Sylhet Today 24 PRINT

‘লালঘাট ঝর্ণাধারা’: প্রকৃতিপ্রেমীদের নতুন ঠিকানা

ছবি ও প্রতিবেদন হাবিব সরোয়ার আজাদ |  ৩০ জুন, ২০১৭

আদিবাসী পল্লীঘেঁষা মেঘালয় পাহাড় থেকে প্রবাহিত সুনামগঞ্জ সীমান্তের ‘লালঘাট ঝর্ণাধারা’ প্রকৃতিপ্রেমী ভ্রমণ পিপাসু ও পর্যটকদের নিকট এখন নতুন ঠিকানা হয়ে ওঠছে। দেশ বিদেশের পর্যটকদের নিকট কয়েক যুগ ধরে সুনামগঞ্জের তাহিরপুরের ১৭টি দৃষ্টিনন্দন দর্শনীয় স্থান পরিচিতি পেলেও তাদের দৃষ্টির অগোচরেই রয়ে গিয়েছিলো লালঘাট আদিবাসী পল্লীর ‘লালঘাট ঝর্ণাধারা’।

সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, সুনামগঞ্জ জেলার হাওর সীমান্তঘেঁষা প্রকৃতির স্বর্গরাজ্য খ্যাত তাহিরপুর উপজেলার লাউড়েরগড়ে হযরত শাহ জালাল (র.) এর ৩৬০ আউলিয়ার অন্যতম সঙ্গী ইসলাম প্রচারক হযরত শাহ আরেফিন (র.)’র আস্তানা, সীমান্তনদী জাদুকাঁটা, বারেকটিলা, হাজি জয়নাল আবেদীন গার্ডেন, শ্রী অদ্বৈত আচার্য প্রভুর রাজারগাঁওর আখড়া বাড়ি পণথীর্থ ধাম, গড়কাটি ইসকন মন্দির, কড়ইগড়া, রাজাই আদিবাসী পল্লী, টেকেরঘাট চুনাপাথর খনি প্রকল্প, প্রকল্পঘেষা শহীদ সিরাজ বীর উত্তম লেক, টেকেরঘাট চুনাপাথর খনি প্রকল্প উচ্চ বিদ্যালয় ঘেঁষা ঝর্ণা ও টিলা, লাকমা ছড়া, বড়ছড়ার ভাঙারঘাট চুনাপাথর কোয়ারী, বড়ছড়া, চারাগাঁও, বাগলী স্থল শুল্ক ষ্টেশন ও ওয়ার্ল্ড হেরিটেইজ রামসার প্রকল্পভুক্ত গাছ মাছ অতিথি পাখির অভয়াশ্রম দেশের দ্বিতীয় সুন্দরবন-খ্যাত টাঙুয়ার হাওর দর্শনীয় স্থানগুলো দেশ বিদেশের ভ্রমণ পিপাসু প্রকৃতি প্রেমী পর্যটকদের নিকট কয়েক যুগ ধরে পরিচিত। এবার এর সঙ্গে যুক্ত হলো অন্য নাম।

তাহিরপুর উপজেলার শ্রী উত্তর ইউনিয়নের বালিয়াঘাট-চারাগাঁও সীমান্তের মধ্যবর্তী লালঘাট আদিবাসী পল্লীঘেঁষা মেঘালয় পাহাড় থেকে প্রবাহিত হয়ে নেমে আসা ‘লালঘাট ঝর্ণাধারার’ অবস্থান জেলা শহর সুনামগঞ্জ থেকে প্রায় ৩৫ কিলোমিটার উত্তর-পশ্চিমে তাহিরপুর উপজেলা সদর থেকে ১৫ কিলোমিটার (নৌ-পথ) এবং ২২ কিলোমিটার (সড়কপথ) উপজেলার সোজা উত্তরমুখী শ্রীপুর উত্তর ইউনিয়নের সীমান্ত সড়কের লাগোয়া আদিবাসী পল্লী।

সীমান্তের ১১৯৬ মেইন পিলারের ভারত-বাংলাদেশ জিরো পয়েন্ট দিয়ে ভারতের মেঘালয় পাহাড়ের  সবুজের বুক চিরে প্রবাহিত হয়ে এসে ‘লালঘাট ঝর্ণাধারা’ স্বচ্ছ সাদা পানি নামছে এপারের পাহাড়ি ছড়ার মুখে। পাহাড়ি ছড়ার পানির স্রোতধারা অবিরাম গতিতে নেমে এপারের লালঘাট গ্রামের পশ্চিম দিকের আঁকাবাঁকা ছড়া হয়ে মিশে যাচ্ছে সংসার হাওরের মিঠাপানির সাথে।

