Sylhet Today 24 PRINT

ফাগুনের আগুন লেগেছে যেখানে

তাহিরপুরের শিমুল বাগান

জাহিদুল ইসলাম সবুজ |  ১৮ ফেব্রুয়ারী, ২০১৭

নদীর নাম যাদুকাটা। এর তীর ঘেঁষে ভারতীয় সীমান্ত লাগোয়া টিলাভূমি। নাম লাউরেরগড়। সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলার লাউড়েরগড়ের বিশাল শিমুল বাগান হয়ে ওঠেছে পর্যটকদের নতুন আকর্ষন।

বসন্তে শিমুলের রক্তরাঙা সৌন্দর্য দেখতে দূর্গম পথ পাড়ি দিয়ে পর্যটকরা হাজির হচ্ছেন লাউড়ের গড়ে।

লাউড়েরঘর এলাকায় যাদুকাটা নদীর তীর ঘেঁষে বিস্তীর্ণ এক নান্দনিক সৌন্দর্যের বাগান। পুরো এলাকাজুড়ে টকটকে লাল শিমুল ফুল গাইছ বসন্তের জয়গান।

একপাশে মরুপ্রায় যাদুকাটা পেরিয়ে বারেক টিলার নৈসর্গিক সৌন্দর্য আর আরেক পাশে লাল ফুলের এই বাগান যে কাউকে আকৃষ্ট করবে।  ডালে ডালে খুনসুটিতে ব্যস্ত পাখিরা আর বাসন্তি হাওয়ায় শিমুলের দোল খাওয়া দেখে হৃদয় জুড়িয়ে যায়। এ যেনো নতুন প্রাণের স্পন্দন প্রকৃতিতে।

বসন্তের দুপুরে ধূসর ঘাসে মেলে থাকা শিমুলের এমন রক্তিম আভা মন রাঙায় তো বটেই, ঘুম ভাঙায় সৌখিন হৃদয়েরও। আর জেগে ওঠে আবেগমাখা সুন্দর স্বপ্নগুলো।

এ যেনো কল্পনার রঙে সাজানো এক প্রান্তর। ওপারে ভারতের মেঘালয় পাহাড়, মাঝে যাদুকাটা নদী আর এপাড়ে শিমুল বন। সব মিলে মিশে গড়ে তুলেছে প্রকৃতির এক অনবদ্য কাব্য।

২০০২ সালে টাঙ্গুয়ার হাওর তীরবর্তী লাউড়ের গড় গ্রামে বাণিজ্যিক এই শিমুলের বাগান গড়ে তোলেন বাদাঘাট (উত্তর) ইউপি'র সাবেক চেয়ারম্যান জয়নাল আবেদীন। তার আর পরিচর্যায় বেড়ে ওঠে দেশের সবচেয়ে বড় শিমুল বাগান।

২ হাজার ৪০০ শতক জমিতে এই শিমুল বাগান গড়ে তোলেন জয়নাল আবেদীন। ফাগুনের শুরুতেই হাজার দু'য়েক গাছে যখন একই সাথে ফুল ফোটে তখন অসাধারণ এক দৃশ্যের অবতারণা পর্যটকদের আকৃষ্ট করে। শিমুল বনের রক্তরাঙ্গা সৌন্দর্যের দেখা মেলে বছরে এই একটি ঋতুতেই। মধু আহরণের টানে ছুটে আসে হরেক রকমের পাখপাখালি।

বাগানমালিক জয়নাল আবেদীন প্রয়াত হয়েছেন, কিন্তু রয়ে গেছে তার শিমুল বাগান। এখন তার বড় ছেলে সাবেক চেয়ারম্যান আফতাব উদ্দিনের তত্বাবধানে শিমুল গাছের ফাঁকে ফাঁকে লাগানো হয়েছে লেবু গাছ, এতে বাগানের সৌন্দর্য বৃদ্ধি পেয়েছে কয়েকগুণ।

নজড়কাড়া এই সৌন্দর্য উপভোগ করতে এই বসন্তে ঘুরে আসতে পারেন হাছন রাজা-বাউল আব্দুল করিমের দেশে।

বাংলাদেশের যেকোন প্রান্ত থেকে সুনামগঞ্জ জেলা শহরে আসতে বেগ পেতে হবে না। সড়ক পথে প্রায় সবগুলো পরিবহনেরই বাস চালু আছে এখন। রেলপথে আসতে হলে প্রথমে সিলেট আসতে হবে, তারপর সিলেট থেকে মাইক্রো বা বাসে সুনামগঞ্জ।

সুনামগঞ্জ নেমে নতুন ব্রীজের গোড়াতেই মোটরবাইক পাওয়া যাবে। মোটর বাইক ছাড়া এ রাস্তায় অন্য কোনো বাহন পাওয়া যায় না তেমন। তবে রিজার্ভ করে নিলে প্রাইভেটকার বা মাইক্রো পাওয়া যায়। মোটর বাইকই নিরাপদ এবং আরামদায়ক, কারণ এই সড়কের অবস্থা খুবই খারাপ। মোটর বাইকে বারেকটিলা খেয়াঘাট (টেকেরঘাট) পর্যন্ত প্রতিজনের ভাড়া পড়বে ১০০ টাকা করে। দামাদামি করলে কিছু কমেও পাওয়া সম্ভব!

খেয়াঘাট থেকে নৌকায় যাদুকাটা পার হতে হবে, ভাড়া পড়বে জনপ্রতি ৫ টাকা। নৌকা থেকে নেমে টিলার রাস্তা ধরে কিছুটা ওপরে উঠলেই একটি ছোট বাজার। চায়ের দোকান আছে কিছু। বাজারের বাম দিকে কাঁচা রাস্তা ধরে গেলেই পৌঁছে যাবেন অপরুপ সৌন্দর্যমণ্ডিত শিমুলের বাগানে।

এখানে থাকার সুবিধা তেমন নেই বললেই চলে। তবুও একান্তই থাকতে চাইলে বড়ছড়া বাজারে একটি রেস্ট হাউজ আছে যেখানে ২০০-৪০০ টাকায় থাকা যায়। বারেক টিলা পাড় হয়েই বড়ছড়া বাজার। চাইলে টেকেরঘাট থেকে হেঁটেও আসতে পারবেন বড়ছড়া বাজারে। এছাড়াও লেকের পাশে বন্ধ হয়ে যাওয়া একটি চুনাপাথরের কারখানা আছে তার গেস্ট হাউজেও থাকতে পারবেন।

 

আলোকচিত্র ঃ জাহিদুল ইসলাম সবুজ

টুডে মিডিয়া গ্রুপ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
[email protected] ☎ ৮৮ ০১৭ ১৪৩৪ ৯৩৯৩
৭/ডি-১ (৭ম তলা), ব্লু ওয়াটার শপিং সিটি,
জিন্দাবাজার, সিলেট - ৩১০০, বাংলাদেশ।
Developed By - IT Lab Solutions Ltd.