সুমাইয়া যিনাত | ১২ মার্চ, ২০২৪
‘নীল পাখিরা বনে যায়, গুনগুনিয়ে গান গায়’- বাক্যটি আমাদের শিক্ষাসফরের ব্যানার থেকে নেওয়া। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের টানে নীল পাখিদের ছুটে চলা চা-কন্যা মৌলভীবাজার জেলার কমলগঞ্জের পাত্রখলা চা বাগান ও মাধবপুর লেকে। ৯ মার্চ ২০২৪ খ্রিষ্টাব্দে সিলেটের ঐতিহ্যবাহী বিদ্যাপীঠ ব্লু বার্ড হাইস্কুল এন্ড কলেজের কলেজ শাখার শিক্ষা-সফর অনুষ্ঠিত হয়েছে।
শিক্ষা-সফরে যাব, এজন্য খুবই আনন্দিত ছিলাম। স্যার-ম্যাডামদের নির্দেশনা মতো শিক্ষা সফরের দিন সকাল সকাল ক্যাম্পাসে চলে যাই। স্মারক টিশার্ট ও কলম সংগ্রহ করে বাসে করে সকাল ৯.৩০টায় রওনা হই পাত্রখলা চা বাগানের উদ্দেশ্যে। আমাদের বাসগুলোর নামকরণ করা হয়েছিলো মানসী, বলাকা, মালতি, বনলতা, ঝরাপালক প্রভৃতি চমৎকারসব নামে।
বাস চলতে চলতেই সকালের নাস্তা সেরে নিই আমরা। নাচ-গানের মধ্য দিয়েই এগুতে থেকে বাসগুলো। স্যাররাও যোগ দেন আমাদের আনন্দে। কুলাউড়া পৌঁছালে ঘন সবুজ চাবাগানের মাঝ দিয়ে আঁকাবাঁকা রাস্তা দেখে সবাই মুগ্ধ হয়ে গিয়েছিলাম। দুপুর ১টায় এসে আমরা পৌঁছাই পাত্রখলা চাবাগানের বাংলোয়। আমরা তখনো জানতাম না কী বিস্ময় অপেক্ষা করছিল আমাদের জন্য!
চারদিকে চাবাগান, মাঝখানে বাংলো ও সুবিশাল সবুজ মাঠ দেখে চোখ জুড়িয়ে যায়। বাংলোর সামনে বিভিন্ন ধরণের ফুলের গাছ শোভা বাড়িয়েছে বহুগুণ। কোলাহলহীন পরিবেশে পাখির কিচির-মিচির, বাতাসের শোঁ শোঁ শব্দ মন ভরিয়ে দেয়। আমাদের একজন শিক্ষক বলেছিলেন, ১৯৭১ সালে বীরশ্রেষ্ঠ সিপাহী হামিদুর রহমান শহিদ হন পাত্রখলা চাবাগানে। তথ্যটি শুনে আমার গা শিউরে উঠছিল।
আমাদের কয়েকজন শ্রদ্ধেয় শিক্ষক, বেশ কয়েকজন কর্মীভাইদের নিয়ে আগের দিনই বাংলোয় চলে যান। দুপুরের খাবারের ব্যবস্থা তারাই করে রেখেছিলেন। ফ্রেস হয়ে দুপুরের খাবার শেষে একটু বিশ্রাম নিলাম আমরা। তারপর শুরু হলো সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। অনেকেই নাচ-গানে অংশ নেয়; বিজয়ীদেরকে পুরস্কার প্রদান করা হয়। স্যর-ম্যাডামদেরকেও পুরস্কৃত করা হয়।
এসব আয়োজন শেষে আমরা মাধবপুর লেকের উদ্দেশ্যে রওনা হই। মাধবপুর লেক পাত্রখলা চাবাগানেই অবস্থিত। সবুজ সারি সারি চা-গাছ আর পাহাড়বেষ্ঠিত এ লেকের সৌন্দর্য দেখে যে কেউ মুগ্ধ হয়ে যাবে। অপরাহ্ণের সূর্যকিরণ যখন পাহাড়ের চূড়ার উপর দিয়ে লেকের পানিতে মিশেছিল- তখন এক অপরূপ দৃশ্য তৈরি করেছিল। এ লেকের বিশেষত্ব হলো বিরল প্রজাতির শাপলা ফুল।
পাহাড়ে উঠার জন্য অগ্রসর হতেই দেখি দুজন নারী চা-কর্মী গাছের নিচে বসে বিশ্রাম নিচ্ছেন। তাঁদের কাছে আসতেই চোখ পড়ল তাঁদের হাতে থাকা চা-পাতা ভর্তার দিকে। আনন্দে ‘চা-পাতা ভর্তা’ বলে লাফাতে লাগলাম। তাদের একজন জিগ্যেস করল, ‘খাবি?’ ‘হ্যাঁ, খাবো’, আমাদের সানন্দ উত্তর। আমরা দুই বান্ধবী ও আমাদের একজন ম্যাডাম চা-পাতা ভর্তা খেলাম। এই প্রথম চাপাতা ভর্তা খাওয়ার স্বাদ পেয়েছি। কী যে সুস্বাদ- বলে বোঝানো যাবে না। চা-কর্মী দুজন তাঁদের বাঁশের টুপি খুলে দিলেন ছবি তোলার জন্য। তাঁদের আন্তরিকতা আমাদের মুগ্ধ করল।
এবার ফেরার পালা। কলেজ গেইটে ফিরতে ফিরতে রাত সড়ে ৯টা। সবাই মিলে খুব আনন্দে কাটালাম দিনটা। আবার কবে আসবে এমন ক্ষণ, যেদিন নীল পাখিদের কলকাকলিতে মুখরিত হবে সবুজ বন।