Sylhet Today 24 PRINT

শাহ আবদুল করিমের বাড়ির পথে

দেবাশীষ রনি |  ১১ সেপ্টেম্বর, ২০১৮

হাওর অধ্যুষিত সুনামগঞ্জের দিরাই উপজেলার বরাম হাওরের পাড়ে জন্ম বাউল সম্রাট শাহ আবদুল করিমের। বর্ষায় এই হাওর পাড়ি দিয়েই যেতে হয় বাউল সম্রাটের বাড়ি।

শুকনো মৌসুমে চলাচলের জন্য হাওরের মাঝখান দিয়ে একটি রাস্তা রয়েছে। দিরাই পৌরসভার দোওজ হতে ধল বাজারে গিয়েছে রাস্তাটি। হাওরে আঁকাবাঁকা রাস্তা, সেই রাস্তার দুইপাশে সবুজ আর সবুজ। আবার বর্ষায় রাস্তাটি পানির নিচে পুরোপুরি তলিয়ে যায়। তখন রাস্তা আর ব্যবহারের উপযোগী থাকে না৷ চলাচল করতে হয় নৌকায়। বিকেল বেলা সুন্দর সময় কাটাতে স্থানীয় অনেকেই এই ধল রাস্তার মুখে যান। স্থানীয়রা জায়গাটিকে ধল বাসস্ট্যান্ড নামেই চিনেন।

ঈদের ছুটিতে নাড়ির টানে বাড়িতে গিয়েছিলাম। সুনামগঞ্জের দিরাই উপজেলায়। ভাটি অঞ্চলে বাড়ি হওয়ায় ছোটবেলা থেকেই হাওরের প্রতি মায়া অনেক। সুযোগ পেলেই নৌকা নিয়ে হাওরে ঘুরতে বের হয়ে যাওয়ার অভ্যাস। ঈদের দিনেও নৌকা নিয়ে বাড়ির সামনের হাওরে যাই। সঙ্গী ছিল গ্রামের কয়েকজন বন্ধু। হাওরের নীল জলে ঘণ্টাদুয়েক হাওরামি করে ঘরে এসে মোবাইল হাতে নিয়ে দেখি বন্ধু তাপস অনেকক্ষণ ধরেই ফোন দিচ্ছে। ওর সাথে কথা বলতেই বললো দ্রুত বের হওয়ার জন্য। ধল রোডের এইদিকে ঘুরতে যাবে।

শাহ করিমের বাড়ির পথে

ঈদের দিনের বিকেল বেলা জায়গাটিতে গিয়ে দেখি সৌন্দর্য যেন মেলে ধরে আছে। ডুবো-রাস্তা ধরে যানবাহন সামনে এগিয়ে চলছে, লোকজনও হাঁটছেন। সন্ধ্যার আগে ঘাট থেকে নৌকা নিয়ে হাওরে ঘুরি অনেকটা সময়। আহ! কী শীতল হাওরের বাতাস! দেহ, প্রাণ দুটিই জুড়িয়ে যায়।

উল্লেখ্য, ধল রোড বছরের প্রায় অর্ধেকটা সময় থাকে পানির নিচে। বাকিটা সময় থাকে রাস্তার দুইপাশে ফসলের মাঠ। চারদিকে যেন সবুজের সমারোহ। অথচ বর্ষায় ধারণ করে এক অন্যরকম চিত্র। এই হাওর তখন অথৈ জলে টইটুম্বুর হয়ে উঠে৷ পানি যখন কিছুটা কম থাকে তখন পানির নিচে থাকা এই রাস্তা ধরে অনেকটা জায়গা সামনে হেঁটে যাওয়া যায়। কোথাও গোড়ালিসমান পানি, কোথাও বা হাঁটু পানি। আপনি হাঁটছেন পানিতে আর আপনার ঠিক পাশ দিয়েই নৌকা যাচ্ছে। এমনকি অনেকে এই রাস্তায় মোটরবাইক, গাড়ি নিয়ে যায়। দেখলে মনে হবে জলে ভাসছে এইগুলো।

বর্ষা পরবর্তী এই সময়টাতে পানির নিচে ডুবে থাকা ৮ কিলোমিটার রাস্তার প্রায় ১.৫ থেকে ২ কিলোমিটার হেঁটে সামনে এগিয়ে যাওয়া যায়। পাশেই রয়েছে নৌকাঘাট। সেখান থেকে নৌকা ভাড়া করে যেতে হয় বাউল শাহ আবদুল করিমের বাড়িতে। হাওরের সৌন্দর্য উপভোগ করতে করতে আধঘণ্টার মধ্যেই পৌঁছে যাবেন। উনার বাড়িতে প্রায় সময়ই গানের আসর বসে। ভাগ্য সুপ্রসন্ন হলে শুনতে পারবেন মনোমুগ্ধকর বাউল গান। শেষে ধল বাজারে গিয়ে খেয়ে আসতে পারেন সুনাম ছড়ানো ধলের মিষ্টি। এই মিষ্টি খাওয়ার জন্য অনেকেই ধল বাজারে যান দূরদূরান্ত থেকে। বর্ষা পরবর্তী এই সময়ে মনোরম ও দৃষ্টিনন্দন লাগে হাওর এবং হাওরের মাঝখান দিয়ে যাওয়া রাস্তাটির শুরুর দিকটিকে। অন্য সময়েও অবশ্য সৌন্দর্য কমে না।

যেভাবে যাবেন
ঢাকা অথবা যেকোনো জেলা শহর থেকে সুনামগঞ্জের বাস ধরতে হবে। সুনামগঞ্জ পৌঁছানোর ১০ কিলোমিটার আগেই মদনপুর (দিরাই রাস্তার মুখ) নামক জায়গায় নেমে পড়বেন। সেখান থেকে সিএনজিচালিত অটোরিকশায় করে দিরাই। ভাড়া পড়বে ৫০ টাকা। আবার চাইলে ঢাকা থেকে বাসে সরাসরি দিরাই আসতে পারবেন। বাস (নন এসি) ভাড়া পড়বে ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা।

দিরাই নেমে রিকশায় অথবা অটোরিকশায় করে পৌঁছে যাবেন মূল গন্তব্য ধল রোড। সিলেট থেকে আসার জন্য সিলেটের কুমারগাঁও বাসস্ট্যান্ড থেকে বাস আসে আধঘণ্টা পরপর। বিরতিহীন বাসের ভাড়া ১২০ টাকা। হাওরে ঘুরতে এবং ধল যেতে ৩ থেকে ৪ ঘণ্টার জন্য নৌকা ভাড়া ৪০০ থেকে ৬০০ টাকা।

শাহ আবদুল করিমের বাড়ির পথে

সচেতনতা
একটা বিষয় খেয়াল রাখতে হবে যে, পরিবেশ হুমকিতে পড়ে এমন কিছু অবশ্যই করা চলবে না। পলিথিন বা প্লাস্টিকের বোতলসহ পরিবেশ বিপন্ন হয় তেমন কিছু মনের অজান্তেও ফেলে আসবেন না। প্রকৃতিকে বেঁচে থাকতে দিন তার নিজের মতো করে।

টুডে মিডিয়া গ্রুপ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
[email protected] ☎ ৮৮ ০১৭ ১৪৩৪ ৯৩৯৩
৭/ডি-১ (৭ম তলা), ব্লু ওয়াটার শপিং সিটি,
জিন্দাবাজার, সিলেট - ৩১০০, বাংলাদেশ।
Developed By - IT Lab Solutions Ltd.