রিপন দে | ১১ মে, ২০১৯
ছবি: খোকন থৌনাউজম
মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জের সীমান্ত এলাকার গহীন বনে হামহামের পর সন্ধান পাওয়া গেছে নতুন এক দৃষ্টিনন্দন জলপ্রপাতের। সংরক্ষিত বনের ভেতরে বড় ফিকল নামক এলাকায় দেখা মিলেছে প্রকৃতির অপরূপ এ ঝর্ণার। ঝর্ণাটির নাম 'ফিকল ঝর্ণা'।
সমতল থেকে প্রায় ১০০ ফুট উপরে পাহাড়ের চূড়ায় বিশাল এলাকাজুড়ে অবস্থিত এ জলাশয়।
এতদিন লোকচক্ষুর আড়ালে ছিল এই ঝর্ণাটি। কেবলমাত্র দৃষ্টিনন্দন ঝর্না নয়, পথের দুপাশের বুনো গাছের সজ্জা দৃষ্টি কেড়ে নেবে অনায়াসে। গহীন বনের উঁচু উঁচু পাহাড় আর সবুজ অরণ্যের মনোরম দৃশ্য দেখে প্রাণ জুড়িয়ে যায়।
ফিকল জলধারায় যাবার ঝিরি পথে দেখতে পাবেন বিশাল আকৃতির অসংখ্য পাথর। প্রতিটি পাথরের আকৃতি রহস্যময়। পাথর মূলত গোলাকার কিংবা ডিম্বাকার হলেও এ জলধারার পাথরে ভিন্নতার ছাপ রয়েছে। পাথরের দিকে চোখ রাখলে ভিন্ন এক দৃশ্য ভেসে উঠবে আপনার চোখের সামনে। মনে হবে বন্য কোন প্রাণি পাহাড়ি ছড়ার বুকে ঘুমিয়ে রয়েছে।
আঁকাবাঁকা পাহাড়ি ছড়া দিয়ে হেটে চলার পথে সামনে যত দূরে চোখ যাবে শুধুই প্রত্যক্ষ করবেন দুর্ভেদ্য সবুজ জঙ্গল আর রহস্যাবৃত অসখ্য পাথর। পাহাড়ের চূড়া থেকে পথে পথে পাহাড় চুইয়ে নামা পানি গড়িয়ে নামতে নামতে পুরো পথের অনেক অংশকেই পিচ্ছিল করে রেখেছে। দুর্গম আর চরম ঝুঁকির পথ শেষে এ যেন অন্য এক রোমাঞ্চকর পৃথিবী। যারা ট্র্যাকিং এবং রোমাঞ্চ ভালবাসেন তাদেরকে দুহাত দিয়ে স্বাগত জানাবে নতুন এই ঝর্ণা।
পর্যটন জেলা মৌলভীবাজারের সব চেয়ে পর্যটনসমৃদ্ধ উপজেলা কমলগঞ্জ। কমলগঞ্জ উপজেলায় রয়েছে লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান, রাজান্দি রিজার্ভ ফরেস্ট, হামহাম জলপ্রপাত, মাধবপুর লেক, ধলাই সীমান্তে বীরশ্রেষ্ঠ সিপাহী হামিদুর রহমানের স্মৃতিস্তম্ভ। নতুন করে পাওয়া 'ফিকল ঝর্না' যুক্ত হয়ে আরো সমৃদ্ধ করেছে এই এলাকার পর্যটনকে।
কমলগঞ্জের সীমান্ত এলাকায় পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে এই ঝর্ণাটি আবিষ্কার করেন সাংবাদিক সাজিদুর রহমান সাজু।
তিনি বলেন, জলধারাটি যতটা না অবিশ্বাস্য। যতটা না অলৌকিক তার চাইতেও বেশি এর সৌন্দর্য। আপন খেয়ালে এখানে পাহাড়ের উপর জলরাশি সঞ্চার করে তৈরি করেছে হ্রদ। সমতল থেকে প্রায় ১০০ ফুট উপরে পাহাড়ের চূড়ায় বিশাল এলাকাজুড়ে অবস্থিত এ জলাশয়।
তিনি আরও জানান, মৌলভীবাজারের পর্যটনে এই ঝর্ণাটি নতুন মাত্রা দেবে এবং এই ঝর্ণার আসা-যাওয়ার পথে যে সৌন্দর্য তা ভ্রমণ পিপাসুদের মন কেড়ে নেবে।
যেভাবে যাবেন: দেশের যেকোনো প্রান্ত থেকে প্রথমে চলে আসুন কমলগঞ্জ উপজেলা সদরে। সেখান থেকে থেকে বাস অথবা সিএনজিযোগে কুরমা চা বাগান এলাকায় যাবেন। সেখান থেকে ভাড়ায় চালিত সিএনজি যোগে আঁকাবাঁকা কাঁদা মাটির উঁচুনিচু পাহাড়ি এলাকার মেঠো পথে কুরমা চা বাগানের ভেতর দিয়ে যেতে হবে কুরমা খাসিয়া পল্লী। খাসিয়া পল্লীর পাশেই ঝিরি পথের শুরু। সেখান থেকে পাহাড়ি ঝিরির পাশ দিয়ে বনের সরু পথে উঁচুনিচু পাহাড়ি টিলা অতিক্রম করে, কখনো পাহাড়ি ঝিরি পথ দিয়ে এক ঘণ্টায় পৌঁছা সম্ভব দৃষ্টিনন্দন এ জলধারায়।