লালঘাট ঝর্ণা ধারার পূর্বঘেঁষা আদিবাসী পল্লীর হাজং সম্প্রদায়ের প্রায় ৩০ থেকে ৩৫ টি ছোট ছোট পরিবারের বসবাস। এ গ্রামটিকে বলা হয় সবুজের গ্রাম। বসতির চারপাশে রয়েছে পাহাড়ি বনজ ফলজ ও ফুলের গাছগাছালি।

আদিবাসী পল্লী হলেও লালঘাটে রয়েছে দেড় শতাধিক স্থানীয় বাঙালি পরিবারের বসবাস। এখানে বাঙালি ও আদিবাসী দু’ধর্মের লোকজনের সহাবস্থান অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশের আরেক খণ্ডচিত্র দেখা যাবে। উভয় ধর্মের উভয় সম্প্রদায়ের লোকজনই খুবই অতিথি পরায়ণ। গ্রামবাসীর সহযোগিতা নিয়ে দেখা যাবে প্রকৃতির আরেক দৃষ্টিনন্দন ‘লালঘাট ঝর্ণাধারা’ ও এর আশেপাশে থাকা সীমান্ত প্রকৃতির অপরূপ রূপ।  

গ্রামের পাশে এপারে দাঁড়িয়ে দেখা যাবে ভারতীয় সীমানায় থাকা চুনাপাথরের পাহাড়, ভারতীয় লালঘাট বিএসএফ জোয়ানদের ক্যাম্প, মাইলের ও পর মাইল জুড়ে থাকা কাঁটাতারের প্রতিরক্ষা বেড়া, মেঘালয় রাজ্যের শিলং যাতায়াতের জন্য মহাসড়কে চলাচলকারী চারচাকার বাহনের ছোট-বড় বহর।

দেশ বিদেশের যে সব পর্যটক ও ভ্রমণ পিপাসুরা জেলা সদর কিংবা তাহিরপুর উপজেলা সদর হয়ে প্রকৃতি দর্শনে জাদুকাঁটা, বারেকটিলা ও টেকেরঘাট চুনাপাথর খনি প্রকল্প, শহীদ সিরাজ বীর উত্তম লেক ও লাকমা ছাড়া বেড়াতে আসেন তারা টেকেরঘাট থেকে মাত্র ৩ কিলোমিটার পথ পশ্চিমে এগিয়ে গেলেই দেখা পাচ্ছেন লালঘাট আদিবাসী পল্লীর ‘লালঘাট ঝর্ণাধারা’।

উপজেলার লালঘাট আদিবাসী পল্লীর নারী নেত্রী শ্রী মতি অনুরাধা দেবী হাজং ও লালঘাট গ্রামের হাসান আলী জানান, কয়েক যুগ ধরে লোকচক্ষুর আড়ালেই ছিল ‘লালঘাট ঝর্ণাধারা’র অনন্য রূপ।

সুনামগঞ্জ জেলা পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আলহাজ্ব আবুল হোসেন খান এবং শ্রীপুর উত্তর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আলহাজ্ব খসরুল আলম খসরু বলেন, সরকারিভাবে অবকাঠামোগত সুবিধা সৃষ্টি হলে সিলেটের মাধবকুণ্ড জলপ্রপাত দেখতে যেমন দেশ বিদেশের লোকজন প্রতিনিয়ত জড়ো হন ঠিক সেভাবেই ‘লালঘাট ঝর্ণাধারা’ দেখতেও পর্যটক ভ্রমণ পিপাসুরা দিনে দিনে ভিড় জমাবেন এতে স্থানীয় সুবিধাবঞ্চিত পরিবারের লোকজনের মধ্যে পর্যটকবান্ধব নতুন এক কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হবে।

সুনামগঞ্জ-২৮ বর্ডারগার্ড ব্যাটালিয়নের বিজিবির অধিনায়ক লে. কর্নেল মো. নাসির উদ্দিন আহমেদ পিএসসি বললেন, লালঘাট ঝর্ণাধারা দৃষ্টিনন্দন। এর অবস্থান ভারত- বাংলাদেশ জিরো পয়েন্টে থাকায়  সীমান্তের দায়িত্বপূর্ণ চারাগাঁও বিওপির বিজিবিকে অবহিত করে বাংলাদেশ সীমানায় অবস্থান করে যে কোন দর্শনার্থী কিংবা পর্যটক সেখানে যেতে কোন বাধা নেই, কিন্তু সতর্ক থাকতে হবে কোন অবস্থানেই কেউ যেন ভারতীয় সীমানায় অনুপ্রবেশ না করেন।

টুডে মিডিয়া গ্রুপ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
[email protected] ☎ ৮৮ ০১৭ ১৪৩৪ ৯৩৯৩
৭/ডি-১ (৭ম তলা), ব্লু ওয়াটার শপিং সিটি,
জিন্দাবাজার, সিলেট - ৩১০০, বাংলাদেশ।
Developed By - IT Lab Solutions Ltd.