তিনি সমাজের প্রত্যেকটা বিষয়ে সুন্দর করে ফুটিয়ে তুলেছেন। তিনি একুশে পদক পেলেও একটি দুঃখ রয়ে গেছে। সেটি হলো তার জীবনদশায় যতটুকু স্বীকৃতি পাওয়ার কথা ছিলো তা কিন্তু হয়নি। বর্তমানে শাহ আব্দুল করিমকে সম্মাননা দেওয়া হচ্ছে সেটি যেন আরও সম্প্রসারিত করা হয়। তাকে রাষ্ট্রীয় পদকে ভূষিত করার একটি দাবি জানাই।

সানোয়ারা ড্রিংক্স ও বেভারেজ এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক মুজিবুর রহমান বলেন, আমি বাউল সম্রাট শাহ আব্দুল করিমের একজন ভক্ত। তার গান আমার অনেক ভালো লাগে। উনার ছেলে আমাকে বলেছিলো লোকউৎসব করবে কিন্তু সেই পরিমাণ অর্থ নেই। পরবর্তীতে আমি কোয়ালিটি আইসক্রিমের উদ্যোগে এবারের বাউল সম্রাট শাহ আব্দুল করিমের লোকউৎসব করার পরিকল্পনা করি এবং আগামীতেও আমাদের এই উদ্যোগটি ধারাবাহিকভাবে করার ইচ্ছা আছে। আমরা চাই বাউল সম্রাট শাহ আব্দুল করিমের গানগুলো পুরো বিশ্ব জুড়ে ছড়িয়ে পড়ুক।

অন্যদিকে বাউল সম্রাট শাহ আব্দুল করিমের লোকউৎসব দেখতে আসা সহকারী শিক্ষক দিপীকা দাস বলেন, আমরা ২০ জন এসেছি এই লোকউৎসব দেখতে, বাউল সম্রাটের গান শুনতে। তিনি তার গানের মাধ্যমে মানুষের জীবনের কথা তুলে ধরেছেন, তার গানগুলো শুনতে আমার খুব ভালো লাগে।

দুই দিনব্যাপী এই আয়োজনের প্রথম দিনে সন্ধ্যায় বাউল সম্রাট শাহ আব্দুল করিমের আগে কি সুন্দর দিন কাটাইতাম দলীয় অংশগ্রহণের মাধ্যমে শুরু হয় সাংস্কৃতিক আয়োজন। পরবর্তীতে একে একে বাউল শাহ আব্দুল করিমের গানের শিষ্য বাউল আব্দুল রহমানের কণ্ঠে জ্ঞানী-গুণী সবাই বলে কোথায় আছে মানবতা, দিরাই শিল্পকলা একাডেমির শিল্পীদের অংশগ্রহণে কে হিন্দু কে মুসলমান গানসহ বাউল শাহ আব্দুল করিমের বেশ কয়েকটি গান পরিবেশন করেন বাউল শিল্পীরা।

টুডে মিডিয়া গ্রুপ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
[email protected] ☎ ৮৮ ০১৭ ১৪৩৪ ৯৩৯৩
৭/ডি-১ (৭ম তলা), ব্লু ওয়াটার শপিং সিটি,
জিন্দাবাজার, সিলেট - ৩১০০, বাংলাদেশ।
Developed By - IT Lab Solutions Ltd.