Sylhet Today 24 PRINT

‘প্রকৃতিকন্যা’ জাফলং এর কথা

সামিউল্লাহ সমরাট

পর্যটন শহর সিলেট। সিলেট শহর শুধু নয় পুরো বিভাগ জুড়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর ঘুর |  ০৮ জুলাই, ২০১৫

ছবি: মারূফ অমিত

সিলেট শহর থেকে প্রায় ৬০ কিলোমিটার দূরে জাফলং এর অবস্থান। জাফলং সিলেট জেলার গোয়াইনঘাট থানার একটি ইউনিয়ন। প্রকৃতি যেন ভিন্ন রূপে সাজিয়েছে এই জাফলংকে। 

অপরূপ সৌন্দর্যের জন্য প্রকৃতি কন্যা হিসেবে খ্যাত এই জায়গাটি দেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় পর্যটন স্থানগুলোর একটি। পর্যটন মৌসুম শীতকাল ছাড়াও সারাবছরই দেশের নানা প্রান্ত থেকে ভ্রমণ পিপাসুরা এখানে ছুটে আসেন। রূপ বৈচিত্র্যতার জন্যই এই সমাগম।

সৌন্দর্যের সবুজ আকর্ষণ শুরু জৈন্তাপুর উপজেলা থেকেই। জৈন্তিয়া রানীর স্মৃতি বিজড়িত এই উপজেলা শহরের বুক চিরেই জাফলং যেতে হয়। পথের ডান পাশে দাড়িয়ে থাকা ভারতের মেঘালয়ের মায়াবী পাহাড় হাতছানি দিয়ে ডাকে।

বর্ষায় এই পাহাড় থেকে বেশ কয়েকটি ঝর্ণা ধারা নেমে আসতে দেখা যায়। পাহাড়ের গাঁয়ে হেলান দিয়ে থাকে সাদা মেঘ, সে এক অভাবনীয় দৃশ্য। অবশ্য শীতকালে ঝর্ণাগুলো থাকে মৃত।

উঁচু-নিচু পাহাড়ি পথ বেয়ে যেতে যেতে পথে দেখা মিলবে তামাবিল স্থলবন্দর। সারি সারি ভারতীয় কয়লা বোঝাই ট্রাক দাঁড়িয়ে আছে। এখানে কয়লা আর পাথরের ব্যবসা জমজমাট। এখান থেকে ভারতের অন্যতম সুন্দর শহর শিলং যাওয়া যায়। দূরত্ব মাত্র ৮০ কিলোমিটার।

স্বাভাবিকভাবেই পাসপোর্ট, ভিসা লাগবে। তামাবিল চেকপোস্ট থেকে ৪ কিলোমিটার দূরেই মামার বাজার। পর্যটকরা জাফলং বলতে এই মামার বাজারকেই চিনেন। মূল জাফলং বাজারে অনেকেই যান না।

মামার বাজার থেকে একটু সামনে এগোলেই পিয়াইন নদীর ঘাট যা স্থানীয় ভাবে বল্লাঘাট নামে পরিচিত। মেঘালয় পাহাড় থেকে সৃষ্ট এই নদীর পানি কাঁচের মত স্বচ্ছ। একেবারে তলদেশ পর্যন্ত দৃষ্টি চলে যায়। ঘাট থেকে মূল আকর্ষণ জিরো পয়েন্ট যেতে হয় নৌকা নিয়ে। ১৫ মিনিটের এই নৌকা ভ্রমণ জীবনের অন্যরকম অভিজ্ঞতা হিসেবে স্মরণীয় থাকবে। স্বচ্ছ পানি ছুয়ে দেখতে ইচ্ছে করবে।

শীতল পানি, প্রাণ জুড়িয়ে যায়। এই নদীই এখানকার মানুষের জীবিকার প্রধান উৎস। বিভিন্ন বয়সের নারী-পুরুষ শিশু সবাই নদীর পেট থেকে তুলে আনছে নানা রঙের, নানা আকৃতির পাথর। এই পাথর বিভিন্ন হাত ঘুরে চলে যায় দেশের বিভিন্ন জায়গায়। বছরের পর বছর এই পাথরেই কর্মমুখর এই জনপদের মানুষ।

জিরো পয়েন্টে দাড়িয়ে চোখে পড়বে পাহাড়ের উপরে ভারতের ডাউকি উপজেলা শহর আর শহরের সাথে সংযোগ স্থাপনকারী ঝুলন্ত ব্রিজ। বেড়াতে আসা মানুষজন এই ব্রিজকে পেছনে রেখে ছবি তুলতে ব্যস্ত হয়ে পড়েন।

পাশাপাশি অবস্থানে নিজ নিজ দেশের দায়িত্ব পালন করছেন আমাদের বিজিবি আর ভারতের বিএসএফ। জিরো পয়েন্টের রূপের কথা লিখে বোঝানো সম্ভব নয়; স্বচক্ষেই দেখে নিতে হয়।

নদীর অন্য পাড়ে খাসিয়া পল্লী, সেখানে গেলে নিরিবিলি বনের মাঝে চোখে পড়বে খাসিয়াদের জীবনধারা, রাজবাড়ী আর পানের বরজ। অত্যন্ত পরিশ্রমী খাসিয়ারা পান চাষ করে জীবিকা নির্বাহ করে।

খাসিয়াপল্লীর একেবারে গা ঘেঁষে মেঘালয়ের সূউচ্চ সবুজ পাহাড়। তাকিয়ে থাকতে থাকতে মন উদাস হয়ে যায়, ফিরে আসতে ইচ্ছে করেনা। কিন্তু ফিরতে তো হবেই।

ফেরার জন্যে মামার বাজার থেকেই সরাসরি সিলেটের গাড়ি পাওয়া যায়।

যেভাবে যাবেন
* সিলেট শহরের সোবহানিঘাট থেকে সরাসরি বাস জাফলং পর্যন্ত চলাচল করে। এ ছাড়া সিএনজি চালিত অটোরিকশা বা মাইক্রোবাস ভাড়া করেও যাওয়া যায় ।
* থাকার জন্য অনেক আবাসিক হোটেল রয়েছে। ৩০০ টাকা থেকে শুরু করে ১০০০০ টাকায় হোটেলে রুম পাওয়া যায়।
* স্বল্পমুল্যে ভালো খাবার জন্য শহরে বেশ কয়েকটি রেস্টুরেন্ট আছে যেমন পানশি, জলসিড়ি, পাঁচভাই রেস্টুরেন্ট।
* হাতে তিন দিন সময় থাকলে মোটামুটিভাবে সিলেট বিভাগের উল্লেখযোগ্য স্থানগুলো ঘুরে দেখা সম্ভব।

টুডে মিডিয়া গ্রুপ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
[email protected] ☎ ৮৮ ০১৭ ১৪৩৪ ৯৩৯৩
৭/ডি-১ (৭ম তলা), ব্লু ওয়াটার শপিং সিটি,
জিন্দাবাজার, সিলেট - ৩১০০, বাংলাদেশ।
Developed By - IT Lab Solutions Ltd.