Sylhet Today 24 PRINT

করোনাভাইরাস সংক্রমণের ঝুঁকিতে হাওরাঞ্চলের নিম্ন আয়ের মানুষ

তাহিরপুর প্রতিনিধি |  ২৪ মার্চ, ২০২০

হাওর বেষ্টিত সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলায় করোনাভাইরাসে সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে রয়েছে শ্রমজীবী, নিম্ন আয়ের মানুষজন। কারণ তারা দিনে আনে দিনে খায়। তাদেরকে সকাল থেকে নদীতে না হয় বিভিন্ন বাজারে কাজ করতে হয়। পেশার প্রয়োজনেই ছুটতে হয় দিনরাত। আর তাদের মাঝে অনেকেই জানে না এই ভাইরাস সম্পর্কে। করোনাভাইরাস প্রতিরোধে প্রয়োজনীয় সুরক্ষা পণ্যসমূহও তাদের নাগালের বাইরে। তাই স্যানিটাইজার, মাস্ক, সাবান কিনেছেন না অনেকে। তাদের নেই মানুষের সংস্পর্শ এড়িয়ে চলার সুযোগ।

ফলে তাদের মাধ্যমে করোনাভাইরাস দ্রুত ছড়িয়ে পড়ারও বাড়তি ঝুঁকি রয়েছে বলে মনে করেন স্থানীয় সচেতনমহল।

তারা বলছেন, পরিবহন ও দিন মজুর শ্রমিকরা প্রতিদিন অসংখ্য মানুষের সংস্পর্শে আসেন। তাই তাদের মাধ্যমে ভাইরাসটি দ্রুত অন্যদের মধ্যেও ছড়িয়ে পড়তে পারে। তাই শ্রমজীবী ও নিম্ন আয়ের মানুষদের বাড়তি সুরক্ষা নিশ্চিত কররা খুবই প্রয়োজন।

নভেল করোনাভাইরাসে যখন গোটা বিশ্ব আতঙ্কিত,তখন তা নিয়ে কোনো উদ্বেগই দেখা গেল না রনজি মিয়ার,তার ভাবনার বিষয় রিকশা যাত্রী কম হওয়া নিয়ে।

দিনমজুর রুমান উদ্দিন বলেন, আয় নেই, এখনই চলতে পারছি না। সামনে যে কি হবে বুঝতে পারছি না। প্রতিদিন কাজের খোঁজে বাহির হতে হয়। ছেলে-মেয়ে-বউ নিয়া প্রায় সময় না খেয়ে থাকতে হয়। এসব কষ্ট বলে বুঝানো যাবে না। আমরা খেতে পাড়ি না এর মধ্যে ওইসব জিনিস কি ভাবে ক্রয় করবো। ময়লার মধ্যে দিনরাত থাকি। আমাদের মতো মানুষদের সহযোগিতা করা জরুরী।

ভ্যান চালক মো. আলমগীর হোসেন বলেন, করোনাভাইরাসে মানুষ আক্রান্তের খবর শুনলে হাত-পা ঠাণ্ডা হয়ে যায়। দিন আনি দিন খাই আমার হাতে প্রায় সময় বাজার করার টাকাও থাকেনা। এর মধ্যে কি ভাবে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন থাকার জন্য মাস্ক, হাত ধুয়ার সাবান কিনবো।

পাথর শ্রমিক নেসার উদ্দিন ও বালি শ্রমিক সাজিদুর বলেন, আমরা গরীব মানুষ। আমাদের প্রতিদিন কাজ করতে হয়। কাজ না করলে খাবার পাব কই ? আমার সংসার আমাকেই চালাতে হয়। বেশ কয়েক দিন ধরেই করোনাভাইরাসের নাম শুনছি। এই ভাইরাস থেকে বাঁচার জন্য মাস্ক ব্যবহার করতে হয়। কিন্তু যা রোজগার করি তা দিয়ে হয় না।

ঠেলাগাড়ি চালক তাপস বলেন, মানুষের কাছ থেকে শুনে আসছি গত কিছুদিন ধরে করোনাভাইরাস দেশের মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে পড়েছে। সরকার তো ইচ্ছে করলেই আমার মতো বিপদজনক অবস্থায় যারা কাজ করছি তাদের মাস্ক, সাবান, দিতে পারে। ভাইরাস প্রতিরোধে এসব জিনিস শ্রমজীবী মানুষের মাঝে বিনামূল্যে বিতরণ করা প্রয়োজন।

রিকশা শ্রমিক শফিক মিয়া বলেন, করোনাভাইরাসের কথা মানুষের মুখ থেকে শুনে ভয় লাগে কিন্তু রিকশা চালানো তো আর বন্ধ করে দিতে পারব না। বন্ধ করে দিলে না খেয়ে থাকতে হবে। আমার মতো রিকশাচালকদের নিরাপত্তা নাই।

তাহিরপুর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান করুণা সিন্দু চৌধুরী বাবুল বলেন, সবাইকে করোনাভাইরাস প্রতিরোধে কাজ করতে হবে। সেই অনুযায়ী আমরা প্রচার প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছি। সবাইকে নিজ নিজ অবস্থান থেকে করোনাভাইরাস প্রতিরোধের নির্দেশনা মানলে, কাজ করলে ও সর্তক থাকলে এই ভাইরাস প্রতিরোধ করা সম্ভব হবে। উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে হাওরাঞ্চলের মানুষজনের জন্য প্রয়োজনীয় স্যানিটাইজার, মাস্ক বিতরণের জন্য উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। খুব শ্রীঘই তা বিতরণ করা হবে।

 

টুডে মিডিয়া গ্রুপ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
[email protected] ☎ ৮৮ ০১৭ ১৪৩৪ ৯৩৯৩
৭/ডি-১ (৭ম তলা), ব্লু ওয়াটার শপিং সিটি,
জিন্দাবাজার, সিলেট - ৩১০০, বাংলাদেশ।
Developed By - IT Lab Solutions Ltd.