Sylhet Today 24 PRINT

বাড়ির পাশে প্রাচীন নগর

রাজীব রাসেল  |  ০৭ জুলাই, ২০১৬

ঘুরাফেরার এক গ্রুপে দুটো অসম্ভব সুন্দর ছবি পোস্ট করেছিলেন ছবিয়াল-লেখক ফারুখ আহমেদ। ছবিতে দেখা গেলো- মাঝে মসৃণ পিচঢালা পথের দু'পাশে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে লালচে পুরনো আমলের দালান। ৬/৭ শত বছর বা তারও আগের রাজা-বাদশাহদের তৈরি সেসব প্রাচীন ভবনের ছবি দেখেই নেশায় পেয়েছিলো কাছে যাবার। ফারুখ ভাইয়ের পোস্ট করা ছবির নিচে লিখে দিয়েছিলাম- যেতে চাই!

সেই তীব্র চাওয়াটা বাস্তবে রূপ নিলো সেই ফারুখ ভাইয়েরই সৌজন্যে। তাঁর নেতৃত্বেই আমরা ৪ জনের দল এক মেঘলা দিনে ঢাকা থেকে যাত্রা করলাম সেই মায়াময় প্রাচীন স্থাপত্য অঞ্চল পানাম নগরীর উদ্দেশ্যে।

মিনিট চল্লিশের বাসযাত্রা শেষে আমাদের পানাম পৌঁছতে দুপুর হয়ে যায়। সোনারগাঁতে ছোট্র এক রেস্তোরাঁয় দুপুরের খাবার সেরে ব্যাটারিচালিত ত্রিচক্রযানে চেপে আমরা দ্রুত রওনা হই পানামের পথে।পানামের প্রবেশমুখে পা রাখতেই মুখোমুখি হই বিপুল বিস্ময়ের। এ যেনো অনেক শতাব্দী পেছনে চলে এসেছি আমরা! চোখ বড় বড় করে দেখতে থাকি সেই অপার বিস্ময়- লালচে ইটের বড় দালানকোঠা, প্রাচীন আমলের মোটা শিকের জানালা, অপরূপ সব কারুকার্যময় দরজা, বারান্দা, রেলিং। কোথাও কোথাও লেখা আছে তখনকার খোদাই করা নির্মাণ সন আর মালিকানা তথ্য।

প্রায় সব দালানের ভগ্নদশা। ভেঙ্গে পড়েছে দরজা-জানালার কাঠ, বেরিয়ে গেছে ইট, দেয়ালের এখানে-সেখানে তৈরি হয়েছে গর্ত। সেইসব গর্তে আবার চড়ুই সম্প্রদায়ের নিশ্চিন্ত আবাসন। মুগ্ধতা নিয়ে আমরা দেখি, কাছে যাই, স্পর্শ করি, ইতিহাস বন্দী করে রাখি ক্যামেরায়। ঘুরে দেখি ভবনের পেছনে ঐতিহাসিক পুকুর, কুয়ো, গোসলখানা, রান্নার স্থান। তৎকালীন "নাচঘর" দেখবো বলে সিঁড়ি বেয়ে উঠে যাই এক ভবনের দোতলায়। সে বড় অভূতপূর্ব দৃশ্য! রঙ-বেরঙের নকশা আর কারুকার্য খচিত দেয়াল, স্তম্ভ, জানালা ...। আলো-আঁধারিতে গা ছমছম করে ওঠে, অদ্ভুত শিহরন বয়ে যায় মনে! এ যেনো ঐতিহাসিক সিনেমায় দেখা কোন জলসা ঘরের কথাই মনে করিয়ে দেয় বারবার!

সন্ধ্যা নামার মুখে আমরাও নেমে আসি ভবন থেকে। চোখে ঘোর লাগা বিস্ময় নিয়েই বিদায় জানাই রহস্যঘেরা, মায়াময় পানামকে। ফিরতে থাকি কাঠখোট্রা, একঘেয়ে আধুনিক নগরীর দিকে ...

যেভাবে যাবেনঃ ব্যক্তিগত গাড়ি নিয়ে অথবা ঢাকার গুলিস্তান থেকে দোয়েল, বিআরটিসি বা অন্য বাসে উঠে সহজেই চলে যাওয়া যায় সোনারগাঁ। ভাড়া পড়বে ৪৫-৫০ টাকা। আধঘন্টার মধ্যেই পৌঁছে যাবেন, তবে পথে ট্রাফিক জ্যাম হলে ভিন্ন কথা। সোনারগাঁ নেমে সিএনজি অটোরিকশা, ব্যাটারি চালিত ইজিবাইক বা রিকশা- যেভাবে ইচ্ছে ১০/১৫ মিনিটের মধ্যেই পৌঁছে যেতে পারেন পানামের প্রবেশমুখে। ভাড়া পড়বে সিএনজি বা ইজিবাইকে ৮০-১০০ টাকা, রিকশায় ৩০ টাকা। তারপর পায়ে হেঁটেই ঘুরে বেড়াবেন পুরনো রাজ্যজুড়ে।

ঢাকাবাসী একদিন সময় করে পানাম ঘুরে আসতে পারেন সহজেই।

 

ছবিঃ ফারুখ আহমেদ

টুডে মিডিয়া গ্রুপ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
[email protected] ☎ ৮৮ ০১৭ ১৪৩৪ ৯৩৯৩
৭/ডি-১ (৭ম তলা), ব্লু ওয়াটার শপিং সিটি,
জিন্দাবাজার, সিলেট - ৩১০০, বাংলাদেশ।
Developed By - IT Lab Solutions Ltd.