বড়লেখা প্রতিনিধি | ০৮ এপ্রিল, ২০২০
করোনাভাইরাস সংক্রমণ ঠেকাতে ২৬ মার্চ থেকে দেশে সাধারণ ছুটি চলছে। জরুরী প্রয়োজন ছাড়া ঘর থেকে বের না হতে সবাইকে বলা হচ্ছে। প্রশাসন, সেনাবাহিনী ও থানা পুলিশ যৌথ প্রচারণা চালাচ্ছে। স্বেচ্ছাশ্রমে কেউ কেউ গ্রামে গ্রামে গিয়ে মানুষকে বুঝাচ্ছেন। কিন্তু বড়লেখায় কোনো উদ্যোগেই কাজ হচ্ছে না। বরং অঘোষিত লকডাউনের সুযোগে গ্রামে গ্রামে ও শহরের মহল্লায় বেড়েছে আড্ডা। দল বেঁধে ঘুরাঘুরি। বেড়েছে ফুটবল ও অন্য খেলাধুলা। এ চিত্র এখন মৌলভীবাজারের বড়লেখার। অনেক বাজারেও নির্দেশনা অমান্য করে খোলা হয় দোকান।
সবচেয়ে খারাপ অবস্থা বড়লেখার গ্রাম এলাকাগুলোর। অনেক এলাকায় চায়ের দোকান খোলা থাকে রাত পর্যন্ত। চলে আড্ডা। প্রায় ১২ দিন ধরে প্রশাসনের নানা রকম উদ্যোগেও বন্ধ করা যাচ্ছে না অকারণে ঘোরাফেরা, আড্ডা-খেলাধুলা। এ পরিস্থিতিতে প্রশাসনের পাশাপাশি স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের এগিয়ে আসার আহবান করছেন সচেতন মানুষ।
গত কয়েকদিন ধরে সরেজমিনে উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে অকারণে দল বেঁধে ঘোরাফেরা, খেলাধুলা করতে দেখা গেছে। অকারণে মানুষের জটলা ও আড্ডাবাজি আতঙ্ক বাড়াচ্ছে এলাকার বাসিন্দাদের। এক জায়গায় অনেকে একসঙ্গে হয়ে ঘরে না থেকে ও সামাজিক দূরত্ব বজায় না রাখায় এ থেকে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ এলাকার অন্যদের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা করেছেন সচেতন নাগরিকরা। এই জন্য মূল সড়কের পাশাপাশি গ্রাম এলাকায় সেনাবাহিনী ও পুলিশের টহল জোরদারের ওপর গুরুত্ব দিয়েছেন সচেতন মানুষ।
মঙ্গলবার (৭ এপ্রিল) শহরের অদূরে হাটবন্দ, মহবন্দ, সদর ইউপি’র মহদিকোনা, তালিমপুর ইউপি’র বাহারপুর, পৌরসভা এলাকার গাজিটেকা বাসতলা, দক্ষিণ শাহবাজপুর ইউনিয়নের মোহাম্মদ নগর, ঘোলষা, সদর ইউনিয়নের কেছরিগুল গ্রামেও তরুণদের খেলাধুলা করতে দেখা গেছে।
অকারণে ঘোরাফেরার কারণে গত কয়েকদিনে ভ্রাম্যমাণ আদালতে ৪৫ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের জরিমানা হয়েছে। কিন্তু এই জরিমানায়ও ঠেকানো যাচ্ছে না অকারণে ঘোরাফেরা।
সচেতনতা মূলক প্রচারণা, অনুরোধ ও জরিমানা করেও মানুষের অকারণে ঘোরাফেরা বন্ধ না হওয়ায় হতাশা ব্যক্ত করে নিজের ব্যক্তিগত ফেসবুক আইডিতে গত সোমবার (৬ এপ্রিল) রাতে পৌনে দশটার দিকে একটি পোস্ট করেন বড়লেখা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট শামীম আল ইমরান। তিনি লেখেন- ‘বিশ্বাস করেন বাইরে থাকতে কলিজা কাপে। আমি মানুষটা একটু বেশিই ভীতু। বাইরে যতক্ষণ থাকি আপনজনও অস্থির হয়ে থাকে। কিন্তু চাকুরী যেহেতু করি মন না চাইলে ও বের হতে হয়। কিন্তু এত সচেতনতামূলক কার্যক্রম, সোনারে ময়নারে করে বুঝানো, সমানে অর্থদণ্ড, পায়ে পায়ে যমদূতের বাড়ির কাছে হাজির হওয়া কিছুই আপনাদের বিনা কারণে বাড়ির বাইরে আসা আটকাতে পারছেনা। আর কি করলে আপনাদের আটকানো যাবে তাও বুঝতেছিনা। হতাশ লাগে মাঝে মাঝে। দয়া করে ঘরে থাকুন। নিজের প্রতি মায়া না থাকুক আপনার পরিবার, এলাকা বা দেশের মংগলের কথা চিন্তা করে ঘরে থাকুন।
বড়লেখা উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্প না কর্মকর্তা ডা. রত্নদীপ বিশ্বাস বলেন, ‘আইইডিসিআর এর মতে বর্তমানে কমিউনিটিতে সংক্রমণ মৃদুহারে ছড়িয়ে পড়েছে। এমতাবস্থায় সংক্রমণ মুক্ত থাকতে ঘরে থাকা ছাড়া আসলে আর কোনো উপায় নেই। কেউ ঘর থেকে বের হওয়ামাত্রই সংক্রমণের ঝুঁকিতে পড়ে যাবে। কারণ আমরা কেউ জানিনা আমাদের পাশের ব্যক্তিটি সংক্রমিত কিনা। সুতরাং অত্যন্ত প্রয়োজনীয় কোনো কাজ ছাড়া খেলাধুলা কিংবা ঘুরাঘুরি করার জন্য ঘরের বাইরে না বেরুনোর জন্য আমি বড়লেখার মানুষকে অনুরোধ করব। আসুন আমরা সকলে মিলে বড়লেখাকে করোনা সংক্রমণ মুক্ত রাখি।’